বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে পুঁথি গানের আসর

ভোলা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ জানুয়ারি ২০২১, ২০:৪৭

বাল্যবিয়ে সম্পর্কে সচেতন করতে গ্রামে গ্রামে জনপ্রিয় পুঁথি গানের আসর। ব্যতিক্রমী এ পুঁথি গানের মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে বাল্যবিয়ের ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরছেন ভোলার একদল তরুণ-তরুণী। তারা বাল্যবিয়ে সম্পর্কে সচেতন করতে গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া পুঁথি গানকে বেছে নিয়েছেন। গত ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ভোলার বিভিন্ন গ্রামে এ পুঁথি গানের আসর চলছে।

বাল্যবিবাহ রোধ করতে ভোলা সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ জেলার সামাজিক সংগঠন স্বপ্নীল শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক সংগঠনের একদল তরুণ-তরুণী পুঁথি গানের এ আসর করছেন। তাদের মূল্য লক্ষ্য ভোলা থেকে সম্পূর্ণরূপে বাল্যবিবাহ রোধ করা। ইউনিসেফ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট এর শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সুরক্ষা তরান্বিতকরণ (এপিসি) প্রকল্পের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে পুঁথি গানের পাশাপাশি নাটকও পরিবেশন করেন তারা।

এদিকে ব্যতিক্রমী আয়োজনের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ সম্পর্কে সচেতন ও প্রতিরোধে বিষয়ে গ্রামের মানুষের কাছে বেশ সাড়া পাচ্ছেন তারা।

ভোলা সদর উপজেলার চর ভেদুরিয়া গ্রামের ইকবাল, সাহাবুদ্দিন, তাবাসুম ও মাওয়া বলেন, গত কয়েক দিন ধরে শুনেছি গ্রামে গ্রামে পুঁথি গানের আসর হচ্ছে। আমাদের চর ভেদুরিয়া গ্রামের পুঁথি গানের আসর বসলে আমরা সবাই ছুটে আসি। আমরা পুঁথি গানের মাধ্যমে জানতে পারি ১৮ বছরের নিচে কোন মেয়েকে বিয়ে দিলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। কারণ কম বয়সে মেয়েরা সংসার জীবন সম্পর্কে বুঝে না। এছাড়াও কম বয়সে বিয়ের পর ওই মেয়ে যদি মা হয় তখন তার প্রসবের সময় প্রচুর ব্যাথা, প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এটা সে সহ্য করতে পারেনা। যার কারণে অনেক সময় সে মারা যায়। এছাড়াও বাল্যবিবাহের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।

স্বপ্নীল শিশু কিশোর সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি ইভান তালুকদার বলেন, ভোলা জেলায় বাল্যবিবাহের হার একটু বেশি। আমরা অভিভাবকদের বিভিন্ন সময় বুঝালেও তারা বিষয়টি গুরুত্ব দেন না। পরে আমরা স্বপ্নীল কিশোর সাংস্কৃতিক সংগঠন পুঁথি গানের আসরের আয়োজন করি। আমরা জানি যে, ব্যতিক্রমী কোনো কিছুর মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে বাল্যবিবাহের সম্পর্কে সচেতন করলে তারা বিষয়টি গুরুত্ব দেবে। এজন্যই আমরা এ পুঁথি গানের আসর করছি।

তিনি আরো বলেন, পুঁথি গানের মাধ্যমে আমরা একটি স্কুলছাত্রীর জীবন কাহিনী তুলে ধরছি। ওই ছাত্রীর অল্প বয়সে বিয়ে হয়। বিয়ের পর সে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। বিয়ের পর সংসার জীবনের নানান সমস্যা সৃষ্টি হয়। সে সন্তান সম্ভবা হলে তার স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং রোগা হতে থাকে। পরে প্রসবের সময় তার মৃত্যু হয়। পুঁথি গানের কাহিনীগুলো গ্রামের মানুষগুলো অধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। গত বুধবার থেকে আমরা পুঁথি গানের মাধ্যমে সচেতনতা করে যাচ্ছি। এ বিষয়ে কোস্ট ট্রাস্টের শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সুরক্ষা তরান্বিতকরণ (এপিসি) প্রকল্প সমন্বয়কারী মিজানুর রহমান বলেন, ভৌগলিক কারণে দেশের অন্যান্য জেলা থেকে ভোলায় বাল্য বিয়ের হার অনেক বেশি। বিশেষ করে নদী ভাঙন ও চরাঞ্চল বেশি থাকার কারণে মেয়েদের অভিভাবকরা দ্রুত বিয়ে দিয়ে দিয়। তাই আমরা এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে সহায়তা করছি। এর মাধ্যমে মানুষ বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। যাতে করে বাল্যবিয়ের হার কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে ভোলা জেলায় বাল্যবিয়ের হার ৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

(ঢাকাটাইমস/২৪জানুয়ারি/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :