শব্দঘর-এর ৮ম জন্মদিনে লেখক-কবি-শিল্পীদের সাহিত্য আড্ডা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২১, ১০:৫৮ | প্রকাশিত : ৩০ জানুয়ারি ২০২১, ০৮:৪২

মনোচিকিৎসক ও কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল সম্পাদিত সাহিত্য সংস্কৃতির মাসিক পত্রিকা শব্দঘরের যাত্রা শুরু ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি। শুরু থেকেই নবীন-প্রবীণ লেখকের সম্মিলনে পত্রিকাটি নজর কেড়েছে সাহিত্যপ্রেমীদের। এমনকি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে গেছে ভারতের কলকাতাসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায়।

শব্দঘর পত্রিকাটি পদার্পণ করল আট বছরে। এ উপলক্ষে প্রখ্যাত কথাশিল্পী হাসনাত আবদুল হাইকে উৎসর্গ করে প্রকাশিত হয়েছে বিশেষ সংখ্যা। তার সাহিত্যচর্চা নিয়ে বিভিন্ন লেখকের বিশ্লেষণধর্মী লেখার সম্মিলনে সাজানো হয়েছে সংখ্যাটি। গতকাল শুক্রবার শব্দঘরের অষ্টম জন্মদিন উদ্্যাপনের আয়োজনে সেই সংখ্যাটির মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। সঙ্গে ছিল লেখক ও শিল্পীদের প্রাণবন্ত আড্ডা। শীতল বিকেলে শাহবাগের পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রে এ আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আনন্দ আড্ডায় অংশ নেন খ্যাতিমান কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন, কথাসাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হোসেন আবদুল মান্নান, আজিজুল ইসলাম মোহিত কামাল প্রমুখ। আলোচনার ফাঁকে শব্দঘরের জন্মদিনের কেক কাটেন অতিথিরা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ড. মিল্টন বিশ্বাস। আলোচনায় অংশ নেন মনোরোগ চিকিৎসক আজিজুল ইসলাম, সালাহউদ্দিন কাওসার, রনজু রাইম প্রমুখ।

আড্ডায় আরও অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের প্রথিতযশা একঝাঁক তরুণ কবি-কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, প্রকাশক ও সুধীজন।

সাহিত্য আড্ডায় হাসনাত আবদুল হাইকে শব্দঘর-এর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা হিসেবে উপহার দেয়া হয়। শব্দঘর-এর ৮ম জন্মদিনে কেক কাটেন উপস্থিত অতিথিবৃন্দ।

শীতের বিকেলে শুক্রবার পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রে মেতেছিল প্রাণের আড্ডা-উচ্ছ্বাসে। লেখক, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং পাঠক-শুভাকাঙ্খিদের উপস্থিতি শীতের বিকেলে আনন্দ ছড়িয়েছিল হৃদয়ে।

সাহিত্য-সংস্কৃতির মাসিক পত্রিকা ‘শব্দঘর’-এর এবারের জন্মদিনের বিশেষ সংখ্যাটি উৎসর্গ হয়েছে কথাসাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাইকে।

শব্দঘরের জন্মদিন উদ্্যাপনের অনুভূতি প্রকাশে সেলিনা হোসেন বলেন, দেশে একটি ভিন্ন ধারার সাহিত্য পরিমণ্ডল তৈরি করেছে শব্দঘর। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি আমি ৩৪ বছর বাংলা একাডেমিতে চাকরি করেছি। এই দীর্ঘ সময়ে শব্দঘরের মতো মানসম্পন্ন সাহিত্য পত্রিকা আমার চোখে পড়েনি। এই পত্রিকায় নবীনের সঙ্গে প্রবীণ লেখকের সমন্বয় ঘটেছে। যেটা অন্য কোন সাহিত্য পত্রিকায় ঘটেনি। এছাড়াও নবীন লেখককদের লেখার পরিসর বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে পত্রিকাটি। সব মিলিয়ে সাহিত্য ভুবনে একটি গৌরবের অধ্যায় সৃষ্টি করেছে শব্দঘর। পত্রিকাটির সম্পাদকের কাছে আমার অনুরোধ, তারা যেন দেশের শক্তিমান লেখকদের সমৃদ্ধ সাহিত্যকে ইংরেজীতে অনুবাদের ব্যবস্থা করেন। তাহলে এদেশের সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্মগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পৌঁছানোর সুযোগ পাবে।

হাসনাত আবদুল হাই বলেন, শব্দঘর শুধুমাত্র সাহিত্য পত্রিকা নয়; এটি একটি প্রতিষ্ঠান। সাহিত্য পত্রিকার কাজ হচ্ছে প্রবীণ লেখকদের বাঁচিয়ে রাখা এবং নবীন লেখকদের জন্ম দেয়া। আর এই দুটি কাজই যথার্থভাবেই করে যাচ্ছে শব্দঘর।

রামেন্দু মজমুদার বলেন, আমি নিজেও থিয়েটার নামের একটি পত্রিকা সম্পাদনা করি। কিন্তু সাহিত্য পত্রিকা শব্দঘর সব সময় আমাকে বিস্মিত করে। মোহিত কামালের মতো তুমুল একজন মানুষ কিভাবে প্রতি মাসে নিয়মিতভাবে পত্রিকাটি প্রকাশ করেন- সেটা আমার কাছে এক বিস্ময়। হাসনাত আবদুল হাইকে নিয়ে প্রকাশিত এবারের সংখ্যাটি অসাধারণ। একজন লেখকের সর্বাঙ্গীণ পরিচয় মিলেছে এই সংখ্যায়। তার সাহিত্যজীবনকে নানাভাবে বিশ্লেষণ করেছেন অন্য লেখকরা। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, জীবনীনির্ভর উপন্যাস কিংবা ভ্রমণকাহিনী রচনায় সিদ্ধহস্ত এক সাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই। তার লেখা ‘নভেরা’সহ অনেক বই পড়েই মুগ্ধ হয়েছি। অব্যাহত থাকুক তার এই সৃজনশীল জীবন।

হোসেন আবদুল মান্নান বলেন, হাসনাত আবদুল হাই বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষাতেই অনন্য সাহিত্যকর্ম করে চলেছেন। নতুন প্রজন্মকে তিনি শুদ্ধ করে মাতৃভাষা শিখতে প্রেরণা দেন।

শব্দঘরের সম্পাদক মোহিত কামাল বলেন, শৈশব থেকেই পত্রিকা সম্পাদনার স্বপ্ন দেখতাম। রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই সম্পাদিত ‘কচি ও কাঁচা’ কিংবা নজরুল সম্পাদিত ‘ধূমকেতু’ দেখে সম্পাদনার সেই স্বপ্নটা জেগে উঠেছিল। তাই সম্পাদকের সেই সত্তাটা লুকায়িত ছিল। ইচ্ছে ছিল ছিল এমন একটি পত্রিকা প্রকাশ করব যেটি পাঠককে আকৃষ্ট করার পাশাপাশি একসময় গবেষণারও বিষয়বস্তু হবে। এরপর শব্দঘর প্রকাশনার মাধ্যমে পূরণ হলো সেই স্বপ্ন। বর্তমানে দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে এই পত্রিকার পাঠক। সব মিলিয়ে পত্রিকাটির অষ্টম দিনে এসে অসাধারণ এক ভাললাগা অনুভব করছি। অন্য বক্তারা বলেন, দেশের সাহিত্য বিকাশে ভূমিকা রেখেছে শব্দঘর। সেই সঙ্গে সৃষ্টি করেছে নতুন লেখক।

শব্দঘর সম্পাদক কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল তাঁর বক্তব্যে লেখক এবং শব্দঘর-এর সঙ্গে যাঁরা নানাভাবে যুক্ত, তাঁদের ধন্যবাদ জানান। শব্দঘর-এর প্রকাশনা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। অনুষ্ঠানের প্রান্তে অতিথিদের ধন্যবাদ জানান।

(ঢাকাটাইমস/৩০জানুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :