ফেনীতে সরিষা চাষ বেড়েছে তিনগুণ

শরীফ ভূঞা, ফেনী
| আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২১, ১৬:৪৩ | প্রকাশিত : ২৬ জানুয়ারি ২০২১, ১৪:৪৮

স্বল্প খরচ আর কম সময়ে সরিষা চাষ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ফেনীর বিভিন্ন উপজেলায়। উন্নত জাতের সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর তিনগুণ বেড়েছে সরিষা চাষ।

প্রচলিত দেশি সরিষার চেয়ে ফলন বেশি হওয়ায় বারি-১৪ ও বারি-১৫ চাষে চাষিরা আগ্রহী হচ্ছে। অনেকেই আমন ধান সংগ্রহের পর জমি ফেলে না রেখে সরিষা চাষ শুরু করেছেন। এরপর আবার বোরো ধান রোপণ করবেন তারা। ফলে একই জমিতে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন হচ্ছে।

উন্নত জাতের সরিষা বারি-১৪ ও বারি-১৫ গাছের উচ্চতা হয় দেড় থেকে দুই ফুটের মতো। আগে সরিষা গাছ বড় হলেও ফলন কম হতো। নতুন জাতের ছোট আকারের এ সরিষা গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ফল আসছে। বীজ বপনের ৭০ দিনের মধ্যেই জমি থেকে সরিষা সংগ্রহ করা যায়। সরিষার বড় শত্রু জাব পোকা। ফেনীতে এখন পর্যন্ত জাব পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে না বলে জানান চাষিরা।

এদিকে, চলতি বছরে ফেনী জেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছে জেলা কৃষি সম্পাসারণ অধিদপ্তর।

সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রামের সরিষা চাষিরা জানান, এবার প্রতি বিঘা জমি থেকে ৬-৭ মণ সরিষা উৎপাদনের আশা করছেন তারা।

লাভজনক এবং সরিষা চাষের অনুকূল পরিবেশের কারণে এবার চলতি রবি মৌসুমে জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব মতে চলতি বছরে সরিষার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ হাজার হেক্টর জমিতে। সেখানে চাষ হয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে।

দাগনভূঞা উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের সরিষা চাষি আবু তাহের জানান, প্রতিবিঘা জমিতে সরিষা চাষে খরচ হয় সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা। প্রতি মণ সরিষা বিক্রি করা যায় ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা দরে। প্রতি বিঘাতে গড়ে সাত মণ সরিষা উৎপাদন হলে বিঘা প্রতি ১৫-১৬ হাজার টাকা লাভ করা যায়।

সদর উপজেলার উত্তর কাশিমপুর গ্রামের সরিষা চাষি বাবুল চন্দ্র দাস বলেন, নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে ১২-১৫ হাজার টাকার সরিষা বিক্রি করতে পারব।

সোনাগাজী উপজেলার সরিষাচাষি খায়ের মিয়া বলেন, ‘নিজের প্রয়োজন মেটাতে প্রতি বছর এক বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করি। এবার ৩ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। আশা করছি, অন্য বছরের তুলনায় এবার সরিষার ফলন ভালো হবে।’

ফেনী সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রণব চন্দ্র মজুমদার জানান, সরিষা আবাদে সেচের প্রয়োজন হয় না। এ কারণে কৃষকদের আর্থিক সাশ্রয় হয়। তাছাড়া কম সময়ে সরিষা আবাদ করা যায় বলে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন। পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নে গত বছর ১০ হেক্টর জমিতে চাষ হলেও এবার ২৭ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে।

দাগনভূঞা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্যাহ আল মারুফ জানান, জমিতে সরিষার আবাদ করলে ওই জমিতে সরিষার পাতা পড়ে জমির খাদ্য চাহিদা অনেকাংশে মিটিয়ে থাকে। চতুর্মুখী লাভে সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।

ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, সরিষার তেলের রয়েছে অনেক ওষুধি গুণ। সরিষার খৈল পশুখাদ্য ও জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধিতে ব্যবহার হয়। সরিষার গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কম সময়ে লাভজনক ফসল এটি। কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক কৃষকদের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

অন্যদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তৌফায়েল আহমেদ চৌধুরী বলেন, সরিষা চাষ সফল করার জন্য বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক কৃষকদের প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা দিয়েছে। এছাড়া কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের মধ্যে প্রয়োজনীয় সার, বীজ ও কীটনাশক বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে ফেনী জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজজমান জানান, এর আগে ফেনীতে সরিষা চাষ তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। বর্তমানে অন্য ফসলের চাইতে সরিষা উৎপাদন লাভবান হওয়ায় কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/২৬জানুয়ারি/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :