ঢাকা রেঞ্জের ৯৬ থানায় কী হচ্ছে দেখা যাচ্ছে সেগুনবাগিচায়

মাদারীপুরের ডাসার থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষ। চল্লিশোর্ধ এক নারী এসেছেন মোবাইল চুরির অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে। ডাসার থানার এ দৃশ্য সিসিটিভিতে প্রত্যক্ষ করা হচ্ছিল ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয় হতে। এখানে দায়িত্বরত উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মনির হোসেন সিসিটিভি মনিটরে থানার ডিউটি অফিসার ও ওই নারীর কথোপকথন শোনেন। প্রয়োজনে দরকারি নির্দেশনা দেন ডাসার থানার দায়িত্বরত ওই এসআইকে। ওই নারীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেন দায়িত্বরত কর্মকর্তা।
আরেকটি সিসিটিভি পর্দায় দেখা যায়, ঢাকার দোহার থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তার টেবিল। ষাটোর্ধ এক ব্যক্তি এসেছেন তাকে ও তার ছেলেকে জনৈক ব্যক্তির মারধরের অভিযোগ নিয়ে। এ বিষয়ে তিনি সাধারণ ডায়েরি করবেন। ডিউটি অফিসার তার পুরো অভিযোগ শুনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেন। ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে দোহার থানার এ দৃশ্যও মনিটরে প্রত্যক্ষ করছিলেন এসআই মো. মনির হোসেন।
গত সোমবার দুপুর একটার দিকে ঢাকার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সরেজমিন এ প্রতিবেদক এ রেঞ্জের আওতাভূক্ত ৯৬টি থানার কার্যক্রম সিসিটিভিতে মনিটরিং করা দেখেন। এখানে পরিদর্শক, উপপরিদর্শক পর্যায়ের ১৪ কর্মকর্তা ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছেন। আবার এসব কর্মকর্তা সিসিটিভি ঠিক মতো মনিটরিং করছেন কি-না তা তদারকির দায়িত্বে আছেন একজন পরিদর্শক।
এখানকার সিসিটিভিতে দেখা যায়, ঢাকা রেঞ্জের থানাগুলোতে কেউ প্রতিকারের আশায় এলে পুলিশের পক্ষ থেকে চকোলেট দেয়া হয়। গেল বছরের ২ ডিসেম্বর থানার কার্যক্রম সিসিটিভিতে মনিটরিং করার এ কার্যক্রম শুরু করে ঢাকা রেঞ্জ পুলিশ। এদিন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ এই কার্যক্রমের উদ্ভোধন করেন।
ঢাকা রেঞ্জের ১৩টি জেলায় ৪৩টি সার্কেলে ৯৬টি থানা আছে। ঢাকার সেগুনবাগিচা ঢাকা রেঞ্জ পুলিশের কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে মনিটরিং করার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। থানা-পুলিশের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে বসানো হয়েছে এসব সিসিটিভি। ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে। ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে থানাগুলোর ডিউটি অফিসার, হাজতখানা ও নিরাপত্তারক্ষীর অবস্থান।
ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে, থানা হাজতে কতজন আসামি তাদের কি জন্য কি ব্যবস্থা করা হয়েছে মনিটরিং করা হচ্ছে। অকারণে কোনো আসামিকে ধরে আনা হলে তার জন্য জবাবদিহিতা করতে হয় থানার সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের। সিসিটিভিতে থানার কার্যক্রম মনিটরিং করার কারণে এখন আর হয়রানি করতে কাউকে ধরে আনার সুযোগ নেই বললেই চলে।
সিসিটিভি বসানোর পর থানায় কোনো লোক ১০ মিনিটের বেশি সময় বসে থাকলে ডিউটি অফিসারকে জিজ্ঞাসা করা হয় তিনি কি জন্য এসেছেন এবং কেন বসে রয়েছেন। তার কোনো উত্তর দিতে না পারলে আগত ব্যক্তির কাছে জানতে চাওয়া হয় তিনি কেন এসেছেন, এবং তাকে আইনি সহায়তা দেয়া হয়েছে কি- না। থানায় এসে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন এমন অভিযোগে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে।
ঢাকা রেঞ্জ পুলিশ সূত্র মতে, পুলিশি সেবার মূল কেন্দ্র হলো থানা। কিন্তু থানা নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগের শেষ নেই। সে কারণে থানার কার্যক্রম মনিটরিং করতে ঢাকা রেঞ্জের সব থানায় তিনটি করে ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এখন ঢাকার নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে। চাইলে নিয়ন্ত্রণক্ষ থেকে ক্যামেরাগুলো ৩৬০ ডিগ্রি কোণে ঘুরিয়েও আশপাশের দৃশ্য দেখা যায়।
কর্মকর্তারা জানান, থানার গেটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলা, দুর্ব্যবহার করাসহ ক্ষেত্রবিশেষে আসামি বা তার স্বজনদের বিশেষ সুবিধা দেয়ার অভিযোগ আসে। এছাড়া নারী ও শিশুদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে কি-না, ডিউটি অফিসারের কক্ষে একই লোক বারবার আসছে কি-না, সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে সেন্ট্রি কেমন আচরণ করছেন, সেন্ট্রি রাতে কলাপসিবল গেটে তালা দিয়ে ভেতরে বসে আছেন কি-না ইত্যাদি বিষয় মনিটরিং করা হচ্ছে।
নিয়ম অনুসারে প্রতি থানায় প্রতিদিন ভোরে এবং রাত ১০টার পর হাজতিদের বিষয়ে তথ্য নেয়া, হাজতখানায় কোনো অস্বাভাবিক বিষয় দেখা যায় কি-না, নারী হাজতি থাকলে নারী সেন্ট্রি আছে কি-না, হাজতখানা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সেখানে শীতকালীন কম্বল আছে কি-না, হাজতখানায় আসামিদের আত্মীয়স্বজন খাবার দিচ্ছে কি-না, হাজতির সঙ্গে অস্বাভাবিক উপকরণ আছে কি-না ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করা হয় মনিটরিং সেন্টার থেকে।
ঢাকার নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্মকর্তারা জানান, তারা শুধু এসব দৃশ্য চোখেই দেখছেন না, দর্শনার্থীর সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করা হচ্ছে তা-ও মনিটর করছেন। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তারা নিয়মিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠাচ্ছেন।
ক্যামেরায় যা দেখা যাচ্ছে, তা ৩০ দিনের ভিডিও রেকর্ড থাকবে। এতে করে কেউ কোনো কিছু করে আর অস্বীকার করতে পারবে না। ক্যামেরাগুলোতে জুম ক্যাপাসিটিও আছে। এর মাধ্যমে ছবি বা ভিডিওকে কাছে এনে প্রয়োজনে বড় করে দেখা যায়।
এ ব্যাপারে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা ঢাকা রেঞ্জের সকল থানায় তিনটি করে সিসিটিভি স্থাপন করেছি। একজন মানুষ থানায় ঢুকে প্রথমে সেন্টির মুখোমুখি হয়। সেখান থেকেই আমাদের পর্যবেক্ষন শুরু হয়।’
তিনি বলেন, ‘ডিউটি অফিসারের কক্ষ এবং হাজতখানাতেও সিসিটিভি মনিটরিং করা হয়। হয়রানিমুক্ত পরিবেশে জনগণ যাতে থানায় কাক্সিক্ষত সেবা পেতে পারে আমরা তার জন্য কাজ করছি। এর সুফল পুলিশও পাচ্ছে, সেবাপ্রার্থীরাও পাচ্ছে। আমরা দেখেছি সংশ্লিষ্ট থানা এলাকার লোকজন এ কার্যক্রমে খুব খুশি।’
(ঢাকাটাইমস/২০জানুয়ারি/ডিএম)
সংবাদটি শেয়ার করুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
জাতীয় এর সর্বশেষ

খালের পাশের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হবে: এলজিআরডি

‘ঘটনা ঘটার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পাই না’

দেশে করোনা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে: প্রধানমন্ত্রী

৩৬ দিন পর শনাক্ত ৬০০ ছাড়াল

দুদকের নতুন চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ

জনসনের টিকা পেতে আলোচনা চলছে: স্বাস্থ্য সচিব

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন বৃহস্পতিবার

গরম দুধে ঝলসে শিশুর মৃত্যু

এইচটি ইমামের শারীরিক অবস্থার অবনতি
