যুক্তরাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে, অভিযোগ রাশিয়ার

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ১৪:০৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একজন মুখপাত্র। পুতিনবিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভানলির মুক্তির দাবিকে কেন্দ্র করে রাশিয়াজুড়ে বিক্ষোভের পর ক্রেমলিন এই অভিযোগ করল।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে পুতিনের আলোচনায় বসার পথ উন্মুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন পুতিনের ওই মুখপাত্র। খবর আল জাজিরার   

এর আগে শনিবার নাভানলির মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভকারী ও সাংবাদিকদের  ওপর  রাশিয়া সরকারের  নির্দয় কৌশল অবলম্বনের কঠোর নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পক্ষ থেকে  সকল বন্দীর মুক্তির দাবি জানানো হয়। 

গত ১৭ জানুয়ারি জার্মানি থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফেরার পর-পরই বিমানবন্দরে পুলিশ কট্টর পুতিন সমালোচক নাভানলিকে আটক করে। এর আগে গত বছরের ২০ আগস্ট  নাভালনির ওপর নার্ভ এজেন্ট বিষ প্রয়োগ করা হয়।  এর ফলে সাইবেরিয়া থেকে আকাশপথে মস্কো যাওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। নাভালনিকে মস্কো শহরের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে জার্মানিতে নেয়া হয় চিকিৎসার জন্য। পরে জার্মান সরকার জানায়, নোভিচক গ্রুপের নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগ করা হয়েছিল তার ওপর। যদিও রাশিয়া বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

শনিবার নাভানলির মুক্তির দাবিতে প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে হাজারো মানুষ রাশিয়াজুড়ে বিক্ষোভ করে। ওই বিক্ষোভ থেকে পুলিশ প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিক্ষোভকারীকে আটক করে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হন বেশ কয়েকজন প্রতিবাদকারী। এই ঘটনার নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা জানানোর ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রকে তিরস্কার করেন।

পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, রাশিয়ায় বিক্ষোভের সতর্কতায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সম্ভাব্য অস্থিরতার যে সতর্কতা করা হয়েছে সেটা রাশিয়ার সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ।

যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিকে অনুপযুক্ত আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, 'অবশ্যই পরোক্ষভাবে তারা আমাদের অভ্যন্তরণী বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে।'  অবশ্য এরপরই পুতিনের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে রাশিয়া আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।

সংলাপে বসার আগ্রহ জানিয়ে পুতিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, সংলাপে অনেকাংশে মত-পার্থক্য থাকবে। কিন্তু একই সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই যুক্তিসঙ্গত ফল বেরিয়ে আসবে, সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আলোচনায় বসতে প্রস্তুত থাকলে প্রেসিডেন্ট পুতিনও আন্তরিকভাবে সাড়া দেবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে  ওয়াশিংটন এবং মস্কো বেশ কয়েকটি ইস্যু নিয়ে মারাত্মকভাবে বিভক্ত রয়েছে। ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নবাদীদের সমর্থন দেয়ার অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে দোষারোপ করছে। এছাড়া সিরিয়ার বাশার আল আসাদ এবং লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে অনুপ্রবেশের জন্যও রাশিয়াকে অভিযুক্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের  নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ চেষ্টার অভিযোগ আনেন। ওই তৎপরতার ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন নির্বাচনে ক্ষতিগ্রস্ত হন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেন রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পুতিনকে স্বৈরাচার আখ্যা দিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো তিনিও রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গীকার করেছেন। নির্বাচনের প্রচারণার সময় বাইডেন পুতিন বিরোধী নাভানলির ওপর নভোচক এজেন্ট প্রয়োগ ও ভিন্নমত দমনের জন্য  নিন্দা  জানান। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বাইডেন বিজয়ী হবার পর রাশিয়া সন্দেহজনকভাবে নীরব ছিল। বাইডেনকে যেসব বিশ্ব নেতারা অনেক দেরিতে অভিনন্দন জানিয়েছেন পুতিন তার মধ্যে অন্যতম।

তবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানের বিষয় আছে। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে বাইডেন ওই চুক্তি আরও পাঁচ বছর বাড়াবেন। ক্রেমলিন প্রাথমিকভাবে বাইডেন প্রশাসনের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন।

ঢাকাটাইমস/২৫জানুয়ারি/কেআই/একে