চসিকে মেয়রপ্রার্থীর পক্ষে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন সাবেক মেয়র

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:০২

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকাটাইমস

একজন নেতা মানেই— দক্ষ সংগঠক, তৃণমূলে শক্ত অবস্থান এবং জনগণের আস্থাভাজন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন তেমনই একজন। গেল বছরের এমন দিনেও ছিলেন চট্টগ্রাম সিটির অভিভাবক। এবারের নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন দৌড়ে ছিলেন প্রথম সারিতে। তবে ১৩ জনের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত সবাইকে পেছনে ফেলে নৌকার টিকিট পান নাছিরেরই রাজনৈতিক সহযোদ্ধা নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী।

মনোনয়নবঞ্চিত হলেও নাছির ব্যথিত হননি বিন্দুমাত্র। নৌকাকে জয়ী করতে শুরু থেকেই মাঠে নেমেছেন চ্যালেঞ্জ নিয়ে। তার এই লড়াই শুধু প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই নয়, নিজের শুরু করা অসমাপ্ত কাজকে এগিয়ে নেওয়ারও। বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা রেজাউলের জন্য তাই চষে বেড়াচ্ছেন পুরো নগর। নেতাকর্মীদের যুগিয়ে যাচ্ছেন সাহস, দিচ্ছেন ভরসা। রেজাউল নাছিরকে সাথে নিয়ে জুটিবদ্ধ হয়ে প্রতিদিনই চষে বেড়াচ্ছেন পুরো নগর।

কেননা তৃণমূলে গ্রহণযোগ্যতা ও নিবিড় যোগাযোগের কারণে ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে রয়েছে নাছিরের শক্তিশালী নিজস্ব ভক্ত ও অনুসারী। গতবারের নির্বাচনে জেতার কৌশলও জানা তার। আর নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও প্রতিটি ইউনিট থেকে শুরু করে ওয়ার্ড-থানায় আ জ ম নাছিরের রয়েছে প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতা। সেই প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনি বৈতরনী পার হতে সাবেক মেয়র নাছিরই হয়ে উঠতে পারেন মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর ‘ট্রাম্পকার্ড’।

প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে জেতাতে বিরোধী দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা পর্যন্ত মাঠ নেমেছেন। লড়াইটাকে তাই সহজ ভাবার সুযোগ নেই। এবারের ভোট মেরুকরণের, অস্তিত্ব রক্ষার। এমন পরিস্থিতিতে রেজাউলের ‘ট্রাম্পকার্ড’ টানা পাঁচ বছর নগর সামলানো আ জ ম নাছির। একুশের লড়াইয়ে জয়ের পথ তৈরি করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ‘কৌশলী’এ নেতাকেই।

সরল-গরল—ভোটের সব অংক কষেই পা ফেলছেন নাছির। দলের শূন্যস্থান পূরণে টার্গেট করছেন স্থানীয় জনপ্রিয় নেতাদের। ভোটারের দ্বারে দ্বারে তাদের মাধ্যমে উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে পরিকল্পনা করছেন দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ভোটের দিন কেন্দ্রে আনতে।  

সিটি করপোরেশন নির্বাচন গেল বছর হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে স্থগিত হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় পর ফের ভোটের তারিখ ঘোষণায় শুরু হয় ‘ক্ষণগণনা’। দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনি প্রচারণার কার্যক্রম শুরু হয় গত ৮ জানুয়ারি। সেদিন থেকেই নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মাইক হাতে দলের মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর জন্য বিরামহীন প্রচারণা চালাচ্ছেন নাছির উদ্দিন।

সহযোদ্ধার জন্য ভোট চেয়ে নগরের কালুরঘাট থেকে পতেঙ্গা, বাকলিয়া থেকে কাট্টলী— নাছির ফেরি করছেন শেখ হাসিনার উন্নয়নের গল্প। দুয়ারে দুয়ারে গিয়েও চাইছেন নৌকায় ভোট। নগরজুড়ে নাছির-রেজাউল জুটি ভোটারদের দিচ্ছে নানা প্রতিশ্রুতি। 

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, নির্বাচনি মাঠে বিক্ষিপ্ত কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু নাছির-রেজাউল জুটি যেখানে গেছে সেখানেই নেমেছে নেতাকর্মীদের ঢল। ‘জয় বাংলার’পাশাপাশি স্লোগান উঠেছে রেজাউল-নাছিরের নামেও।

এর আগে করোনার সংক্রমণের মধ্যেও রেজাউলের জন্য দল গোছানোর কাজে মাঠে নেমেছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির। দিনে কমপক্ষে তিনটি ইউনিটে কর্মী সভা করে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করেছেন নৌকার প্রার্থীকে জেতাতে। নির্বাচনি কার্যক্রমকে গতিশীল করতে প্রতিটি সাংগঠনিক ওয়ার্ড-ইউনিটে করেছেন বিশেষ সমন্বয় সভা।

সাংগঠনিক কাজ করতে গিয়ে করোনায়ও আক্রান্ত হন সাবেক এই মেয়র। গেল ৩ নভেম্বর তার দেহে ভাইরাসটির অস্তিত্ব মিলে। চিকিৎসা নিতে ভর্তি হন হাসপাতালে। তাতেও দমে যাননি, ভার্চুয়ালি যোগাযোগ রাখেন নেতাকর্মীদের সঙ্গে। নিয়মিত দিয়ে যান দিক-নির্দেশনা। অবশ্য দ্বিতীয় দফার প্রচারণার আগেই সুস্থ হয়ে উঠেন নাছির। 

এদিকে প্রচারণা শুরুর দিন (৮ জানুয়ারি) মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম বলেন, ‘আমার ডানপাশে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী এবং বামপাশে আ জ ম নাছির উদ্দিন।’

নিজের মনোনয়ন না পাওয়া প্রসঙ্গে আ জ ম নাছির বলেন, ‘দল থেকে আবারও আমি নির্বাচন করতে চাইলেও আমাদের অভিভাবক বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নৌকার টিকিট দিয়েছেন আমাদেরই আরেক প্রবীণ নেতা মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরীকে। আমি যেহেতু নেত্রীর কর্মী তাই আমার দায়িত্ব থেকে দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে যা যা করার সবই করছি এবং করব।’

(ঢাকাটাইমস/২৩জানুয়ারি/এলএ)