প্রকৃতির কবিতা : মানুষের কবিতা
তোমার জন্যে আবার কিসের কবিতা!
তুমিতো নিজেই কবিতার কলি;
তোমার চলার ঢংয়ে,ঠোঁটের কম্পনে,
চাহনির ঘায়েলি খঞ্জরে জখমি হৃদয়
কখন কাকে একান্তে কবিয়াল বানায়; কে জানে!
চাঁদকে নিয়ে আবার কিসের কবিতা!
রূপোলি ডানার জ্যোৎস্না পরীরা নিজেরাই কবি।
স্নিগ্ধ আবীর রেখায় কবিতা ছড়িয়ে দেয় অকাব্যের চরাচরে।
ভরা পূর্ণিমা রাতে জ্যোৎস্না-কবিতার মসলিন শাড়ি পরে
ঢলো ঢলো যৌবনের ঢেউয়ে ঢেউয়ে দোল খেয়ে
বউ সেজে শুয়ে থাকে যমুনার জল।
ও কিন্তু সেই রোজেনা না;
‘সারা অঙ্গে ঢেউ’ যার ‘তবু মেয়ে কবিতা বোঝে না’।
ফুলকে নিয়ে আবার কিসের কবিতা!
পাপড়ি মেলতে মেলতে কুঁড়িগুলো কবিতা লেখে
মুগ্ধ বাহারে, সুষম আকারে, শোভা ও সৌরভে।
প্রজাপতি, ভ্রমর, মৌমাছি
গুনগুন সুরে কেবল আওড়াতে থাকে কবিতারই কলি।
পাখিকে নিয়ে আবার কিসের কবিতা!
ওদের পাখার ছন্দদোলায় কেবলি কবিতা,
কলরবে অনিবার কাব্যেরই রসালাপ।
নদীকে নিয়ে আবার কিসের কবিতা!
অধুনার তরঙ্গ দোলায় ওর বুকে বাজতে থাকে
অতীত আর অনাগত কবিতার কুলুকুলু।
পত্র-পল্লব, বন-বনানী নিয়ে আবার কিসের কবিতা!
সবুজ পাতার ঝিরিঝিরি নিজেরাই কবি;
হাওয়ার কালিতে কবিতা লিখে
ওরা ভাবের ভাষায় কানে কানে কথা কয়।
বৃষ্টিকে নিয়ে আবার কিসের কবিতা!
বৃষ্টিতো নিজেই কবিতা হয়ে ঝরে,
হিম হিম আনন্দে যদিও ঝরতে থাকে
ভেজা ভেজা তাল লয় ছন্দে
তবুও বুকে বুকে ছড়িয়ে দেয় আলিঙ্গনের আকুলতা
উস্কে দেয় উষ্ণতার টনটনে ব্যগ্রতা।
ঝর্ণাকে নিয়ে আবার কী আছে কবিতা লেখার!
পাহাড়ের চূড়া থেকে কলো-কল্লোলে বয়ে বয়ে
বনের উদাসী মনকে মাতিয়ে তোলে কবিতার কলতান,
পেখমতোলা ময়ূরের নাচ, জোনাকির সোনা আলো,
ঝি ঝি পোকার ডাকাডাকি, বন মোরগের কুক্কুরুত কুক;
নিসর্গের কাব্য শৈলীর আছে এমন এক সুদীর্ঘ তালিকা।
কাগজের খসখসে বুকে ভাবের রস ঢেলে দিলেই কি
ওরা কবিতা হয়ে কথা কয়?
কলমতো কেবল কাগজের ক্যানভাসে
কালির সরল বা বক্র রেখা, অথবা
মাত্রা বৃত্ত ব্যাসার্ধ কিংবা ত্রিভুজের আঁকাআঁকি।
প্রকৃতি নিজেই যখন কাঁধে তুলে নেয়
এতো এতো কবিতার ভার,
কবিদের কী দরকার গাদা গাদা কবিতা লিখার!