ভাঙন-খানাখন্দে চলাচলের অনুপযোগী জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ১৩:১৩ | আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ১৩:১৯

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ

গেল চার দফা বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সুনামগঞ্জের জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো। যান চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কগুলো। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জেলার সাধারণ মানুষগুলোকে।

বন্যায় জেলা শহরের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগের বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ, সাচনা-সুনামগঞ্জ প্রধান সড়ক ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের অধিকাংশ সড়কে মারাত্মক খানাখন্দ ও ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কগুলো মেরামত না হওয়ার ফলে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে জেলার লাখ লাখ মানুষ।  

জানা গেছে, জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজার থেকে আব্দুজ জহুর সেতুর মুখ পর্যন্ত পুরো সড়কের অবস্থা একেবারে নাজুক। সড়কটির প্রায় ৮৫ ভাগই ভেঙে গেছে। ৪০ মিনিটের রাস্তায় যাত্রীদের দ্বিগুণ সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। এদিকে, আব্দুজ জহুর সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও মধ্যনগরমুখী সড়কের চালবন্দ পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তাটি দুর্ভোগের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। সড়কের মূল আস্তরণ সরে গিয়ে লক্কড়-ঝক্কড় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ সড়ক দিয়ে জীবন বাজি রেখে প্রতিনিয়ত চলাচল করছেন লাখো মানুষ।

এছাড়া জরাজীর্ণ ওই সড়কের নিয়ামতপুর অংশ থেকে ফতেপুর এবং ফতেপুর-পুরান বারুঙ্কা হয়ে তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর পর্যন্ত সড়কটিও বেহাল দশায় পতিত হয়েছে। সড়কের মাঝখানে বড় বড় ভাঙন ছাড়াও শনি হাওর তীরবর্তী অংশ ভেঙে আবাদী জমিতে রূপ নিয়েছে।

আনোয়ারপুর-ফতেপুর-নিয়ামতপুর ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে মোটরসাইকেল চালক শামসুল মিয়া জানান, রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। কেউ গর্ভবতী নারী নিয়ে শহরে যেতে চাইলে রাস্তাতেই জীবন শেষ। ওই রাস্তায় চলাচল মারাত্মক কষ্ট হয় আর প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। দ্রুত রাস্তাটির সংস্কার কাজ করার দাবি জানান তিনি।

ব্যবসায়ী সাদেক আলী জানান, জেলার জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুরের অধিকাংশ সড়কের মূল অংশ ভেঙে বের হয়ে এসেছে মাটি। এছাড়াও আনোয়ারপুর থেকে ফতেহপুর সড়কে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন হাজার হাজার মানুষ। এতে যাত্রী ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। দুর্ঘটনার পাশাপাশি এসব সড়কে চলাচল করতে গিয়ে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আবার ভাঙাচোরা রাস্তায় কেউ জরুরি রোগী নিয়ে শহরে ছুটতে অনীহা প্রকাশ করছেন। চলাচলের রাস্তাগুলো দ্রুত মেরামতের দাবি জানান তিনিও।

বিশ্বম্ভরপুর দীগেন্দ্র বর্মণ সরকারি কলেজের প্রভাষক মসিউর রহমান বলেন, আব্দুজ জহুর সেতুর মুখ থেকে চালবন্দ পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তাটি বেশি খারাপ। তিন উপজেলার মানুষ এ রাস্তায় চলাচল করেন। তাই এ রাস্তাটি অধিকতর জনগুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে দ্রুত সড়কের কাজ করা দরকার।

জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিশেন্দু রঞ্জন গোস্বামী বলেন, সাচনা-সুনামগঞ্জ যোগাযোগের অন্যতম রাস্তাটির অবস্থা শোচনীয়। এ সড়ক দিয়ে রোগী দূরের কথা, ভালো মানুষ গেলেই রোগী হয়ে যায়। দ্বিগুণ সময়ক্ষেপণের সঙ্গে কষ্ট তো আছেই।

তবে, আপাতত যান চলাচলের উপযোগী করতে সুনামগঞ্জ-সাচনা ও বিশ্বম্ভরপুর সড়কসহ অন্যান্য খারাপ অংশগুলোর টেন্ডার হয়েছে বলে জানান সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ওই সড়কে আমরা মেজর খাতে বড় ইস্টিমেটও দিয়েছি। এটা প্রক্রিয়াধীন আছে এবং টেন্ডারকৃত কাজ অচিরেই শুরু হবে।

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ-২ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনের সাংসদ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ  জানান, দ্রুত সংস্কারের জন্য যোগাযোগমন্ত্রী ও সচিব বরাবর ডিও লেটার দেওয়া হয়েছে। এখানে দুটি কাজের প্রস্তাব করা হয়েছে। একটা স্থায়ীভাবে সড়ক পুনঃসংস্কার এবং আরেকটা ইমার্জেন্সি মেইন্টেন্যান্সের জন্য।

তিনি আরও জানান, ব্রিজের পশ্চিমপাড় থেকে চালবন্দ হয়ে তাহিরপুর পর্যন্ত এবং অপর প্রান্তের গৌরারং হয়ে সাচনা বাজার পর্যন্ত রাস্তাটির ব্যাপারে জেলা সওজ'র নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে বৈঠক করে একটা প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। দ্রুত কাজের ব্যাপারে আশাবাদী বলে জানিয়েছেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৫জানুয়ারি/পিএল)