প্রেমে ব্যর্থ হয়ে রুম্পার ‘আত্মহত্যা’, ফাঁসছেন ‘প্রেমিক’ সৈকত

প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০২১, ১০:৩৪ | আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২১, ১০:৪০

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস

রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে রুবায়েত শারমিন রুম্পা ছাদ থেকে লাফ দিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছিলেন। বেশ কয়েক মাসের সম্পর্কের পর প্রেমিক সম্পর্ক থেকে সরে যেতে চাওয়ায় তিনি আত্মহননের পথ বেছে নেন। এ ঘটনার প্রায় ১৩ মাস পর ‘প্রেমিক’ আবদুর রহমান সৈকতকে রুম্পার ‘আত্মহত্যা প্ররোচনায়’ দায়ী করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়ার প্রস্তুতি চলছে।

২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর সিদ্ধেশ্বরী এলাকার একটি ভবনের সামনে রুম্পার লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ সেসময় লাশটি উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় রুম্পার বাবা পুলিশ কর্মকর্তা রোকন উদ্দিন অজ্ঞাত আসামি করে রমনা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পুলিশ প্রথমে মামলাটি তদন্ত করলেও পরবর্তী সময়ে তদন্তভার যায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে।

পরে রুম্পার মোবাইল কললিস্টের সূত্র ধরে গোয়েন্দা পুলিশ আবদুর রহমান সৈকতকে গ্রেপ্তার করে। তাকে চারদিনের হেফাজতে নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে রুম্পার সঙ্গে সৈকতের খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো। পরে সে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় রুম্পা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।

মামলাটির তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির জেরেই রুম্পা ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর আগে রুম্পা ধর্ষণের শিকার হননি। এরইমধ্যে মামলাটির অধিকাংশ তদন্ত শেষ করে এনেছে পুলিশ। এখন শুধু প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়ার অপেক্ষা। রুম্পার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও হত্যা কিংবা ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

রুম্পার লাশের ময়নাতদন্ত করে সেসময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছিলেন, ‘ময়নাতদন্তে রুম্পার শরীরে ধর্ষণের কোনো আলাতম পাওয়া যায়নি। তিনি বহুতল ভবন থেকে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন বলেই আমরা মনে করছি।’

গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও ফরেনসিক প্রতিবেদন এবং তাদের তদন্তে উঠে এসেছে, সবমিলে রুম্পার মৃত্যুর ঘটনাকে আত্মহত্যা বলেই তারা মনে করছেন। আবদুর রহমান সৈকতের সঙ্গে রুম্পার ছয় থেকে সাত মাস ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। একসময়ে সৈকত এই সম্পর্কটি ধরে রাখতে চাচ্ছিল না। ফলে রুম্পা হতাশা ক্ষোভ থেকে আত্মহত্যা করেন।

রুম্পা স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। সৈকতও একই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ শিক্ষার্থী। সহপাঠী হওয়ার সুবাধে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সেই সম্পর্ক ভেঙে পড়ার ধকল নিতে পারেননি রুম্পা। এরই জের ধরে তিনি আত্মহননের পথ বেছে নেন। রুম্পার বাবার করা মামলায় সৈকতের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগ আনা হবে বলে তদন্ত সূত্রে জানা গেছে। সৈকত এখন জামিনে মুক্ত আছেন।

পুলিশ কর্মকর্তা রোকন উদ্দিনের এক ছেলে এক মেয়ের মধ্যে রুম্পা ছিলেন বড় সন্তান। রুম্পার মৃত্যু ঘটনার সময় বাবা রোকন উদ্দিন হবিগঞ্জের একটি ফাঁড়ির পরিদর্শক ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) কর্মরত।

মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় তার করা মামলাটি এখন কি অবস্থায় আছে জানেন না মন্তব্য করে রোকন উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মামলাটি কোন অবস্থায় আছে তার কিছুই আমি জানি না। তবে এখনও আদালতে প্রতিবেদন দেয়া হয়নি। শুনেছি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদলি হয়েছেন। নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা কে তাও আমি জানতে পারিনি।’

রুম্পা হত্যা মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহিরুল ইসলাম। পরে মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে গেলে তদন্তভার পান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা জোনাল টিমের পরিদর্শক শাহ মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস। বদলি হয়ে তিনি এখন উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।

তার সময়ে মামলাটির অধিকাংশ তদন্তই শেষ করে আনা হয়েছিল জানিয়ে পরিদর্শক শাহ মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মামলার অধিকাংশ তদন্তের কাজ আমি শেষ করেছি। এখন শুধু আদালতে প্রতিবেদন জমা দেবে।’

অন্যদিকে মামলাটির বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক সালাহউদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এটা আমাদের টিম ওয়ার্ক। আমাদের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা আছেন। প্রতিবেদনের বিষয়ে পরবর্তী করণীয় কি হবে উনারাই সিদ্ধান্ত দেবেন।’

(ঢাকাটাইমস/২৭জানুয়ারি/ডিএম)