আয়ারল্যান্ডের নকল ওয়েবসাইট তৈরি করে ভিসা দিত তারা

প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০২১, ১৬:১৮ | আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২১, ১৬:৩৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

আয়ারল্যান্ডের ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে জাল ভিসা দিচ্ছিল একটি চক্র। ভুক্তভোগীদের পাসপোর্টের নম্বর নিজেদের তৈরি করা ওয়েবসাইটে দিয়ে কনফার্ম করত তারা। ভিসা সঠিক আছে, ওই দেশে চাকরি ঠিক আছে, সেখানে গেলে উন্নত জীবন গড়া যাবে এমন প্রলোভন দেখিয়ে ছয়জনের কাছ থেকে টাকা ও পাসপোর্ট হাতিয়ে নেয় প্রতারক ওই চক্রটি।

প্রতারণার সঙ্গে জড়িত এই চক্রটির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় অভিযোগকারী ছয়জনের পাসপোর্টসহ মোট ১৩টি পাসপোর্ট। আর জব্দ করা হয় দুটি ল্যাপটপ, ডাচ বাংলা ব্যাংকের চেক বই, দুটি প্লাস্টিকের ভুয়া সিল, টিম হর্টনস, মেনোনাইট নার্সিং হোমস ইনকরপোরেশনের নিয়োগপত্রসহ মানবপাচার ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত।

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- শাহীন হাসান, তারেক মাহমুদ গালিব ও বকুল হোসেন ওরফে রতন হাওলাদার। পলাতক রয়েছে মানব পাচারকারী চক্রটির অপর সদস্য মিজান ওরফে শাহেদ ছিদ্দিকী।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।

ডিআইজি বনজ কুমার জানান, লন্ডন পৌঁছে দেয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মানব পাচারকারী চক্রটি। চক্রটি তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পাসপোর্ট ও ভুয়া ভিসা চেক করে বিদেশগামীদের সঙ্গে প্রতারণা করত। এমন অভিযোগের অনুসন্ধানে নেমে চক্রটির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পিবিআই প্রধান বলেন, মানবপাচারকারী চক্রটি তাদের একটি নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করত। আয়ারল্যান্ডের ভিসা দেয়ার পর ভুক্তভোগীদের চেক করতে বলার পরই চক্রটি ভুয়া তা প্রমাণ পান। আয়ারল্যান্ডের ভিসা চেক করার জন্য ওয়েবসাইট ডেভেলপ করতে তারা ভুলে যায়। এ সময় ভুক্তভোগীরা ভারতীয় ওয়েবসাইটে আয়ারল্যান্ডের ভিসা চেক করতে লেখা আসে ‘দিস ইজ নট জেনুইন’।

বনজ কুমার জানান, ২ সেপ্টেম্বরে হাতিরঝিল থানায় মো. আলী চৌধুরী নামে এক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন। তিনিসহ তার আরও পাঁচ আত্মীয়কে আয়ারল্যান্ড নেয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে ছয়টি পাসপোর্ট ও পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। ইতোমধ্যে টাকা নেয়ার পর ভুয়া ভিসা ভুক্তভোগীদের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে আরও টাকা দাবি করেছিল। কিন্তু ভুক্তভোগীরা নিজেদের বিচক্ষণতায় প্রতারকদের কাছ থেকে পাওয়া ভিসাগুলো ভারতের নয়াদিল্লির আয়ারল্যান্ড অ্যাম্বেসিতে মেইলে করে পাঠায়। এতে অ্যাম্বেসি থেকে জানানো হয় ভিসাগুলো সঠিক নয়। এরপরও প্রতারকরা তাদের কাছ থেকে ভিসা পাসপোর্টের বিনিময়ে আরও টাকা দাবি করে। এর প্রেক্ষিতে বাদী বিষয়টি পিবিআইকে জানালে আমরা তদন্তপূর্বক ঘটনার প্রমাণ পেয়ে মতিঝিলের ডাচ বাংলা ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করি।

পিবিআই প্রধান বলেন, মানবপাচারকারী চক্রের মাধ্যমে একজন ভুক্তভোগী লন্ডন যেতে চেয়েছিলেন ১২ লাখ টাকায়। ওই ভুক্তভোগী যাতে প্রতারিত না হয় সেজন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু সে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে না। কারণ ইতিমধ্যে সে ৮ লাখ টাকা দিয়েছে বাকি ৪ লাখ টাকা না দিলে লন্ডন যেতে পারবে না। প্রতারিত ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে উল্টো আমাদের থেকে সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

বনজ কুমার বলেন, যারা প্রতারিত হন তারা পুলিশের কাছে আসেন না। কারণ তারা মনে করেন পুলিশের কাছে গেলে তারা লন্ডন যেতে পারবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত সর্বস্বান্ত না হন ততক্ষণ পুলিশের কাছে আসেন না তারা।

ঢাকাটাইমস/২৮জানুয়ারি/এসএস/এমআর