ইউপি নির্বাচনে সরাসরি অপরাজিতারা অংশগ্রহণের সুযোগ চান

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ২২:৩৫

বাগেরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

‘আমি একজন নারী। আমি স্বামীর পরিবারে নির্যাতিত, নিপীড়িত। ১৯৯১ সালে আমার স্বামী মারা যান। তখন আমার একটা বাচ্চা চার বছর বয়সী এবং আরেকটা ছিল তিন মাস বয়সী। আমি শ^শুরবাড়ি থেকে বিতাড়িত, শ^শুরের ৪০ বিঘা সম্পত্তি ছিল তার কোন অংশ আমি পাইনি। আমি আমার দুই সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসি। আমি নতুন করে আবার বিয়ে না করে আমার সন্তান দুটিকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। তারা এখন স্বাবলম্বী হয়েছে। ভাল আছে। আমার স্বামী মারা না গিয়ে যদি আমি মারা যেতাম, তাহলে আমার স্বামী কি আমার এই সন্তান দুটিকে মানুষ করত- সেই প্রশ্ন  রাখেন এই নারী। সমাজের এক পুরুষকে উদারহরণ হিসেবে দেখান যে, আমার মত বিয়ে না করে তাদের থাকা সন্তানকে মানুষ করেছেন। আমার মনে হয় না তা কেউ দেখাতে পারবেন। আমাদের আশেপাশে অনেক নারী আছেন, যারা নীরবে নির্যাতন সহ্য করে যাচ্ছেন। এখানে উপস্থিত সব নারীকে কথা বলতে দেন দেখবেন সবাই তাদের পরিবার নিয়ে নানা অভিযোগ তুলে ধরবেন। বর্তমানে নারীদের সম্মান অনেকটা বেড়েছে- এটা স্বীকার করতে হবে। আমি যা সহ্য করেছি, তা এখনকার মেয়েরা তা সহ্য করেছে না। আমরা চাই সমাজে, সংসারে নারীদের সবাই সম্মান করুক। আমরা সফল, আমরা জেগেছি, এখন আমাদের সামনে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। আমাদের সাহস আছে, তাই আসন্ন ইউপি নির্বাচনে নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন।

সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে নারী উন্নয়ন ফোরাম আয়োজিত আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ওয়ার্ড পর্যায়ে নারীদের সরাসরি অংশগ্রহণ বিষয়ে অপরাজিতা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে অনুষ্ঠিত এডভোকেসি সভায় অপরাজিতা সদস্য লীলা রাণী দাস এই অভিমত ব্যক্ত করেন। বাগেরহাটের সব অপরাজিতা সদস্যের দাবি আসন্ন ইউপি নির্বাচনে ওয়ার্ড পর্যায়ে নারীদের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আ ন ম ফয়জুল হক বলেন, আমাদের মন মানসিকতা, ধ্যান ধারনার পরিবর্তন করতে হবে। নারীদের বিভিন্ন জায়গায় যে চাহিদাগুলো রয়েছে তার প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। বর্তমানে নারী আসনের ক্ষেত্রে যে সংরক্ষিত কথাটি রয়েছে, তা এক সময় উঠে যাবে। সংরক্ষিত বিষয়টি থাকবে না। নারীরা তাদের যোগ্যতায় সব জায়গায় কাজ করবেন বলে আমি বিশ^াস করি। বাংলাদেশের বিনির্মাণেন ও উন্নয়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা কে পালন করে নারী।

সরকারি কর্মকর্তা বলেন, জনপ্রতিনিধি বলেন- সমাজের উন্নয়ন বলেন নারীদের বাদ দিয়ে কিছুই হয় না। অপরাজিতা এই নারীদের সবাইকে আমাদের সম্মান দিতে শিখতে হবে। নারীদের যেসব অধিকার রয়েছে তা বাস্তবায়নে প্রশাসনের যে সহযোগিতা দরকার তা করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান রিজিয়া পারভীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এডভোকেসি সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আ ন ম ফয়জুল হক।

বিশেষ অতিথি ছিলেন- বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রিজাউল করিম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোছাব্বেরুল ইসলাম, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাসনা হেনা, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আকতারুজ্জামান বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান এমএ মতিন, জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান মনি মল্লিকসহ বিভিন্ন র্পায়ের নেতারা।

বিশেষ আলোচক ছিলেন- বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার গুহ।

(ঢাকাটাইমস/২৫জানুয়ারি/এলএ)