ক্রেতা সেজে অপহরণের পর অশালীন ভিডিও করে শাসানি

প্রকাশ | ১৯ জানুয়ারি ২০২১, ২১:০৯ | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২১, ২১:১২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢকাটাইমস

রাজধানীর উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরের একটি রেস্টুরেন্টের মালিক মিহির রায়। পার্টি আয়োজনে তার দোকানের খাবার লাগবে। তবে সেই অর্ডার নিতে হলে কথিত ক্রেতার সঙ্গে যেতে হবে তার বাসায়। সরলমনে ক্রেতার কথা অনুযায়ী সেই বাসায় গিয়েই আর খোঁজ মিলছিল না মিহিরের।

অভিযোগ পেয়ে তার সন্ধানে নামে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। নিখোঁজ ব্যবসায়ী মিহিরকে উদ্ধারের পাশাপাশি তারা প্রতারক চক্রের এক নারীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছেন।

পুলিশের ভাষ্য, এই চক্রটি অভিনব কায়দায় অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করত। এতেই ক্ষান্ত দিত না তারা। মুক্তি পেয়ে যেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ না করা হয় সেজন্য অপহৃত ব্যক্তির সঙ্গে জোরপূর্বক ‘নারীর সঙ্গে অশালীন ভিডিও’ করত।

রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে মঙ্গলবার বিকালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপি গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, ‘ক্রেতা সেজে অভিনব কায়দায় রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীকে অপহরণের অভিযোগে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় অভিযান চালিয়ে দু জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মিরাজ ও বৃষ্টি। এসময় চক্রের আরও কয়েকজন সদস্য পালিয়ে গেছেন।’

এই চক্রটি বেশ কিছুদিন ধরে অভিনব কায়দায় অপহরণ করতো। অপহরণের পর তারা হাত, পা, মুখ ও কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে গোপন আস্তানায় নিয়ে যেতো। এরপর নানাভাবে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন চালানো হতো অপহৃত ব্যক্তির উপর। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আদায় করা হতো বিপুল পরিমাণ টাকা। 

গোয়েন্দা পুলিশের এই অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এই চক্রের বেশ কিছু সদস্যর নাম পাওয়া গেছে। চক্রের সদস্যদের আলাদা আলাদা কাজ ভাগ করে দেয়া হয়। এই চক্রের কোনো সদস্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না। তারা অভিনব কায়দায় ভিপিএন ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করত এবং নিজেদের আড়ালে রাখত। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার চক্রের সদস্যরা এক মাসে ৩ থেকে ৪ টি অপহরণের কথা স্বীকার করেছে।

তিনি আরও বলেন, এই চক্রটি অপহরণ করার পর মুক্তিপণ আদায় করতো। এরপর তারা অপহৃত ব্যক্তিকে মুক্তি দেয়ার আগে আরও একটি ভয়ংকর কাজ করতো। তারা মুক্তি দেওয়ার আগে অপহৃত ব্যক্তির সঙ্গে একজন নারীকে দিয়ে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও তুলে রাখতো। এছাড়া সাদা কাগজ বা একাধিক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে রাখতো। তারা এগুলো করতো নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে। যাতে মুক্তিপণ আদায় করার পর অপহরণের শিকার ব্যক্তি ও তার পরিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ দিতে না পারে।

ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এই চক্রের হাতে অপহরণের পর মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পাওয়া দুজন ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাদের সঙ্গে একই ঘটনা ঘটেছে।

তিনি জানান, অপহরণের পর মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- খিলগাঁও গোড়ান এলাকার বাসিন্দা নেয়ামত উল্লাহ ও বরিশাল বাকেরগঞ্জ এর বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম। 

গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে দক্ষিণখাঁন থানায় অপহরণ মামলা করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে এনে চক্রের অন্য সদস্যদের বিষয়ে তথ্য বের করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।   

ঢাকাটাইমস/১৮ জানুয়ারি/এআর/ইএস/ডিএম