ব্যাচেলর মেসে ল্যাপটপ-মোবাইল ছিল তার টার্গেট

আল আমিন রাজু
ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২১, ২০:১৩ | প্রকাশিত : ২৭ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:০৮

গত পাঁচ বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ব্যাচেলদের বাসা টার্গেট করে চুরি করে আসছিলেন রুনা ওরফে রোজিনা নামে এক নারী। মূলত মোবাইল, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন ধরনের দামি ইলেকট্রনিকস পণ্য সুযোগ বুঝে চুরি করতেন তিনি। চুরি পেশায় রোজিনা এতোটাই দক্ষ যে গত পাঁচবছরের একবারও ধরা পড়েননি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছেও তার ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই। স্বামীর হাত ধরে এই পেশা এলেও বর্তমানে চোর ও ডাকাত চক্রের প্রধান রোজিনা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, পশ্চিম রামপুরা, সাত রাস্তা, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, বেগুনবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় একটি কিশোর চক্র তৈরি করেছেন রোজিনা। এদের দিয়ে চুরি করানোর পাশাপাশি তার চুরি করা পণ্যও বিক্রি করাতেন।

রোজিনার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে রাজধানী জুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো এই চক্রের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)’র মতিঝিল বিভাগ।

ঢাকাটাইমসকে বিষয়টি জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগের সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, রোজিনা বিভিন্ন ব্যাচলর বাসায় ঢুকে চুরি করতো। পরে সেগুলো বিক্রির জন্য তুলে দিতেন স্বামীর হাতে। তার স্বামী একজন মাদকাসক্ত। সে বর্তমানে রিহাবে ভর্তি। রোজিনার চক্রের সদস্যরাও মাদকাসক্ত। তাদের চুরি করা পণ্য বিক্রির টাকায় তারাও মাদকসেবন করতো।

তিনি আরও বলেন, আজ সকালে তেজগাঁও থেকে রোজিনাসহ চক্রের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের চক্রের কতজন কাজ করে এ বিষয়ে জানা যায়নি। তবে রোজিনা গত পাঁচবছর ধরে ব্যচেলর বাসাগুলো টার্গেট করে চুরি করে আসছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এতো বছর ধরে চুরি করে আলেও সে কখনো পুলিশের হাতে ধরা পড়েনি। তার বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনও তথ্য ছিলো না। তার চুরি করা থেকে যে টাকা আয় হতো সেটা দিয়ে বাসা ভাড়া ও সংসার চালানোর পাশাপাশি স্বামীর নেশার টাকার জোগান দিতো রোজিনা।

দীর্ঘদিন ধরে দক্ষতার সঙ্গে চুরি করে আসা রোজিনার চুরি করার সময়টি একেবারেই ভিন্ন। সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন তিনি চুরি করতে বের হতেন। ভোর ৫ টা থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত চুরি করতেন। এই সময়ে মধ্যে ১০ থেকে ১২টি বাড়িতে প্রবেশ করতেন এর মধ্যে ৩ থেকে ৪টি বাড়িতে চুরিতে সফল হতেন। তার মূল টার্গেট ছিলো ব্যাচেলর বাসা। সকালে ব্যাচেলর বাসায় কাজের বুয়ারা যায়, তাই সকালে সহজেই প্রবেশ করতে পারতেন রোজিনা।

চোর চক্রের সদস্যদের আশ্রয়দাতা হলেও রোজিনার নিজের কোনো ঠিকানা ছিলো না বলে জানান আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ছোট বয়সে বাবা-মায়ের কাছ থেকে হারিয়ে যান রোজিনা। তাই সে তার আসল বাবা-মাকে চিনে না। নরসিংদির রায়পুরা এলাকায় এক দম্পতির কাছে অবহেলা অজত্নে বেড়ে কাজের মেয়ে হিসেবে বেড়ে ওঠেন রোজিনা। পরে তার এই স্বামীর সঙ্গে বিয়ে হলে ঢাকায় চলে আসেন। এরপর স্বামীর সহযোগিতায় এই চুরির পথে নামেন রোজিনা। স্বামীর নেশার টাকার যোগান দিতে চুরি শুরু করলেও পরে দক্ষ চোর হিসেবে চক্র গড়ে তোলেন তিনি।

এ কর্মকর্তা আরও বলেন, কিছু দিন আগে মতিঝিল বিভাগে কর্মরত গোয়েন্দা পুলিশের এক সদস্যের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে মোবাইল চুরি হয়। তখন তার দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে কাজ শুরু করি আমরা। কাজ করতে গিয়ে দেখি চুরি হওয়া মোবাইলটির লোকেশন বেগুনবাড়ি এলাকায় দেখাচ্ছে। তখন আমরা মোবাইলের ওই ব্যবহারকারিকে ডেকে আনি। তিনি আমাদের জানান কিছু দিন আগে তিনি ৪ হাজার টাকা দিয়ে মোবাইলটি কিনেছেন। তার প্রতিবেশি এক কিশোরের কাছ থেকে মোবাইলটি কিনেছেন। এবার সেই কিশোরকে আটক করার পরে তার মাধ্যমে আরোও চার থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়। পরে তাদের কাছ থেকে রোজিনার বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। সকালে তেজগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে রোজিনাকে তার কয়েকজন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া চক্রের অন্য সদস্যরা হলেন, রবিন ওরফে নবী, ছাঈদ, মনোয়ার, রুবেল মিয়া ওরফে হাসান ও আলামীন। এ সময় রোজিনার বাসায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন মডেলের ৩০টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

রোজিনা ও তার চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

ঢাকাটাইমস/২৭জানুয়ারি/এআর/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :