বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে শিক্ষার বিকল্প থাকতে পারে কি?

প্রকাশ | ২৪ জানুয়ারি ২০২১, ১৭:৩৫

অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমেদ

বাংলাদেশের শিক্ষা প্ৰতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে।  আর সেই দাবি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের সাংসদরাও সংসদে বক্তব্য রাখছেন। সেই দাবিকে সন্মান করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা প্ৰতিষ্ঠান খোলার জন্য একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই দাবির পক্ষে কিছু যুক্তি আছে।  যেমন শিক্ষা প্ৰতিষ্ঠান বন্ধ থাকাতে কিছু মানুষ ভাবছেন সবাই কাজ করছে, শিক্ষকরা কেন বসে বসে বেতন নেবেন? তখন একটি গল্প মনে হলো: একবার হাত, পা, চোখ, মুখ, সবাই সিদ্ধান্ত নিল তারা কাজ করবে না।  তারা ধর্মঘট করবে। কারণ পেট শুধু খায় কিন্তু কোনো কাজ করে না।  এটি অন্যায়। সুতরাং, আন্দোলকারীরা খাওয়া বন্ধ করে দিল। সকাল-দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যা হতেই সবাই দুর্বল হয়ে পড়ল। তখন তারা বুঝল তাদের ধর্মঘট তাদেরই জন্য অমঙ্গল। তারা আবার খেতে শুরু করল। ফিরে পেল শক্তি। আমাদের শিক্ষা প্ৰতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি সেই রকম। 

আমরা জানি করোনাভাইরাস কত ভয়ানক। এই সত্য ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য মানতে চায়নি। সুতরাং, এক ভয়ংকর পরিস্থিতির শিকার হয়েছে তারা। ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনাভাইরাসের খবরে নাকি খুশি হয়েছিলেন।  তার জামাতা নাকি ভারত থেকে রেমিসিড ঔষধ কিনে স্টক করেছিলেন।  কিন্তু পোড়া কপাল ডোনাল্ড ট্রাম্পের। বাণিজ্য করা হয়নি তার। বরং  চরম পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পরাজয়ের গ্লানিকে ভুলতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।

যখন শিক্ষা প্ৰতিষ্ঠান বন্ধ করবার ধোঁয়া তোলা হয়েছিল তখন আমি বিরোধিতা করেছিলাম। কারণ তখন তেমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি বাংলাদেশে। তখন একদল বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনকে সহ্য করতে পারছিল না। তাই এখনই সব বন্ধ করতে হবে বলে চিৎকার করছিল।  বন্ধ করে আবার গ্রামে ফিরে যাওয়া, সেখান থেকে পায়ে হেঁটে ফিরে আসা, আবার পথ থেকে ফিরিয়ে দেয়া-এসবই আমরা ভুলে গেছি।

আমরা এতটাই অস্থির যে বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে বারবার ভুল পথে পা বাড়াই। এবার আমরা ভুল করতে যাচ্ছি কি?

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিলেও স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন ২৬ মার্চ। তিনি জানতেন উত্তাল জনতাকে স্বাধীনতা কথা বললেও তারা অনেক হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বাধীনতার সংগ্রামকে ভণ্ডুল করে দেবে।  তাই তিনি অপেক্ষা করেছেন। আমার মতে- শিক্ষা প্ৰতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আগে আরেকটু অপেক্ষা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। 

সময় হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আমাদেরকে বলে দেবে কখন কী করতে হবে।  তাদের মতামত নেয়া ভালো হবে। প্রতিটি গ্রামে চাইলে সরকার/ তথ্য  মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করতে পারে। সেখান থেকে কী তথ্য আসে সেটা বিবেচনা করা যেতে পারে। 

কেবল টিকা আসতে শুরু করেছে। সেটা কী রকম কাজ করে সেটা দেখা প্রয়োজন। সকল স্বাস্থ্য কর্মী যাতে টিকা পান সেটা নিশ্চিত করে তবেই আমাদের অন্য ভাবনা করা যেতে পারে। 

চারিদিকে চোরা বালির ফাঁদ পেতে বসে আছে অনেক পক্ষ। তারা উসকানি দিয়ে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলবার পাঁয়তারা সারাক্ষণ করছে। একবার যখন থামতে হয়েছে তবে ভালো করে গুছিয়ে যাত্রা করতে হবে-যাতে মাঝপথে থামতে না হয়। 

বাঁচার জন্য শিক্ষা। এখন শিক্ষার মাধ্যম অনেক বিস্তৃত। যা মানুষ পরিবার থেকে শিখে তার এককানাও বিদ্যালয় থেকে শেখে না। 

শিক্ষকরা বসে বসে বেতন নিচ্ছে যদি মনোপীড়ার কারণ হয়ে থাকে তবে বলবার কিছু নেই। তবে সিদ্ধান্ত হোক তথনির্ভর। আমরা কঠোর হলে রোহিঙ্গা সমস্যায় পড়তে হতো না। আমরা ভেবেছি রাস্তা ঘাট হলে, শিল্প কারখানা হলে উন্নয়ন হবে। কিন্তু এখন দেখছি সেটা প্রকৃত উন্নয়ন দিতে পারছে না। 

শিক্ষা প্ৰতিষ্ঠান যাতে সঠিকভাবে চলতে পারে সেজন্য পরিবেশ উন্নয়ন খুবই জরুরি। আর এখন আমাদের উন্নয়ন সেটাকে কেন্দ্র করে হওয়া দরকার। আশা করি হটকারী সিদ্ধান্ত নেবেন না।

আমরা একটি পলিসির কথা জেনেছিলাম। সেটা হলো- সকল উচ্চ বিদ্যালয়ে একাদশ দ্বাদশ শ্রেণি খোলা হবে। কিন্তু সেটা মনে হচ্ছে থেমে আছে। আমরা জানি বিদ্যালয়গুলোতে বসবার জায়গা নেই, তাদের খেলার জায়গা নেই। শিশুরা যদি আমাদের ভবিষৎ হয় তবে কেন শিক্ষা অবহেলিত? 

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে শতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধান অতিথি করেছিল। আমার আশা ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই মহান অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেবেন শিক্ষা বাজেট হবে তিন থেকে পাঁচগুণ। কিন্তু হতাশ হইনি। দাবি উঠেছে ইট পাথরের দালান চাই না- চাই মগজের খাদ্য জ্ঞান। যে জাতি জ্ঞানে যত উন্নত সেই জাতি তত সমৃদ্ধ। অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে মুক্তির আলোর পথ দেখাতে সরকার ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত চাই- বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে শিক্ষার বিকল্প থাকতে পারে কি?

শিক্ষা প্রয়োজন উন্নয়নের জন্য, মানব অস্তিত্বকে অর্থপূর্ণ করবার জন্য, স্বাধীনতাকে রক্ষা ও ভোগের জন্য। অজ্ঞতা হচ্ছে পরাধীনতা। আমরা স্বাধীন হয়েও পরাধীন আছি কারণ শিক্ষা এখনো অবহেলিত। আশা করি আমাদের জাগরণ ঘটবে শিক্ষার আলোয়। শিক্ষার অভাবে আমরা অন্যরা যা সত্য বলে তাকে সত্য মনে করি, অন্যরা যেটাকে গণতন্ত্র বলে সেটাকে গণতন্ত্র মনে করি। সুতরাং, আমাদের গবেষণার প্রয়োজন। আশা করি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী সরকারকে বোঝাতে সক্ষম হবেন। কারণ তিনি একসময় ডাক্তার ছিলেন, একসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তিনি অন্তত অনেকের থেকে ভালো জানেন শিক্ষার মূল্য কী। শিক্ষার আলোয় দেশ এগিয়ে যাবে এই স্বপ্ন যেন সত্যি হয়।    

লেখক: শিক্ষক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়