ব্লক প্রদর্শনীর কাজে কৃষি কর্মকর্তার ‘দুর্নীতি’

প্রকাশ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৬:০৮ | আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৬:৩৯

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজেরা বেগমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে উঠেছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক ৫০ একর জমিতে সমলয়ে হাইব্রিড ধান চাষের ব্লক প্রদর্শনীর বীজতলা তৈরিতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

এছাড়াও নিম্নমানের ও কম ট্রেতে বীজতলা তৈরি করার কারণে পর‌্যাপ্ত পরিমাণ চারা না হওয়ায় প্রায় ৬০ বিঘা জমিতে কৃষককে নিজে চারা কিনে রোপণের নির্দেশনা দিয়েছেন ওই কৃষি কর্মকর্তা। এতে কৃষকের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক দেশের ৬৪টি জেলায় ৫০ একর করে জমিতে অধিক ফলনশীল সুবর্ণ-৩ হাইব্রিড বোরো ধানের চাষ করতে সমলয়ে ব্লক প্রদর্শনীর আয়োজন করে। প্রতি জেলায় ব্লক প্রদর্শনীর ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৪ লাখ টাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ব্লক প্রদর্শনীর এলাকা নির্ধারণ করে কসবা উপজেলার সৈয়দাবাদ এলাকায়। এতে ৫০ একর জমির জন্য বীজতলা তৈরি করতে সাড়ে চার হাজার ট্রেতে চারা করার জন্য সরকারিভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়। ভালো চারা পেতে ১০০ টাকা মূল্যমানের ট্রেতে বীজ রোপণের কথা বলা হয়। সাড়ে চার হাজার ট্রের মূল্য সাড়ে চার লাখ টাকা।

অভিযোগ রয়েছে, কৃষি কর্মকর্তা হাজেরা বেগম সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে নিম্নমানের দুই হাজার ৫০০ ট্রেতে বীজতলা তৈরি করে অতিরিক্ত ট্রের খরচ আত্মসাত করেছে। এই বীজের উৎপাদিত চারা দিয়ে ১৬৬ বিঘা জমির মধ্যে প্রায় ৬০ বিঘা জমি কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে রোপণ সম্ভব হয়নি। বাকী ৬০ বিঘা জমি নিজে চারা কিনে রোপণ করতে কৃষকদের নির্দেশ দেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

কৃষকরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে তারা চারা কিনে রোপন বাবদ খরচ পাচ্ছেন মাত্র ৯১০ টাকা। অথচ তাদের খরচ হয়েছে প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় এক হাজার ৭০০ টাকা। সবকিছু দেয়ার কথা থাকলেও জমিতে চাষ ও পানি দেয়ার খরচও চাপিয়ে দেয়া হয়েছে কৃষকের উপর। কৃষি অফিস শুধু বীজতলা তৈরি করে চারা রোপণ, সার ও কেটে দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ সরকার কৃষি ও কৃষকদের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা দিলেও সেগুলো থেকে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।

এদিকে স্থানীয় কৃষক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান ও মোস্তফা মিয়াসহ একাধিক কৃষক জানান, সব খরচ কৃষি অফিস বহন করার কথা বলে জমি নেয়। কিন্তু জমির চাষ ও পানির খরচ কৃষককেই বহন করতে হচ্ছে। আবার ৬০ বিঘা জমির রোপণ খরচও কৃষককে বহন করতে হচ্ছে। কৃষি অফিস মেশিন লাগালে ৯০০ টাকা খরচের মধ্যে লাগানো সম্ভব। কিন্তু শ্রমিক দিয়ে লাগালে খরচ হয় প্রায় এক হাজার ৭০০ টাকা।

কৃষকরা বলছে, বেশিরভাগ খরচই যদি তাদের বহন করতে হয়, তাহলে সরকারের দেয়া ১৪ লাখ টাকা কোথায় খরচ করা হবে।

তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজেরা বেগম জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রবিউল হক মজুমদার স্যারের নির্দেশ মোতাবেক কম ট্রেতে বীজ রোপণসহ সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন তিনি। এক পর্যায়ে তিনি জানান, অনিয়মের বিষয়ে সরকারকে জবাব দেয়া ও বোঝানোর ক্ষমতা তার আছে।

অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রবিউল হক মজুমদার বলেন, ‘সমলয় হাইব্রিড চাষ প্রকল্পে নিয়ম বহির্ভূত কোন নির্দেশনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে দেয়া হয়নি। প্রকল্পে নির্দেশনার বাইরে কিছু হয়ে থাকলে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ উল আলম বলেন, ‘প্রকল্পে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক যে ব্যয় ধরা হয়েছে সেভাবেই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে কাজ করতে হবে। এখানে নিয়মের কোন ব্যত্যয় হলে তা অবশ্যই খতিয়ে দেখার বিষয়।’

(ঢাকাটাইমস/১০ফেব্রুয়ারি/পিএল)