রাত পোহালেই বন্দরনগরীতে ভোট, প্রস্তুতি সম্পন্ন

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২১, ২০:৫০ | প্রকাশিত : ২৬ জানুয়ারি ২০২১, ২০:৪৭

রাত পোহালেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ইভিএমে ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে এই ভোটগ্রহণ চলবে বিকাল চারটা পর্যন্ত। ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

এবার মেয়র পদে সাতজন এবং কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন ২২৫ জন। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তা আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৪ হাজারের বেশি সদস্য। সবমিলিয়ে ভোটের মধ্যে থাকবেন সাড়ে ১৯ লাখের বেশি মানুষ।

মেয়র পদে লড়ছেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত রেজাউল করিম চৌধুরী। আর বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। গত বছরের ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটিতে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় আট দিন আগে তা স্থগিত করা হয়। এর প্রায় দশ মাস বন্দরনগরীতে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

দেশের এই বাণিজ্যিক শহরে ভোটার আছেন মোট ১৯ লাখ ৩০ হাজার ৭০৬ জন। মোট ৭৩৫টি কেন্দ্রে ইভিএমে এই ভোটগ্রহণ করা হবে। সে হিসেবে প্রতি কেন্দ্রে ভোটার ও বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা কর্মীদের মিলিয়ে গড়ে প্রায় ২৬০০ মানুষের উপস্থিতি ঘটবে আট ঘণ্টায়। ৭৩৫ কেন্দ্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ৪২৯টি কেন্দ্রকে।

নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, ভোটগ্রহণের দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা এবং ভোটের দিন রাত ১২টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি কোনো জনসভা আহ্বান, অনুষ্ঠান বা তাতে যোগদান এবং কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না।

এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে উৎসব-উত্তাপ থাকা সত্ত্বেও প্রার্থীদের প্রচারণার কারণে নগরবাসীকে কোনো ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। সড়ক বন্ধ করে মিছিল-মিটিংয়ে যেমন জনদুর্ভোগ হয়নি তেমনি মাইকের প্রচারণায় কান ঝালাপালাও হয়নি।

তবে গতানুগতিক ধারার বাইরে প্রত্যেক প্রার্থীর প্রচারণায় যুক্ত হয়েছে ভিন্নমাত্রা। ডিজিটাল প্রচারণায় পেয়েছে শৈল্পিক রূপ। ডিজিটাল প্রচারণার মাধ্যমে স্বশরীরে না গেলেও প্রার্থীরা ঠিকই পৌঁছে গেছেন ভোটারের কাছে। এর মাধ্যমে কোনো প্রার্থীর মার্কা কি বা নির্বাচনে তার প্রতিশ্রুতি সবই পৌঁছানো গেছে ঘরে ঘরে।

চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বলেন, ‘নগরীর ৭৩৫ ভোটকেন্দ্রের চার হাজার ৮৮৬ বুথের জন্য একটি করে এবং আরও ৭৩৫টি ইভিএম দেয়া হয়েছে। ফলাফল ঘোষণাসহ নির্বাচনী কাজে ব্যবহারের জন্য এমএ আজিজ স্টেডিয়াম এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।’

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, চসিক নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে আছে ২৫ প্লাটুন (৭৫০ জন) বিজিবি, ৪৯২ জন র‌্যাব, চার হাজার ৩০৮ জন পুলিশ এবং আট হাজার ৮২০ জন আনসার সদস্য। নির্বাচনে সব বাহিনী মিলে মোট ১৪ হাজার ৩৭০ জন সদস্য নিয়োজিত আছেন। পাশাপাশি মাঠে আছে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। মোবাইল টিম ৪১০টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স ১৪০টি।

ভোটের দিন ৭৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া বিজিবির প্রতি প্লাটুনে একজন করে এবং র‌্যাবের সঙ্গে তিনজন দায়িত্ব পালন করবেন। ইভিএমের কারিগরি সহায়তায় প্রতি ভোটকেন্দ্রে সশস্ত্র বাহিনীর দুজন করে সদস্য নিযুক্ত থাকবেন।

ভোটের দিন নগরীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোনো ধরনের অস্থিরতা ও আইন-শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটানোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা নেই।’

এদিকে নির্বাচন কমিশন আশা করছে, বন্দরনগরীতে আগামীকাল একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার বিকালে কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, একটি ভালো ভোটের প্রত্যাশা করছেন তারা।

ইসি সচিব বলেন, ‘পূর্ণ প্রস্তুতি শেষ। আমরা আশা করি, একটা সুষ্ঠু এবং প্রতিযোগিতামূলক শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য যা যা উদ্যোগ নেয়া দরকার তা নেয়া হয়েছে। আশা করি কালকে একটা ভালো নির্বাচন দেখবেন।’

ইসি সচিব বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করে দেয়া। যাতে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন, ভোট দিতে পারেন। কেউ যেন তাদের বাধা না দেয়। সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাখা হয়েছে। সেটা তারা দায়িত্ব পালন করবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এটাই। সবার জন্য সমান সুযোগ।’

নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘সেটা তো সবসময়ই থাকে। গোয়েন্দা বিভাগ থেকে আমাদের জানানো হয় কোন কোন কেন্দ্রগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। রিটার্নিং কর্মকর্তা যখন তালিকা দেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসন তারা সেই অনুযায়ী সেসব কেন্দ্রে বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করেন। যেগুলো সাধারণ কেন্দ্র সেখানে ১৬ জন করে দায়িত্ব পালন করবে। যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ সেখানে ১৮ জন করে থাকবেন এবং সেখানে অস্ত্র বেশি থাকবে।’

(ঢাকাটাইমস/২৬জানুয়ারি/ডিএম/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বন্দর নগরী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা