কবিতা
বিশ্বাস অন্ধ: অবিশ্বাস চক্ষুষ্মান
প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২১, ১১:৫১
কপালের ভাঁজগুলোকে ইদানিং আর বয়সের ছাপ,
অভিজ্ঞতার সাইনবোর্ড কিংবা
চিন্তার চেলা-চামুন্ডা বলে মনে হয় না।
কপালের বলি রেখার কুচিতে পড়ে
বলি হয়েছে কতো গোবেচারা সোনার হরিণ!
ভাগ্যের লাঙ্গলের হলরেখায় বুনেছি ঘামের বীজ,
হিসেব নেই কত্তো বীজের প্রাণ অঙ্কুরেই দেখেছে
বিনাশের বিকৃত মুখ।
তবু এরা দিনরাত এক করে, জান হাতের মুঠোয় ভরে
খুঁজে মরে সব-সম্ভবের গণকের অঙ্গুরি-তাবিজ।
জানিনা কপালের ঊষর জমিন থেকে
জনক রাজার লাঙ্গলের ফলার বোধনে
উঠে আসা জানকী ক্যামন ভাগ্যবতী?
বনবাস, অপহরণ, বিচ্ছেদ, অপবাদ, অবিশ্বাস আর অগ্নিপরীক্ষার আগুনের কুণ্ডলিই কেবল দেখেছে সীতার দগ্ধহৃদয়ের রক্তস্রাব।
আর আমার কপালের গণগনে হাপরে নিত্য জ্বলে
আমার লাঙ্গলের জংধরা ফলা,অকম্মার ঢেঁকি।
আমার হাতের রেখায় রেখায় আঁকা পৃথিবীর মানচিত্র,
কর্কট-মকরক্রান্তি, অক্ষ, দ্রাঘিমা, বিষুব রেখা।
বিন্দু থেকে মহাকাশ, গ্রহ-গ্রহান্তর পরিভ্রমণে এরা পাকা খেলুড়ে।
কল্পরেখার পাখায় ভর করে যেমন সময়-সাগর পাড়ি দেয়
দৈত্যাকার হাওয়াই জাহাজ।
বিন্দুর চলার পথের নাম যদি রেখা হয়,
সে পথ তো হতেই পারে সরল বা বক্র;
এঁকেবেঁকে চলাপথ চলতে চলতে বাঁক তো নিতেই
পারে চলমান রেখা
পথের ঘোরে হয়ে উঠতে পারে ধাঁধার চক্র।
আবেগের বেগই যদি হয় প্রেম পরিমাপের মাপকাঠি,
তবে এর চলা হোক অরোধ্য সরল রেখায়,
দৃষ্টিরেখায় পড়ে যদি প্রেম হয়ে যায় প্রথম দেখায়;
তবে এমন কায়াই থাকুন প্রতিটা পলকের
দৃষ্টির গতায়ত রেখায়।
কোকিলের কুহূতে জানান দিয়ে ফুরফুরে বসন্ত আসে,
আর হিমেল হাওয়ার শীত আসে সিঁদ কেটে
যেমন করে নিতান্ত অগোচরে;
আমিও তেমন করে অজানিতেই বাঁধা পড়ে আছি
নানান রেখার ঘোরে।
কপালের ভাঁজ কিংবা হাতের রেখার খপ্পরে পড়ে
কতো ঝিলিমিলি ডানার রাঙা প্রজাপতিরা খুইয়েছে
তাদের রঙ-বেরঙের চঞ্চল পাখা।
মনে হয়, আমার বলিরেখা, দৃষ্টিরেখা, হস্তরেখা;
অন্ধবিশ্বাসবৃক্ষের শেকড়, বাকল, শাখা ও প্রশাখা।
আসলে কি ‘অন্ধবিশ্বাস’ বলে কিছু হয়?
আশা আর বিশ্বাসের বসবাস নিশ্বাসে।
অথচ নিশ্বাসের স্থায়িত্বের ফুঁটোকড়িও বিশ্বাস নেই।
তাহলে কি সকল বিশ্বাসই অন্ধ?
বিশ্বাসের আরেক নামই কি অন্ধত্ব?
বিশ্বাস মানেই কি অন্ধবিশ্বাস?
বিশ্বাস নিজে কিছু দেখে না; অন্যকে দেখায়।
নিজে কিছু শিখে না,অপরকে শেখায়
নিজে কিছু ভাবে না, আরেকজনকে ভাবায়।
যখনি বিশ্বাসকে পেতে চাই দৃষ্টিরেখায়
তখনি সে ঘাপটি মেরে বসে থাকে আড়ালে,
ছায়া লুকায় আবছায়ায়, রশ্মিরেখা লুকায় অদেখায়।
আর তখনি দেখতে পাই বিশ্বাসের অকাল প্রয়াণ;
তা হলে কি সকল বিশ্বাসই অন্ধ;
অবিশ্বাসই কি দিব্য চক্ষুষ্মান?