​ভালোবাসা, প্রেম ও ঘৃণা

প্রকাশ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৪:১২ | আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:০১

মো. জাহিদ হোসেন

১. প্রথম দর্শনেই দুটি প্রাণী পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ কিংবা বিকর্ষণের মুখোমুখি হতে পারে অথবা থাকতে পারে স্বাভাবিক। আকর্ষিত হওয়ার পর উভয়ের মধ্যে অন্তত একজন অস্থির হয়ে ওঠে নিজের ভালোলাগা এবং ভালোবাসার কথা আকারে-ইঙ্গিতে কিংবা সরাসরি অন্যজনকে জানাবার জন্য। তবে প্রথমে ভালো না লাগলেও সময়ের সাথে সাথে কারো প্রতি কারো ভালোবাসা বৃদ্ধি পেতে পারে। বিকর্ষণের মতো ঘটনার উদ্ভব হলে প্রথমে এড়িয়ে চলা, আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেওয়া অথবা শেষপর্যন্ত প্রকাশ্যে বলা তোমাকে আমি পছন্দ করি না।

২.  একদিন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি বলে যাকে কাছে টানা হয়, তাকেই আবার মনে-প্রাণে ঘৃণা করে দূরে সরিয়ে দেওয়া যায়। ভালোবাসা ও ঘৃণা পরস্পর আগে-পিছে চলাচল করে। ভালোবাসা একটি  স্বতঃস্ফূর্ত  মানসিক প্রকাশ। এটি কোনো একটি ইচ্ছাপূরণের আকাঙ্ক্ষার মতোই। এটা অনেকটা কারো মনে কারো জন্য জেগে ওঠা অদম্য বাসনার মতো। ভালোবাসায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে যুক্তি, বুদ্ধি, বিবেচনা কাজ করে না; সেখানে আবেগই হয়ে ওঠে মুখ্য। প্রাচীন গ্রীকরা ভালোবাসাকে মনে করত দেবতাদের পাগলামো। মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, এটি হলো অন্যের সাথে যুক্ত হওয়ার তীব্র আবেগী বাসনা। আসলে প্রেম-ভালোবাসার স্বরূপটা কি? শেকসপীয়ারের মতে, ভালোবাসা  অন্ধ এবং প্রেমিক-প্রেমিকারা দেখতে পায় না। অ্যারিস্টেটল বলেছেন, প্রেম হলো একটি অভিন্ন  একক সত্তা, যা দুটি অন্তরে বাস করে।

৩.  কারো মতে মস্তিষ্কে প্রেমের উৎপত্তি হয় দৈহিক মিলনের আকাঙ্ক্ষা থেকে। তবে প্রেম ছাড়াও দৈহিক মিলন এবং সন্তান উৎপাদন সংঘটিত হতে পারে। কারো মনে কারো জন্য দুর্বলতা বা একান্তভাবে তাকে পাওয়ার চরম আকাঙ্ক্ষাকে কেউ কেউ ভালোবাসা বলেছেন। কারো মতে বংশধারা বৃদ্ধি নয়, শুধু ভালোলাগার কারণেই কখনো পরস্পর পরস্পরকে ভালোবেসে দীর্ঘদিন কাটিয়ে দিতে পারে। সেখানে দৈহিক বা বস্তুগত প্রাপ্তি নয়, কেবল মনের আনন্দেই দুটি প্রাণী একাত্ম হয়ে যাপন করতে পারে একটি জীবন। এমনকি কেউ কাউকে না দেখেও শুধু বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেও প্রেমে পড়তে পারে। ভালোবাসা একান্তই মনের ব্যাপার। সেখানে মস্তিষ্ক ততটা কার্যকর নয়। ভালোবাসার দোসরটি মরে যাবার পরও শুধু তার স্মৃতিকে মনের মাঝে ধারণ করে দীর্ঘ একটি সময় অতিবাহিত করে দিতে পারে কেউ।  এখানে আকর্ষণের বিষয়টি প্রধান। এই আকর্ষণের কারণে মানুষের প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হয়ে থাকে। তাকে আমরা স্বতঃস্ফূর্ত ভালোবাসা, আসক্তির ভালোবাসা, নিবিড় ভালোবাসা অথবা পাগলের মতো ভালোবাসাÑ যে নামেই অভিহিত করি না কেন, ভালোবাসার সাথে সাথে প্রেমের সূত্রপাত ঘটে এবং তা মানুষকে আবেগতাড়িত করে আচার আচরণে পরিবর্তন এনে দেয়। ভালোলাগা, ভালোবাসা কোনোরূপ বিচার-বিবেচনা কিংবা বিবেক দ্বারা পরিচালিত হয় না।

৪. ভালোবাসা সকলের মাঝেই রয়েছে। সকলের অন্তরেই ভালোবাসা থাকে; কেউ দিতে পারে, কেউ পারে না। জন্মের পর থেকে আমরা ভালোবাসা পেয়ে থাকি; দিয়ে থাকি এবং বয়স বাড়ার পর থেকে ভালোবাসা দেওয়া-নেওয়ার মাধ্যমে বেড়ে উঠি। ভালোবাসা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একটি অনিয়ন্ত্রিত প্রকাশ। কখন যে কি জিনিস কার ভালো লেগে যাবে, কাকে ভালো লাগবে তা বলা যায় না। প্রথম পলকেই কাউকে ভালো লেগে যেতে পারে। ভালোবাসা একটি প্রাকৃতিক শক্তি। প্রকৃতির বিভিন্ন জিনিস ও ঘটনার ওপর যেমন আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না, ভালোবাসাও তেমনি স্বাধীন। হঠাৎ ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা ও প্রেমের সূত্রপাত হওয়ার পর একসময়ে বিবেক-বুদ্ধি জাগ্রত হয়ে ওঠে। প্রেমিকের মনে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। শেষ পর্যন্ত সামাজিক বাস্তবতা, পারিপার্শি^ক অবস্থা, অর্থনীতি, ধর্মীয় বিধিনিষেধ, নিরাপত্তা ইত্যাদির সাথে ভালোবাসার সংঘর্ষ শুরু হয়। ভালোবাসার সাথে দায়িত্ববোধের প্রশ্নটি এগিয়ে আসে। দায়িত্বহীন ভালোবাসা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আত্মঘাতী রূপ ধারণ করে। কম-বেশি সকলের জীবনেই প্রেম একটি কাঙ্ক্ষিত বিষয়। প্রেম যে কেউ কামনা করতে পারে, তবে কখন, কোথায়, কীভাবে সে প্রকাশিত হবে তা বলা যায় না। আমরা প্রেমের কাছে সমর্পণ করতে পারি অথবা এড়িয়ে চলতে পারি। কিন্তু যখন সে আসবে, তখন ঝড়ের মতোই আসবে। হঠাৎ একদিন দেখা যায়, যাকে কোনোদিন পছন্দ করিনি; তাকেই ভালোবাসতে শুরু করলাম। প্রেম কোনো সংকেত দিয়ে আসে না। প্রেম ইচ্ছা করে আদায় করা যায় না; দেওয়াও যায় না। যখন- তখন প্রেমের পথ থেকে সরেও আসা যায় না; মুছেও ফেলা যায় না। ভুলেও যাওয়া যায় না। প্রেমের কলঙ্কও কারো কাছে মধুর। প্রেমকে কোনো কাঠামোর মধ্যে আবদ্ধ করা যায় না। প্রেম কোনো বস্তু নয়। তাকে হস্তান্তর করা যায় না। প্রেমের কোনো সীমানা নেই; দেশ-কাল-পাত্রভেদ নেই। তাকে পরিমাপ করা যায় না। প্রেমের সাথে বস্তুগত চাহিদার সম্পর্ক থাকে না, তবে বস্তুগত ভোগ-বিলাসের মধ্যে থেকেও একসময়ে ভালোলাগা, ভালোবাসা থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে।  

৫. মানুষ তার প্রয়োজনে সম্পদের বিনিময়ে বা আশ্বাসে জীবনসঙ্গী বেছে নিতে পারে অথবা বিবাহের মাধ্যমে কারো সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে পারে। কিন্তু ভালোবাসা শুধু ভালোবাসা দিয়েই লাভ করতে হয়। যেকোনো ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ মনের ভেতর যে আনন্দদায়ক  অনুভূতি সৃষ্টি করে তাকেই আমরা ভালোবাসা বলে থাকি। ভালোবাসাকে ঘৃণার বিপরীতে স্থান দেওয়া হয়। ভালোবাসায় শারীরিক লিপ্সা গৌণ থাকে। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শরীরী আকর্ষণ থেকে অশরীরী ভালোবাসায় উত্তরণ ঘটে। অন্যদিকে প্রেম হলো একটি প্রবল আকর্ষণ, যা কোনো যৌন আবেদনময় দৃষ্টিকোণ থেকে কাউকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে তুলে ধরে এবং যাতে ভবিষ্যতে দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার মনোবাসনাও অন্তর্ভুক্ত থাকে। প্রেমের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি অধিক গুরুত্ব পেয়ে থাকে। ভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা। বিশেষ কোনো প্রাণী বা বস্তুর জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ভালোবাসা। কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি অতিরিক্ত স্নেহ প্রায় ক্ষেত্রেই আনন্দদায়ক হয়ে থাকে।  এমনকি কোনো বিশেষ কাজ, বিষয় বা খাদ্যের প্রতিও আনন্দদায়ক আকর্ষণ সৃষ্টি হতে পারে। এই অতিরিক্ত আনন্দদায়ক অনুভূতিই হলো ভালোবাসা। কারো প্রতি অতিরিক্ত যত্নশীলতা কিংবা সবসময় কারো উপস্থিতি অনুভব করা ভালোবাসার সাথেই সম্পর্কযুক্ত। ভালোবাসার মধ্যে যৌনকামনা অথবা শারীরিক লিপ্সার চেয়ে মানবিক আবেগটাই বেশি থাকে।

৬. বন্ধুত্ব, সহানুভূতি, আনুগত্য, আদর-যত্ন ইত্যাদি অনেক কিছুই অর্থের বিনিময়ে লাভ করা যেতে পারে তবে, ভালোবাসা নয়। ভালোবাসা কোনো কিছুর প্রতিদান হিসেবে আসে না; বরং তা কারো হৃদয়ের গভীর থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেরিয়ে আসে।  সবসময় ভালোবাসা অন্ধের মতো কাজ করে না। কাউকে ভালোবাসি বলে তার অন্যায় কাজ মেনে নেওয়া যায় না। আবার তুমি আমার কথা না শুনলে আর ভালোবাসব নাÑ এটাও সম্ভব নয়। এখানে এসে ভালোবাসা উভয় সংকটে পতিত হয়। ভালোবাসার পাত্রকে যদি অসীম স্বাধীনতা দেওয়া হয় তাহলে একসময় হয়তো ভালোবাসাকে অবমাননা করা হবে। কোনো মা তার সন্তানকে বলে দিলেন, তার নির্দেশিত পথে না চললে আর তাকে ভালোবাসবেন না। বাস্তবে কি সেটা সম্ভব? তাই ভালোবাসায় কোনো শর্ত থাকে না।  ভালোবাসায় স্বাভাবিকভাবেই সহানুভূতি ও সহমর্মিতা বিদ্যমান থাকে। কারো মনে ভালোবাসা জাগলে সে অন্যের অস্তিত্বকেও নিজের মতো করে উপলব্ধি ও বিশ্বাস করতে থাকে। সত্যিকার ভালোবাসা নিজের এবং অন্যের মাঝে পার্থক্য করে না। ভালোবাসা শুধু প্রাণী নয়, নীতি-আদর্শ কিংবা ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতিও গড়ে উঠতে পারে। ভালোবাসা প্রায় সকলের নিকটই চিরকাল প্রিয়। ভালোবাসা পছন্দ করে না অথবা ভালোবাসার আলোচনায় বসতে চায় না-এমন মানুষ কমই পাওযা যাবে। যে সমাজে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা স্বাভাবিক পর্যায়ে বিরাজমান থাকে সেখানে সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। কিন্তু কোনো কোনো সমাজে, রাষ্ট্রে শক্তিমানরা অন্যদের সাথে পশুপাখির চেয়েও নিম্ন পর্যায়ের আচরণ করে থাকে। তারা নিজের দলের, মতাদর্শের বা ধর্মীয় বিশ্বাসের বাইরে কাউকে মনুষ্য বিবেচনা করতেও দ্বিধান্বিত থাকে। অথচ প্রাণ এক অমূল্য সম্পদ; তাই সকল প্রাণীকেই ভালোবাসা আমাদের কর্তব্য।

৭.  ভালোবাসার স্বরূপ কিরকম তা অনেকেই চট্ করে বলে দিতে পারবে না। তবে ভালোবাসার একটি বিরাট শক্তি আছে এবং কোনো মানুষ বা বস্তুর প্রতি প্রচণ্ড আকর্ষণের অনুভূতি নিজের মধ্যে জন্ম নেওয়ার বিষয়টি প্রেমিক মাত্রই স্বীকার করবেন। তবে ব্যক্তি, পরিবেশ-পরিস্থিতি ও সময়ের ওপর নির্ভর করে সকলের প্রতি সকলের ভালোবাসা একই রকম নাও হতে পারে। মোটামুটিভাবে ভালোবাসায় থাকে নিজের চেয়েও অন্যের সুযোগ-সুবিধা ও সুখের ওপর বেশি প্রাধান্য দেওয়া, অন্যের প্রতি সম্পৃক্তি, আকর্ষণ ও নির্ভরশীলতা অতিরিক্ত মাত্রায় থাকা। কারো প্রতি দৃশ্যমানভাবে মনোযোগী হওয়া কিংবা শ্রদ্ধা প্রকাশ করা; কারো প্রতি স্নেহবান, যত্নশীল হওয়া অথবা তার সব কিছুই পছন্দ করতে শুরু করা; কারো প্রতি যত্ন, সাহায্য অথবা শ্রদ্ধার অঙ্গীকার করে ফেলা; কোনো না কোনোভাবে অন্যের প্রতি নিজের স্বার্থহীন আবেগের প্রকাশ করে ফেলা ইত্যাদি। ভালোবাসা একটি হঠাৎ ঘটে যাওয়া ক্ষণিকের ব্যাপার; নাকি আবেগের স্থায়ী রূপ; নাকি সংক্ষিপ্ত পরিচয়ের সাময়িক আবেশ- এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। একই পরিবারের সদস্যদের মাঝে অথবা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গড়ে ওঠা ভালোবাসা কি রাসায়নিক অথবা সাংসারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকভাবে গড়ে ওঠে? ভালোবাসা কোথাও বাছাই বা পছন্দের মাধ্যমে হয়ে থাকে। আবার কোথাও তা নিয়ন্ত্রণহীন অবশ্যম্ভাবী হিসেবে ঘটে যায়। যাকে বলে প্রথম দর্শনেই প্রেম।

সম্পর্কের প্রাথমিক পর্যায়ে ভালোবাসা ও লালসার মধ্যে পার্থক্য করা যায় না। উভয়ের মাঝে তখন শারীরিক আকর্ষণ ও একে অপরের মাঝে ভালোলাগার বা পছন্দের জিনিসগুলোকে প্রাধান্য দিতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। সেখানে অপছন্দের বা ভালো না লাগার দিকগুলো সাময়িক উত্তেজনার রসায়নে ভেসে যায়। এরই মাঝে কেউ তুলনামূলক অধিকতর ভালোলাগার মানুষের কাছে সরে যায়। তবু ভালোবাসা  তাদের মাঝে বেঁচে থাকে; নিঃশেষ হয়ে যায় না একেবারে। ভালোবাসা জীবনে অনেক উত্থান-পতনের মাঝ দিয়ে দুজনের মধ্যে বেড়ে ওঠে। এই ভালোবাসার জন্য প্রয়োজন হলো অঙ্গীকার, সময় প্রদান, বিশ্বাস এবং গ্রহণযোগ্যতা। অন্যপক্ষে লালসা  বা  লিপ্সা একটি যৌনতাড়িত অনুভূতি, যা প্রাথমিকভাবে মানুষকে সূচনাতেই পরস্পরের দিকে টেনে নিয়ে যায় এবং জন্মদানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই তার বাস্তবায়ন ঘটে। মিলনের আকুতি এবং রোমান্টিক আকর্ষণের পাগলামো তাকে আবেশে জড়িয়ে নেয় বলে কোনো ব্যক্তির সামনে সবকিছু ফ্যাকাশে হয়ে ওঠার কারণে সে বুঝতে সক্ষম হয় না যে, এই কি সেই ব্যক্তি যাকে তার প্রয়োজন? এ ধরনের সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যেমন দুজনের মধ্যে গভীর সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও তৃতীয় কারো উপস্থিতি একজনের মনে লালসার সৃষ্টি করতে পারে। নিজের অজান্তেই সে লালসার শিকার হয়ে ভাঙনের সুর বাজাতে পারে। তাই দীর্ঘ ও নিরাপদ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য যুগপৎভাবে হৃদয়ের আকর্ষণ ও শরীরের আকর্ষণ উভয়ের সমন্বয়ের প্রয়োজন বলে অনেকেই মনে করেন।

৮.  অন্যের জন্য নিজের ভেতরে কি ধরনের  আকর্ষণ জাগে অথবা নিজের জন্য অন্যের আগ্রহ কতটা তা অনেক সময় মানুষ যাচাই করে দেখতে চায়। অর্থাৎ একের জন্য অপরের ভালোবাসাটা পরখ করে নিতে চায়। অনেক সময় ভালোবাসার পাত্র-পাত্রী তাদের  ইন্দ্রিয়ের দ্বারা পরস্পরের ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে পারে। একটি মুচকি হাসি, একটুখানি পেলব ছোঁয়া, এক পলকের উজ্জ্বল চাহনি, ক্ষণিকের মধুর বচন আমাদের মস্তিষ্কে প্রক্রিয়াজাত হয়ে হৃদয়ে একটি ভালোবাসার বার্তা পাঠিয়ে দিতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষের মন অন্যের ভালোবাসা বুঝতে পারে; উপলব্ধি করতে পারে। তারপরও কিছু মানুষের মনে  প্রশ্ন জাগে, ‘ভালোবাসা তুমি কোথায়’? হয়তো কেউ সারা জীবন ভালোবেসেও জানতে পারে  না ভালোবাসাটা কি? সে কি ভালোবাসে? আমি কি ভালোবাসি?

ভালোবাসা ও প্রেমের  উপস্থিতি মানব মনের সবচেয়ে শক্তিশালী আবেগ। এ জন্য গীতিকার বলেন, ভালোবাসা যতো বড় জীবন ততো বড় নয়। কখন কীভাবে কারো মনে কারো জন্য ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে তা নির্দিষ্টভাবে বলা যায় না। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রথম দর্শনেই ভালোবাসা ও প্রেমের সূত্রপাত ঘটে যায়। হৃদয়ের মাঝে এক ঝলক বিদ্যুৎ চমকানোর মতো বেজে উঠতে পারে ভালোবাসার ঝংকার।

বিজ্ঞানীদের  মতে, ভালোবাসা একটি স্থায়ী স্নায়বিক অবস্থা। লালসা এবং ভালোবাসার মধ্যে সহজেই পার্থক্য করা যায়। লালসা একটি সাময়িক অনুভূতি আর ভালোবাসা একটি দীর্ঘস্থায়ী রসায়ন। ভালোবাসা একটি নিবিড় দায়িত্বজ্ঞান, প্রতিজ্ঞা, আনুগত্য, প্রতিশ্রুতি, বন্ধন কিংবা সমর্পণের মতো। ভালোবাসার ক্ষেত্রে চিন্তা-চেতনার সামঞ্জস্য একটি বিরাট ভূমিকা পালন করে। ভালোবাসার সৌন্দর্য বাস্তব জীবনের অধিকাংশ ক্ষেত্রে মিল বা সমতা থাকলে ভালোবাসার ক্ষেত্রটি সজীব হয়ে ওঠে।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল