পাড়ের মানুষের আঘাত থামছেই না খালের বুকে

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:৫২

ঢাকার বুকে অবশিষ্ট থাকা ৩৯টির মধ্যে তাদের আওতাভূক্ত ২৬টি খাল উদ্ধারে দুই সিটি সক্রিয় হলেও এসব খালের পাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা নেই। পরিষ্কার করে খালগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানোর চেষ্টায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্জ্য-আবর্জনা। বর্ষাকালে পানি চলাচলে বাধা পেয়ে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর মানুষেরা ভোগান্তি পোহালেও তাদেরই ফেলা ময়লা-আবর্জনার আঘাত থামছে না খালগুলোর বুকে।

এ অবস্থায় সিটি কর্তৃপক্ষের সক্রিয়তার পাশাপাশি নাগরিকদের সচেতনতা না থাকলে খাল উদ্ধার কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ থাকবে বলেই নগর বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। খাল উদ্ধারে দুই সিটির উদ্যোগ আলোর মুখ দেখবে না বলেও তাদের আশঙ্কা।

রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকায় বর্তমানে ৩৯টি খাল রয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি খাল সমপ্রতি ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে বুঝে পেয়েছে সিটি করপোরেশন। বাকি ১৩টি খাল গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় রয়েছে।

ঢাকায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে বেদখলের কারণে খালগুলোতে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ অনেকদিনের। আর খাল দখলে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অভিযোগও উঠে বিভিন্ন সময়ে। মাঝেমধ্যে উচ্ছদ অভিযান চালানো হলেও কয়েকদিন পর আবার দখলদাররা ফিরে আসে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাভূক্ত এলাকার বেশ কয়েকটি খাল সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্জ্য আবর্জনায় ভরাট হয়ে পড়ায় পানির প্রবাহ নেই বললেই চলে। শীত মৌসুমে নাগরিকদের ভোগান্তি না থাকলেও পানি চলাচল বাধা পেয়ে বর্ষার বৃষ্টি কিছুটা দীর্ঘ হলেই খালের পানি চলে আসে সড়কে।

এদিকে খালের পাড় এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দাদের বেশিরভাগই সিটি করপোরেশনকে ময়লা দেন না। তারা দৈনন্দিন গৃহস্থালির ময়লা ফেলছেন খালে। ঘরের অব্যবহৃত আসবাবপত্রের শেষ ঠিকানাও হয়ে উঠেছে খাল।

নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, জনগনের সচেতনতার অভাবে এমনটা ঘটে চলেছে। তবে খালকে পুনরায় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করতে চায় না সিটি করপোরেশন। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের দিকে যেতে চায় উত্তর সিটি।

নানান প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে ২০২১ সালের প্রথম দিন ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশন খালের দায়িত্ব পেয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। দায়িত্ব পেয়েই খাল পরিষ্কারে নামে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। নগর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলতায় খাল থেকে তোলা হচ্ছে বর্জ্য। কিন্তু বর্জ্য পরিষ্কারের পরপরই আবার ময়লার ভাগাড় হয়ে উঠছে খালগুলো।

চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে মোহাম্মদপুর এলাকার রামচন্দ্রপুর খালের কয়েকটি অংশের বর্জ্য উত্তোলন শুরু করে ডিএনসিসি। প্রথমে যন্ত্র ব্যবহার ও পরে খালে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নামিয়ে দুই স্তরে বর্জ্য উত্তোলন করা হয়। খাল থেকে উঠে আসে গৃহস্থালির বর্জ্য, ফেলে দেয়া আসভাবপত্র, বালিশ, কাঁথা, পলিথিন, কর্কসিট, ভাঙারির দোকান থেকে ফেলে দেয়া বিপুল পরিমাণ বর্জ্য।

তবে শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, পরিষ্কারের কিছুদিন পরই আবারও খালে ময়লা জমতে শুরু করেছে। খালের বিভিন্ন স্থানে এরইমধ্যে ময়লা জমে ভাগাড় হয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, খালের পাড়ের বসতবাড়ি থেকে খালে ময়লা ফেলা হচ্ছে। পাশাপাশি খাল পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা দোকানগুলোর পলিথিন, বিভিন্ন দোকানের বর্জ্য আবর্জনা ফেলা হয় খালে। এসব ঘটনা প্রতিদিনের।

খালে বর্জ্য জমার কারণ জানতে চাইলে রামচন্দ্রপুর খাল সংলগ্ন মোহাম্মদীয়া হাউজিং এলাকার বাসিন্দা লিটন হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই খালে ময়লা জমার ঘটনা নতুন নয়। খালের আশেপাশে যারা থাকে, তারাই জানালা দিয়ে, বারান্দা দিয়ে খালে ময়লা ছুড়ে মারে।’

নবোদয় হাউজিং এলাকার বাসিন্দা রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘দোকানদারদের মধ্যে খুব কম দোকানদারই সিটি করপোরেশনের গাড়িতে ময়লা দেয়। তারা পলিথিনে ময়লা ভরে রাখে। এক সময় গিয়ে খালে ফেলে দিয়ে আসে। এমনকি ঘরের পুরনো জামিম, তোষক এগুলো ময়লার গাড়িতে দিতে হলে বাড়তি টাকা দিতে হয়, তাই এগুলোও লোকজন খালেই ফেলে।’

স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের ভাষ্য, খালে ময়লা ফেললে কোনো বাঁধার মুখে পড়তে হয় না। এমনকি কোনো সতর্কবার্তাও লেখা নেই খালের পাড়ে। ফলে স্থানীয়রা বেশ আয়েশের সঙ্গেই খালকে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করে চলেছেন। তাদের বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া গেছে মোহাম্মদীয়া হাউজিং লিমিটেড, সোসাইটি ও নবোদয় হাউজিং এলাকায়।

টানা এক সপ্তাহ সরেজমিনে এ প্রতিবেদক দেখতে পান, মোহাম্মদীয়া হাউজিং লিমিটেড ৫ নম্বর সড়কের শেষ মাথার বস্তিতে ২৬টি ঘর রয়েছে। যার একটি ঘর থেকেও সিটি করপোরেশনের গাড়িতে ময়লা দেয়ার নজির নেই। একই অবস্থা লিমিটেড ৬ ও ৭ নম্বর সড়কের খাল পাড়ের প্রায় ২০টি বাড়ির শতাধিক পরিবার। এসব বাড়ির প্রায় শতাধিক পরিবার খালে ময়লা ফেলছেন। এ এলাকার ময়লার বিল উত্তোলনকারী মো. আলমও তাদের কাছে ময়লা না দিয়ে লোকজন খালে ময়লা ফেলেন বলে জানান।

মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ময়লার বিল উত্তোলনকারী শামসউদ্দিন ঢাকা টাইমসকে জানান, এলাকায় সোসাইটি ১১ নম্বর বস্তিসহ প্রায় ১০টি বাড়ি থেকে সিটি করপোরেশনকে ময়লা দেয়া হয় না। তাদের বাসাবাড়ির সমস্ত ময়লা খালেই ফেলা হয়।

বেড়িবাঁধ সাত মসজিদ হাউজিং এলাকা অংশের রামচন্দ্রপুর খালে ময়লা ফেলা হচ্ছে। খালের এ অংশ দেখলে মনে হবে, খাল যেন ময়লা ফেলারই জায়গা। খাল পাড়ে গড়ে ওঠা সাদিক এগ্রো নামে একটি এগ্রো প্রতিষ্ঠানের সকল গোবর যাচ্ছে খালে। ফলে এখানে খালের চিহ্ন প্রায় মুছে যেতে বসেছে। পাশাপাশি সড়কের শেষ দিকে খালের ওপর স্থানীয়দের ময়লা ফেলার উপযোগী একটি ভাগাড়ই তৈরি হয়েছে। এছাড়া মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে খালের একটি বড় অংশ।

ঢাকার সকল খাল নিয়ে কাজ করেছে নদী ও খাল বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার-আরডিআরসি। সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ এজাজ ঢাকা টাইমসকে জানান, খাতা কলমে এসব খালের যে আকার আয়তন আছে বাস্তবে তেমনটি নেই। খাল পাড়ের বাসিন্দারা দিনের পর দিন খালে ময়লা ফেলে চলেছেন। সচেতনতার অভাবে খাল ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘খালের পাড়গুলো এমনভাবে রয়েছে যে, স্থানীয়রা খুব সহজেই খালে ময়লা ফেলার সুযোগ পাচ্ছে। খালের পাড়ে উঁচু প্রাচীর তৈরি করতে হবে। যেন মানুষ খালে ময়লা ফেলতে না পারে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। কার্যকরি উদ্যোগ না নিলে খালে ময়লা ফেলা বন্ধ হবে না।’

রামচন্দ্রপুর খাল সিটি করপোরেশনের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা। খালে ময়লা ফেলা বন্ধে কার্যকরি উদ্যোগ নেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। জনগন সচেতন না হলে শুধু চোর-পুলিশ করে পাহারা দিয়ে কতক্ষণ রাখা যাবে? খালের মধ্যে তারা জাজিম ফেলে দেয়, তোষক ফেলে দেয়, পুরনো খাট, ট্রাংক ফেলে দিচ্ছে। এগুলো তো দুর্ভাগ্যজনক।’

জনগনকে সচেতন করতে সিটি করপোরেশন কাজ করছে জানিয়ে উত্তর সিটির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রয়োজনে সমস্যা সমাধানে আইনের প্রয়োগ করা হবে। ভ্রাম্যমান আদালত চালিয়ে আইনের প্রয়োগ করার জন্য আমরা বলেছি। পাশাপাশি মাইকিং করে, স্থানীয়ভাবে সচেতনতা কার্যক্রমের চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে শিগগির একটা গণবিজ্ঞপ্তি জারি করব।’

ঢাকাটাইমস/০২ফেব্রুয়ারি/কারই/ডিএম/

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

​​​​​​​যাত্রীদের নিরাপত্তায় কমলাপুর স্টেশনে র‍্যাবের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ

ছুটির দিনে রাজধানীর বিপণি কেন্দ্রগুলোতে উপচেপড়া ভিড়

বিজিবিতে আযান ও ক্বেরাত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ

পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের বিচার

এক হাতে ইফতারের পানির বোতল, আরেক হাতে যান চলাচলের ইশারা ডিসির

এলিফ্যান্ট রোডে বাসা থেকে শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

ঢাকাস্থ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কল্যাণ সমিতির ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

অসুস্থতার যন্ত্রণা সইতে না পেরে ছুরিকাঘাতে রিকশাচালকের আত্মহত্যা

রাজধানীর ধোলাইপাড়ে পুলিশ কনস্টেবলের স্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’

বুধবার থেকে এক ঘণ্টা বাড়ছে মেট্রোরেল চলাচলের সময়

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :