৩০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের ঠাঁই হলো ‘প্রিয় নীড়ে’

রানা আহমেদ, সিরাজগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২১:২৯

বাবা-মা ও পরিবার-পরিজনে ঠাঁই নেই। সমাজে এদের অপায়া ভেবে তাড়িয়ে দেয়। বেঁচে থাকার তাগিদে এই তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) মানুষেরা বাজার থেকে সবজি তোলা, দোকান থেকে ১০-২০ টাকা নেয়া, বিয়ে বাড়িতে নেচে-গেয়ে কিছু টাকা নেয়া- এভাবেই পেট চলে। তাতেও আপত্তি অনেকের। বেঁচে থাকাই যেন বিষাদময়। বাংলাদেশে তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) জীবনের চিত্র এমনই।

এই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরও অধিকার আছে, এমনটা পরিবার ও সমাজ কারোরই দৃষ্টিতে নেই। তবে এই অভাগীদের ভাগ্য বদলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুজিববর্ষে তাদের পাকা ঘর ও কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের স্বরস্বতী নদীর পাড়ে (তৃতীয় লিঙ্গের) আশ্রয়ন প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়। এখানে তৃতীয় লিঙ্গের ৩০ জনকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে জমির মালিকানাসহ পাকাঘর, গবাদি পশু ও উপার্জনের জন্য সেলাই মেশিন দেয়া হয়েছে। সেলাই মেশিন ও গবাদি পশু পালন প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা আশ্রয়ন প্রকল্পে গানে গানে হাসি-আনন্দে সময় পার করছেন। কেউ ছাগল, হাঁস-মুরগি ও কবুতর পালন করছেন। কেউ শাক-সবজি চাষ করছেন। কেউ আবার রান্না করছেন। এ যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন তারা।

পুনর্বাসিত হিজড়ারা তাদের জীবনের কথা এই বলেন, পরিবার ও সমাজের মানুষের অবহেলা, তাড়িয়ে দেয়া ও নির্যাতনের কথা। বাঁচার ইচ্ছে হতো না। তবে এখন অনেক ভালো আছেন। নতুন জীবন পেয়েছেন। নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন। এটি মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। তিনি তাদের মমতায় জড়িয়ে নিয়েছেন। আশা নামে এক হিজড়া বলেন, আমাদের বাবা-মা, পরিবার ও সমাজের লোক যেটুকু ভালো না বাসত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভালোবাসেন। সন্তানের মতো কোলে তুলে নিয়েছেন। তাকে দোয়া করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবী হোন। ঘরে ঘরে আমাদের মতো অসহায়ের সহায় হোন।

আলো নামে আরেক হিজড়া বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের এ ঘরে আসার পরও আশপাশের মানুষ প্রথমদিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করত। আমাদের এখানে জায়গা দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছে। পরে ধীরে ধীরে তারা আমাদের সাথে কথা বলে ও সুখ-দুঃখ শেয়ার করে। এভাবেই তারা সাধারণ মানুষের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন। মানুষেরও তাদের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা পাল্টে ইতিবাচক হচ্ছে। স্থানীয় আরিফ তালুকদার বলেন, প্রথমদিকে ভেবেছিলাম, এই হিজড়ারা হয়তো সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করবে। আমাদের ক্ষতি হবে। এখন তো দেখি তারা গ্রামের মানুষের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন ও শাক-সবজি চাষে ব্যস্ত। এই মানুষগুলো কাউকে বিরক্ত করে না। এখন গ্রামের মানুষ তাদের সঙ্গে মেশে, তারাও মানুষের সঙ্গে ভালো ভাবে কথা বলে ও মেশে।

আশ্রয়ন প্রকল্পে হিজড়াদের নেত্রী মায়া জানান, সরকারি হিসেবে তাদের ৩০ জনকে জমি ও ঘর দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা থাকছেন ৫০ জন। তারা স্বাভাবিক জীবন পেয়ে খুশি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান ভুইয়া জানান, আমরা সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে ২০ জন হিজড়াকে পুনর্বাসন করেছি। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনে জীবন মান উন্নত করার সব ব্যবস্থা করা হবে। এটিই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ও চাওয়া। তিনি জানান, ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। সরকারের হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে ১১ হাজার হিজড়া রয়েছে। তাদের পুনর্বাসনের কাজ চলমান। এছাড়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় হিজড়াদের উপবৃত্তি প্রদান, অক্ষম ও অসচ্ছল হিজড়াদের বয়স্ক ভাতা প্রদান, দক্ষতা বৃদ্ধি ও আয়বর্ধনমূলক কাজের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা এবং পরিবার-সমাজে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধির নানা কর্মসূচি পালন করছে।

উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহমেদ বলেন, প্রকল্পে বসবাসকারীরা নিজেদের স্বাবলম্বী করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। আর তা দেখে নতুন আরো কিছু পরিকল্পনা নেবার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব করবেন বলে তিনি জানান।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মদ জানান, সরকারের উদ্যোগকে স্থায়ী রূপ দিতে জেলায় আরো যতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ আছে, তাদেরও এমন প্রকল্পের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। নিরাপদ আশ্রয় মেলায় এখন অনেকটাই স্বস্তিতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। নিজেদের অন্যান্য উচ্চতায় নিতে নিজেরাই এখন তৈরি করছেন নিজেদের। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর এমন উদ্যোগের প্রশংসাও করেন স্থানীয় জেলা প্রশাসক।

(ঢাকাটাইমস/১০ফেব্রুয়ারি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :