২০৩০ সালে এসডিজি অর্জন

উচ্চ আয়ের দেশগুলো প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:০৯

ঢাকাটাইমস ডেস্ক

তুরস্কের ইস্তাম্বুল মেডিপল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও তুর্কি প্রেসিডেন্টের জ্যেষ্ট অর্থ উপদেষ্টা হ্যাতিস কারাহানের ‘ইট ইজ টাইম টু রিথিংক ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট কোঅপারেশন’ শীর্ষক আল জাজিরায় প্রকাশিত মতামতটি ইংরেজি থেকে বাংলায় রূপান্তর করেছেন সদর উদ্দীন লিমন।

ক্যালেন্ডারের পাতায় এখন ২০২১ সাল। করোনাভাইরাস নিয়ে পুরো বিশ্বে এখনও টালমাটাল অবস্থা। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও এই ভাইরাস মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশের অবস্থা উদ্বেগজনক।

বিশ্ব অর্থনীতির ওপর করোনা ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে বিশ্ব সম্প্রদায় ২০৩০ সালের মধ্যে যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে এগোচ্ছে তার ওপর পড়েছে করোনার কালো ছায়া।

করোনাভাইরাস ‘জেনুইন’ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতার বড় একটি অংশ বিদেশি সাহায্যের (ফরেন এইড) সঙ্গে জড়িত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ‘ফরেন এইড’ বিষয়টির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অর্থনীতির পুনর্গঠন করা। সময়ের পরিক্রমায় পশ্চিমা-নিয়ন্ত্রিত এই ধারণাটির বিভিন্ন ধরন তৈরি হয়েছে।

কিন্তু বিশ্ব উন্নয়নে ‘বিদেশি সাহায্যের’ ভূমিকা ক্রমেই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। কারণ এর ফলাফল সন্তোষজনক নয়। এই কারণে এখন নতুন আন্তর্জাতিক সাহায্য কাঠামোর প্রতি আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।

দুইটি কারণে বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতির সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। একটি হচ্ছে দাতা দেশগুলোর দায়িত্ববোধের অভাব। অপরটি হচ্ছে এইড (সাহায্য) বিতরণ ও ব্যবহারে অকার্যকরতা। পরিসংখ্যান বলছে, বিদেশি সাহায্যের ক্ষেত্রে দাতা দেশগুলোর অঙ্গীকার ও কাজের মধ্যে বিশাল পার্থক্য আছে।

১৯৭০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ একটি উচ্চাবিলাসী কৌশল গ্রহণ করে। যাতে বলা হয়, অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসরমান দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি তাদের ‘অফিসিয়াল ডেভলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্সের (ওডিএ) পরিমাণ বৃদ্ধি করবে।

বলা হয়েছিল, ১৯৭৫ সালের মধ্যে এর পরিমাণ হবে মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিএনপি) ০.৭ শতাংশ। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের (ওইসিডি) ডেভলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স কমিটির (ডিএসি) খুব কম সংখ্যক দেশ এই লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছিল।

১৯৭৫ সালে সুইডেন ও নেদারল্যান্ডস এই লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছিল। নরওয়ে এবং ডেনমার্কও এই লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। লুক্সেমবার্গ ও যুক্তরাজ্য এই কাতারে যোগ দেয় যথাক্রমে ২০০০ ও ২০১৩ সালে। তারপর থেকে অন্য কোনো ওইসিডি-ডিএসিভুক্ত দেশ ধারাবাহিকভাবে এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।

লক্ষণীয় বিষয় হলো, ডিএসি সদস্যদের ওডিএ (অফিসিয়াল ডেভলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স) কখনো জিএনপির ০.৪ শতাংশ অতিক্রম করেনি। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে ডিএসিভুক্ত দেশগুলোর ওডিএ (অফিসিয়াল ডেভলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স) এর পরিমাণ ছিল তাদের জিএনপির প্রায় ০.৩ শতাংশ।

২০১৯ সালে ডিএসির পাঁচটি সদস্য দেশ ০.৭ শতাংশের লক্ষ্য পূরণ করেছে বা অতিক্রম করেছে। যুক্তরাজ্য (০.৭ শতাংশ), ডেনমার্ক (০.৭১ শতাংশ), সুইডেন (০.৯৯ শতাংশ), নরওয়ে (১.০২ শতাংশ) ও লুক্সেমবার্গ (১.০৫ শতাংশ)। অন্যদিকে একইবছরে সর্বোচ্চ ওডিএ/জিএনআই অনুপাত এসেছিল তুরস্ক থেকে (১.১৫ শতাংশ)। কিন্তু তুরস্ক ডিএসি সদস্য নয়। তারা পর্যবেক্ষক দেশ।

এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে, উচ্চ-আয়ের অনেক দেশই উন্নয়ন সহযোগিতার অঙ্গীকার পূরণ করেনি কিংবা সামান্য করেছে। এটি হতাশার যে জাতিসংঘ ওডিএ কৌশল গ্রহণ করার এত বছর পরও তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

তুরস্ক তার অঙ্গীকারকেও ছাড়িয়েছে

করোনা মহামারী উন্নয়নশীল দেশগুলোর কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু উন্নত দেশগুলোর এক্ষেত্রে করার অনেক কিছুই আছে। কারণ, তারা উন্নয়নশীল দেশকে সাহায্য করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। বিদেশে সাহায্যে পাঠানোর ক্ষেত্রে গত ১৫ বছরে তুরস্কের অবদান উল্লেখযোগ্য। পরিসংখ্যান বলছে, তুরস্ক একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের নেতৃত্বে দেশটি তাদের অঙ্গীকারের চেয়েও বেশি কিছু করছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্বের উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গি কেন প্রত্যাশার চেয়ে নিচে? উচ্চ আয়ের ও উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে বিদেশি সাহায্য নতুন করে ভাবতে হবে। বিদেশি সাহায্যের কার্যকারিতার ওপরেও তাদের গুরুত্ব দিতে হবে।

যেকোনো উন্নয়ন সহযোগিতার কার্যকারিতা দুইটি স্তম্ভের ওপর নির্ভর করে। এক. ডিজাইন (পরিকল্পনা) ২. ডেলিভারি (বিতরণ)। কীভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে তার ওপর এর ফলাফল নির্ভর করে। একটি ভালো পরিকল্পনা কতগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন, কোন দেশকে সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে, কোন খাতে দেয়া হচ্ছে, এটি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো। যেকোনো সহযোগিতা সফল হওয়ার জন্য তা হিউম্যানিটেরিয়ান প্রিন্সিপালস (মানবিক নীতি) ও জেনুইননেস (অকৃত্রিমতা) এর উপর ভিত্তি করে গঠিত হতে হবে।

কিন্তু ভালো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে না যদি আপনি ভালোভাবে বিতরণ করতে না পারেন। ভালো ফল পেতে হলে স্বচ্ছতা থাকতে হবে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকা যাবে না, জবাবদিহিতা থাকতে হবে।

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কোটি কোটি মানুষ দরিদ্রতা ও ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করছে। করোনা এই সমস্যাকে আরো প্রকট করে তুলেছে। যদি বিশ্ব ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করতে চায় তাহলে দ্রুত, খুব দ্রুত কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে দাতা দেশগুলোকে বৈদেশিক সাহায্যের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৫জানুয়ারি/ডিএম)