এনআরবি ব্যাংকের তিন পরিচালকসহ চারজনকে দুদকে তলব

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ১৭:২৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

অবৈধভাবে অর্জিত অর্থে ব্যাংকের শেয়ার ক্রয় ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে এনআরবি ব্যাংকের তিন পরিচালক ও এক শেয়ার হোল্ডারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সম্প্রতি দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সিরাজুল হক এই তলবি নোটিশে চারজনের ঠিকানায় নোটিশ পাঠিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদান করতে বলা হয়।

তিন পরিচালক হলেন নাফিহ রশিদ খান, নাভিদ রশিদ খান ও ইদ্রিস ফরায়জী। আর অপরজন হলেন ব্যাংকটির শেয়ার হোল্ডার আমিনুর রশিদ খান। তিনি নাফিহ ও নাভিদের বাবা।

দুদকের পাঠানো তলবি নোটিশে বলা হয়, চারজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতিসহ অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের বিপুল অংকের শেয়ার ক্রয়সহ মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগসহ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে তাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছের অভিযুক্তদের ব্যাপারে তথ্য চিঠি দিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।

অভিযোগ রয়েছে দুর্নীতি, অনিয়ম, কর ফাঁকি এবং বিদেশে হুন্ডি কারবারের মাধ্যমে বিপুল অর্থবিত্ত গড়েছেন আমিনুর রশিদ খান ও পরিবার। মানিলন্ডারিং মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচারসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, আমিনুর রশিদ খান এবং তার দুই ছেলে নাফিহ রশিদ খান ও নাভিদ রশিদ খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জনের অভিযোগ রয়েছে। ওই অর্থে তারা বিভিন্ন ব্যাংকের শেয়ার কেনার পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানির নামে বিদেশে পাচার করেছেন।

সূত্র আরও জানায়, এনআরবি ব্যাংকের আরেক পরিচালক এম বদিউজ্জামানের ব্যবসায়ী অংশীদার আমিনুর রশিদ খান। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে প্রতিষ্ঠান ছাড়াও দুই ছেলের নামে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল সার, কীটনাশক ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের কাঁচামাল আমদানি-রপ্তানি করে। তবে এর আড়ালে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চালান (ইনভয়েস) অতিমূল্যায়নসহ নানা কৌশলে বিদেশে অর্থপাচার করেন বলে অভিযোগ।

অভিযোগ আছে, আমিনুর রশিদ খানের ছেলেদের যখন এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক করা হয় তখন তাদের একজনের বয়স ছিল ২৫ বছর। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০১৩ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ধারা ১৫ এর উপধারা ৬ (অ) অনুযায়ী ব্যাংকের পরিচালক হতে হলে কমপক্ষে ১০ বছরের ব্যবস্থাপনা বা ব্যবসায়িক বা পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সেই ধারা তো লঙ্ঘন হয়েছেই, এমনকি নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাকে পরিচালক হিসেবে অনুমোদন না করলেও অবৈধভাবে তাকে পরিচালক পদে বহাল রাখা হয়।

দুদকের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আমিনুর রশিদ খান সিঙ্গাপুরকেন্দ্রিক হুন্ডি ব্যবসায়ের অংশীদার এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক এম বদিউজ্জামান, তার স্ত্রী নাসরিন জামান ও মেয়ে তানিয়া জামান। এই চক্রের আরেক সহযোগী ইউরোপের হুন্ডি ব্যবসায়ী ইদ্রিস ফরায়জী। তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল এক্সচেঞ্জ। এর মাধ্যমেই বিদেশে অবৈধ উপায়ে অর্থপাচার করা হয় বলে অভিযোগ আছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দেশে-বিদেশে আমিনুর রশিদ খান এবং তার ছেলের নামে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে দেশ ট্রেডিং করপোরেশন, বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জব্বার জুট মিলস লিমিটেড, বাংলাদেশ মেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি লিমিটেড, হাইড্রোকার্বন, এম ইশরাত হিমাগার লিমিটেড। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে রয়েছে জেনট্রেড এফজেডই (ইন্টারন্যাশনাল কমোডিটি ট্রেডিং) ইউএই, কমোডিটি ফাস্ট ডিএমসিসি (ইন্টারন্যাশনাল কমোডিটি ট্রেডিং) ইউএই, লোচ শিপিং ইন্টারমিডিয়ারি এফজেই (ইন্টারন্যাশনাল কমোডিটি ট্রেডিং) ইউএই।

ঢাকাটাইমস/২৫ জানুয়ারি/এসআর/এমআর