রাঙ্গামাটি শহরের তরল বর্জ্য কি কাপ্তাই লেকে যাচ্ছে?
কাপ্তাই লেক নিয়ে আমার নিজস্ব কিছু ভাবনা আছে। পুরো কাপ্তাই লেকের নীল সবুজাভ জলরাশি আমাকে ভাবিয়েছে তার অসাধারণত্বের পেছনে পাহাড়ের ভূমিকার বিষয়ে। খুব স্বাভাবিকভাবে আমরা দুপুরের খাবারের সাথে সেদিন কাপ্তাই লেকের পানি খেয়েছি। গত দুই দশক আগেও গাজীপুরের শ্রীপুরের লবলং সাগরের পানি এভাবেই আমরা খেতে পারতাম।
ঠিক বুড়িগঙ্গার পানিও আমরা খেয়েছি ত্রিশ বছর আগেও। কেবল মাত্র শুরু হওয়া ভ্রমণের জায়গা এই কাপ্তাই লেক আগামী দুই দশক পর কেমন হবে? প্রশ্নটি এসেই যায়। কারণ আমরা লবলং ঠিক রাখতে পারিনি, তুরাগ রাখতে পারিনি, বুড়িগঙ্গাও পারিনি।
এর পেছনে পরিকল্পনার দায়ই বেশি। এই পরিকল্পনাহীনতা স্পষ্টই পরিলক্ষিত হচ্ছে কাপ্তাইয়ের বেলায়ও। রাঙ্গামাটি শহরটির তরল বর্জ্য কোথায় যায় এই প্রশ্নের উত্তরে আপনি না বলতে চাইলেও কাপ্তাই লেকের কথা আসবেই।
দ্রুত প্রয়োজন এই শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নির্দিষ্ট ডাম্পিং এরিয়া নির্ধারণ করা, সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করা, নৌজান থেকে তেল দূষণ হওয়া থেকে মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করা, এই জলাধারের পাশে কৃষিকাজে কীটনাশক ব্যবহার কমানোর জন্য নানামুখী উদ্যোগ নেয়া।
বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের আয়োজনে জাতীয় নদী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো গত ২২ ও ২৩ জানুয়ারি। দুটি গবেষণাপত্র এই আয়োজনে তুলে ধরা হয়। বক্তারা অনেক গবেষণার কথা বললেও আশার কথা এখনও কম। মাছ উৎপাদন কমেছে অনেক, জলজ প্রাণীর আধিক্যও নেই ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও রিভার রিসার্স ল্যাবরেটরির সমন্বয়কারী মঞ্জুরুল কিবরিয়া গবেষণা প্রবন্ধে উল্লেখ করেন কাপ্তাই লেকের বর্তমান অবস্থা ও এর প্রাচীনে কি ধরনের আচরণ ছিল সে বিষয়ে। ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের মুখ্য বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষক ড. মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান খান তুলে ধরেন আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদন। সেখানেও উঠে আসে সেন্টমার্টিন ও কাপ্তাই লেকের বিভিন্ন ধরনের ইকোলজিক্যাল বিষয়গুলো।
বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। তিনি নদী পরিব্রাজক দলের কর্মকান্ড নিয়ে ভুয়সী প্রশংসা করেন সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মহোদয় ।
সব কিছু মিলে কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণ, শ্রেষ্ঠ সাংগঠনিকদের পুরস্কার প্রদান, প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট প্রদান, উপজাতিদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা হয়ে উঠেছিল পাহাড়ের রঙিন আরেকটি ভূখণ্ড যেন। রাঙ্গামাটির চেম্বার অব কমার্স ভবনে অনুষ্ঠানে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন এবং কথা বলেছেন ।
তবে সব কথার পর আমাদের চাওয়া এই লেকটি বাঁচানো। লেকের জলজ সম্পদ নিয়ে নতুন করে ভাবা এবং ময়লা যাতে এখানে কেউ না ফেলে তা বারবার তদারকি করা।
লেখক: কলামিস্ট
ঢাকাটাইমস/২৮জানুয়ারি/এসকেএস