‘পারস্পরিক সম্মতির’ আইনি রক্ষাকবচ সমাজে ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি করবে!

ডক্টর তুহিন মালিক
 | প্রকাশিত : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:২৮

বিবাহ পূর্ববর্তী শারীরিক সম্পর্ক। কিংবা বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক। আইনে ‘পারস্পরিক সম্মতির’ প্রমাণ দিতে পারলেই যখন কোনো অপরাধ নয় তখন এই পারস্পরিক সম্মতির প্রমাণটা কে দিবে? আর ভিকটিম যখন হত্যার শিকার হন তখন কি ঘাতকের ‘পারস্পরিক সম্মতির’ দাবিই তার জন্য আইনি রক্ষাকবচ হবে? এই কুকর্মগুলো যেহেতু নীরবে নিভৃতেই ঘটে, তাই ঘাতকের ‘পারস্পরিক সম্মতির’ এহেন আইনি রক্ষাকবচ সমাজে ভয়ংকর এক অবস্থার সৃষ্টি করবে! আর ঘাতক তখন নিজেকে রক্ষার্থে ভিকটিমকে হত্যা করেই নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করবে। তাই ‘পারস্পরিক সম্মতির’ এই নোংরা ডকট্রিন দিয়ে এইসব কুকর্মের বৈধতাদানের সর্বনাশী আইনি রক্ষাকবচ নিয়ে এখনই ভাবতে হবে।

আমরা কি বুঝতে পারছি? এসব নোংরা অধঃপতিত কুকর্মকে বৈধতা দিতে গিয়ে আমরা আমাদের পরিবার ও সমাজের ললাটে কি এক ভয়ংকর অশ্লীলতার তীলক লাগিয়ে দিচ্ছি। সামাজিক, নৈতিক ও ধর্মীয় অনুশাসন থেকে ছিটকে পড়া এই তথাকথিত আধুনিক সমাজব্যবস্থা কি আমাদের নিজেদের সৃষ্ট নয়?

আমরা কি ভুলেই বসেছি? জাগতিক আইনে ‘পারস্পরিক সম্মতির’ প্রমাণ দিতে পারলেই সব কুকর্ম বৈধ হয়ে গেলেও সামনের কঠিনতম দিনে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে ভয়াবহ এক বিপদ।

আল্লাহ তা'আলা বলেন: ‘ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকরকরণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়। যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক এবং মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।’ [সূরা নূর-২]

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: ‘অবিবাহিত নারী ও অবিবাহিত পুরুষ ব্যভিচার করলে শাস্তি: একশ বেত্রাঘাত ও এক বছরেরর জন্য নির্বাসন। বিবাহিত নারী বিবাহিত পুরুষের সাথে ব্যভিচার করলে শাস্তি একশ বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপে হত্যা।’ [সহিহ মুসলিম-৩১৯৯]

‘জিনাকারীরা উলঙ্গ অবস্থায় এমন এক চুলার মধ্যে থাকবে, যার অগ্রভাগ হবে অত্যন্ত সংকীর্ণ আর নিম্নভাগ হবে প্রশস্ত, উহার তলদেশে অগ্নি প্রজ্বলিত থাকবে, তাদেরকে তাতে দগ্ধ করা হবে। তারা মাঝেমধ্যে সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার কাছাকাছি অবস্থায় পৌঁছে যাবে; অত:পর আগুন যখন স্তিমিত হয়ে যাবে তখন তাতে তারা আবার ফিরে যাবে। আর তাদের সাথে এই আচরণ কেয়ামত পর্যন্ত করা হবে।’ [বুখারী-৭০৪৭]

আর আমরা যারা অভিভাবক। আমরা যেন নিজেদের সন্তানের ওপর সব দায়ভার ছেড়ে না দেই। কঠিন জবাবদিহি রয়েছে আমাদের জন্যেও। আর হিংস্র পশুদের হাত থেকে নিজেদের সন্তানদের বাঁচানোটাই হচ্ছে এখনকার বড় এক চ্যালেঞ্জ।

আল্লাহপাক বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও স্বীয় পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।’ (সুরা তাহরীম-৬)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সাবধান তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কিয়ামতের দিন তোমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। সুতরাং শাসক জনগণের দায়িত্বশীল। কিয়ামতের দিন তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, তাকে পরিবারের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। স্ত্রী তার স্বামীর সংসার এবং সন্তানের ওপর দায়িত্বশীল। কিয়ামতের দিন তাকে এ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। এমনকি দাস-দাসীও তার মালিকের সম্পদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। সেইদিন তাকেও তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। অতএব মনে রেখো, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, আর তোমাদের প্রত্যেককেই কিয়ামতের দিন এই দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে’।[বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫]

পরম করুণাময় আমাদেরকে সঠিক বুঝ দেন। আমাদের সন্তানদেরকে হেফাজত করুন।

লেখক: আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ

ঢাকাটাইমস/০৩ফেব্রুয়ারি/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :