করোনা ভ্যাকসিন ও কিছু কথা

ডা. নুসরাত সুলতানা
 | প্রকাশিত : ৩১ জানুয়ারি ২০২১, ১৫:১৫

কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে এস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনটি কোভিশিল্ড নামে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে প্রয়োগ করা শুরু হয়ে গেছে। ভ্যাকসিনটির বিষয়ে কয়েকটি তথ্য:

এটা কি ধরনের ভ্যাকসিন?

এটি একটি Recombinant viral vector vaccine. শিম্পাঞ্জির Adenovirus এর দুর্বল রূপকে এখানে বাহক বা ভেকটর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, যার মানুষের শরীরে সংখ্যাবৃদ্ধি ও সংক্রমণের ক্ষমতা নেই এবং এতে SARS-COV-2 ভাইরাসের যে জিনটি স্পাইক প্রোটিনকে encode করে তার Full length প্রবেশ করানো হয়েছে। সাথে আছে Tissue plasminogen activator leader sequence. Tissue plasminogen activator রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য দায়ী এন্টিবডি সৃষ্টিকে ত্বরান্বিত করে।

কীভাবে এত দ্রুত নতুন ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব হলো?

SARS-COV-2 আসলে নতুন ভাইরাস নয়, পুরোনো ভাইরাসের নতুন রূপ। ২০০২-২০০৩ সালের সার্স ভাইরাসের সাথে এর ৭৯.৫ শতাংশ মিল রয়েছে। ফলে ভাইরাসটি নিয়ে গবেষণা বহু আগ থেকেই চলছে। তাছাড়া প্রযুক্তি এখন অনেক উন্নত। আগে কয়েক ধাপে জেনোম সিকুয়েন্সিং করা লাগতো বলে তা অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার ছিল। এখন Next generation sequencing-এর মাধ্যমে খুব দ্রুত সিকুয়েন্সিং সম্ভব।

ভ্যাকসিনটি কতদিন ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দিতে সক্ষম হবে?

গবেষণায় দেখা গেছে, এক বছরের মতো।

ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা কেমন?

প্রথমে অর্ধেক ডোজ এবং এক মাস পর পূর্ণ ডোজ দিয়ে দেখা গেছে এর Sensitivity ৯০ শতাংশ এবং দুই ডোজ পূর্ণ ডোজ দিয়ে ৬২ শতাংশ Sensitivity পাওয়া গেছে। তবে এও মনে রাখতে হবে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা জাতি, গোত্র, পরিবেশ, ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ইত্যাদির ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। হেপাটাইটিস বি এর বিরুদ্ধে টিকাও অনেকের ক্ষেত্রে কার্যকর হয় না।

ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে কি?

মৃদু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যেমন জ্বর, শরীর ব্যথা হতে পারে। তবে মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কম।

যাদের এলার্জিজনিত সমস্যা আছে, তাদের কি ভ্যাকসিন নেয়া উচিত?

এলার্জিজনিত সমস্যা সাধারণত নির্দিষ্ট এলার্জেনের মাধ্যমে হয়। একেকজন মানুষ একেকটি বস্তুতে এলার্জিক। কারো নির্দিষ্ট খাদ্যে, কারো বা নির্দিষ্ট ওষুধে বা কারো ঠান্ডা এলার্জি আছে। তাই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ প্রয়োগের আগে বোঝার উপায় নেই কারো ভ্যাকসিনে এলার্জিক রিয়েকশন হবে কি না। যে কোনো এলার্জেনের প্রথমে এক্সপোজড হলে মৃদু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যেমন চুলকানি, শরীরে র‍্যাশ হতে পারে। এক্ষেত্রে পরবর্তী ডোজ দেয়ার সিদ্ধান্ত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিতে হবে।

ভ্যাকসিন দিলেও কি মাস্ক পরতে হবে?

হ্যাঁ, ভ্যাকসিন দিলেও মাস্ক পরতে হবে; কারণ এন্টিবডি তৈরি হতে তো সময় লাগবে। তাছাড়া ভ্যাকসিন দিলে যে ইনফেকশন ছড়াতে পারবে না এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

কারা ভ্যাকসিন নিতে পারবেন না?

ন্যাশনাল গাইডলাইন অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়েরা প্রাথমিকভাবে ভ্যাকসিন দিতে পারবে না। তবে, সিডিসির তথ্য অনুযায়ী বিশেষ গ্রুপের দুগ্ধদানকারী মা যাদের জীবাণুতে নিয়মিত এক্সপোজড হতে হচ্ছে যেমন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, তারা ভ্যাকসিন নিতে পারবেন।

বাংলাদেশে বেশ কিছুদিন ধরে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে আছে এবং ভ্যাকসিনও চলে এসেছে। তাই ন্যূনতম মার্চ মাস পর্যন্ত পরবর্তী ঢেউকে এড়ানোর জন্য আমাদের সতর্ক থাকা উচিত।

তাই দয়া করা মাস্ক পরুন আর নিয়মিত নিয়ম মেনে সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া বজায় রাখুন। ভ্যাকসিন নিয়ে আতংকিত হওয়ার কিছু নাই।May Allah Bless Us All

লেখক: চিকিৎসক, সহকারী অধ্যাপক, ভাইরোলজী বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

ঢাকাটাইমস/৩১জানুয়ারি/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :