প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা এবং ব্যাংক ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ

মো. নাহিদুজ্জামান খান
 | প্রকাশিত : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:২৪

একটা সময় ছিল যখন যেকোনো ধরনের ব্যাংকিং সেবা পেতে মানুষকে সশরীরে ব্যাংকে যাওয়ার বিকল্প ছিল না। সে সময়ে মূলত কোনো একটি ব্যাংকের একটি নির্দিষ্ট শাখায় টাকা জমা, উত্তোলন বা ঋণ প্রদানের মতো কিছু সেবার মধ্যে সীমিত ছিল ব্যাংকের কার্যক্রম। প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে ব্যাংকিং সেবার ধরন যেমন বদলেছে তেমনি বেড়েছে এর পরিধি। সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সময়ে ব্যাংক খাতে বেশ কিছু পণ্য বা সেবা জনপ্রিয় হয়েছে। যেমন অনলাইন ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কার্ড সেবা, এসএমএস সার্ভিস, অটোমেটেড ক্লিয়ারিং, এজেন্ট ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (EFT), আরটিজিএস (RTGS), মোবাইল অ্যাপ ইত্যাদি। এসব সেবা ব্যবহারের মাধ্যমে এখন খুব সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে এমনকি এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ পাঠানো, মোবাইল টপ-আপ, বিভিন্ন ধরনের বিল পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে। এর মধ্যে এটিএম কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং বা মোবাইলে অ্যাপের মাধ্যমে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে। তবে মজার ব্যাপার হলো, বর্তমানে বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন আর্থিক খাত বর্তমান অবস্থার তুলনায় আগামী এক দশকে আরও পরিবর্তিত হবে যা বিগত কয়েক দশকে ঘটেনি। বর্তমানের আলোচিত কিছু প্রযুক্তি যেমন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিন লার্নিং, ক্লাউড কম্পিউটিং, ব্লকচেইন প্রযুক্তি প্রভৃতির কারণে এমনটি ভাবা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ ব্যাংক ব্যবস্থার বেশিরভাগ সেবা হবে অনলাইনভিত্তিক ২৪/৭ এবং তাৎক্ষণিক। এছাড়া ব্যাংকগুলো প্রতিটি গ্রাহককে চাহিদা অনুযায়ী কাস্টমাইজড বা বিশেষায়িত সেবা দিতে সক্ষম হবে। এসব কিছু বিবেচনায় বর্তমান ব্যাংকগুলোর জন্য ভবিষ্যতে অত্যন্ত শক্ত প্রতিকূলতা অপেক্ষা করছে। সর্বশেষ সুবিধাসম্বলিত গ্রাহকবান্ধব মোবাইল অ্যাপ না থাকলে সেই ব্যাংকের বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ভবিষ্যতে অস্তিত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন হবে। সময়ের সাথে নিজেকে এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হলে একটি ব্যাংকের আজকে যা সম্পদ কালকে তা বোঝা হিসেবে দেখা দিতে পারে।

একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টা আরো পরিষ্কার হবে। চীনে ২০১৫ সালে আলিবাবা গ্রুপ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ডিজিটাল বা নিও ব্যাংক হলো ‘মাইব্যাংক’ যারা এসএমই পর্যায়ে ঋণ প্রদান করে থাকে। তারা স্মার্টফোনের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করে। এরপর মাত্র ১ মিনিটের মধ্যে বেশকিছু চলক বিশ্লেষণ এবং স্বয়ংক্রিয় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ঋণ অনুমোদন দেয় এবং প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহকের একাউন্টে অর্থ চলে যায়। এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে কোনো মানব সম্পদের ব্যবহার করা হয় না। আর এই ব্যবস্থায় মন্দ ঋণের হার ১ শতাংশের কিছু বেশি। মাইব্যাংক চীনের অর্থব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছে এবং এ ব্যাপারে অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ভাবতে বাধ্য করছে। বর্তমান ডিজিটাল বিপ্লব তথা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মূলমন্ত্র হচ্ছে অটোমেশন। আর্থিক খাত এই ব্যবস্থার বাইরে নয়। স্বাভাবিকভাবে গ্রাহক সেদিকে ঝুঁকবে যেখানে স্বয়ংক্রিয় বা তাৎক্ষণিক সেবা পাওয়া যাবে। সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (রকেট, বিকাশ, নগদ ইত্যাদি) সেবা প্রদানকারী বিভিন্ন ফিনটেক প্রতিষ্ঠানের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি এর প্রমাণ দেয় । ফলে ব্যাংকগুলোকে এখন ফিনটেক প্রতিষ্ঠানের সাথেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে। তবে ব্যাংক এবং ফিনটেক প্রতিষ্ঠান একে অপরের সহযোগী হিসেবে কার্যক্রম না চালালে ভবিষ্যতে উভয়ের জন্যই টিকে থাকা কঠিন হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে পরিবর্তন যে মাধ্যমেই আসুক আর যেভাবেই আসুক না কেন, এখানে সবচেয়ে লাভবান পক্ষ হলো গ্রাহক। এটা অনুমেয় যে, গ্রাহকগণ ভবিষ্যতে আরো স্বাচ্ছন্দ্যময় ব্যাংকিং সেবা উপভোগ করবেন। পরিশেষে বলা যায়, ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোর ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।

লেখক: এক্সিকিউটিভ অফিসার, ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :