ভোজ্যতেলে অসহ্য বাজার, চালেও নাকাল

প্রকাশ | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৪:০১ | আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:৫৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সবজির বাজারে ১০ টাকায় মিলছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি ও মুলা। এখানে কিছুটা বাঁচলেও সে টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে চাল আর তেল কিনতে। দেশের বাজারে রেকর্ড তেলের দাম ও চালের উর্ধ্বগতি ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। বাজার দর নিয়ন্ত্রণে সরকারের দিকে তাকিয়ে সাধারণ ক্রেতারা। 

শুক্রবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে বাজার দরের এমন চিত্র দেখা গেছে। 

সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিকেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। নাজিরশাইল কিনতে কেজি প্রতি গুনতে হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা। চিকন চালের পাশাপাশি উর্ধ্বমুখী মোটা চালের বাজারও। প্রতিকেজি পাইজাম চালের দাম ৫০ টাকা। আর আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজি। এছাড়া স্বর্ণা চাল ৪৮ টাকা, পোলাওয়ের চাল ১০০ টাকা কেজি।

চালের বাজারের এমন অবস্থায় অসন্তোষ নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে। রিকশাচালক মিরাজ হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ভাড়া ৫ টাকা বেশি চাইলে তো কেউ দেয় না। বাজারে সব সময় কোনো না কোনো জিনিসের দাম বেশি থাকেই। চাউলের দাম বেশি থাকলে হয় ক্যামনে?’

চালের পাশাপাশি দেশের বাজারে সর্বোচ্চ দামের রেকর্ড গড়েছে সয়াবিন তেল। বাজার ঘুরে দেখা যায়, বোতলজাত সয়াবিন তেলের মধ্যে রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের তেল সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এক লিটার তেলের খুচরা দর ১৪০ টাকা। পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। দুই লিটার তেলের দাম ২৭৫ টাকা। পাইকারি কিনতে গুনতে হচ্ছে ২৫৫ টাকা। আর পাঁচলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল রূপচাঁদা খুচরা বিক্রি করছে ৬৮৫ টাকা। পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে ৬৩০ টাকায়।

রূপচাঁদার চাইতে কিছুটা কমে বিক্রি হচ্ছে তীর ও এসিআই ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল। তীর ব্র্যান্ডের এক লিটার সয়াবিন তেল খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। পাইকারি দর ১২৮ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে এসিআই ব্রান্ডের এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল। দুই লিটার তীর সয়াবিন তেলের খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২৬৮ টাকা। পাইকারি দর ২৫২ টাকা। খুচরা বাজারে এসিআই একই দামে দুই লিটার বোতলজাত তেল বিক্রি করলেও পাইকারি বাজারে চার টাকা বেশি নিচ্ছে এসিআই। আর তীরের পাঁচ লিটার তেলের খুচরা দর ৬৫৫ টাকা। পাইকারি বাজারে সে দর ৬২৫ টাকা। এসিআই পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তীরের চাইতে পাঁচ টাকা কমে ৬৫০ টাকায় বিক্রি করছে। তবে পাইকারি বাজারে তীরের চাইলে পাঁচ টাকা বেশি এসিআই কোম্পানির তেলের দাম। বিক্রি হচ্ছে ৬৩০ টাকা দরে।

তেলের বাজারের টালমাটাল অবস্থায় অনেকটা দিশেহারা সাধারণ মানুষ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মাহমুদ সোহেল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এক লিটার সয়াবিন তেল ১৪০ টাকা! ভাবা যায়? একবার চাল, একবার পেঁয়াজ, এবার তেল।’

উবার চালক মাহতাব উদ্দিন বলেন, ‘সরকারের তো দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। সমস্যা যখন চরমে পৌঁছায় তখন তারা এটা নিয়ে কথা বলে। সমাধান করতে করতে আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এভাবে তো চলে না।’

২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত দেশের বাজারে প্রচলিত প্রতিষ্ঠানগুলোর এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১০৫ টাকা। গত পাঁচ মাসে লিটারপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম এখন দাঁড়িয়েছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। এটি দেশের বাজারে তেলের সর্বোচ্চ দাম বলে জানা গেছে। খোলা তেলের দামও লিটারপ্রতি পৌঁছেছে ১২৫ টাকায়। অবশ্য সরকারের বিপণন প্রতিষ্ঠান টিসিবি কার্যক্রমে প্রতি লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ডিম, ব্রয়লার মুরগী ও সোনালি মুরগির দাম। প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা, হাঁসের ডিম ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের ডজন ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা। 

এছাড়া দাম বেড়ে সোনালি মুরগি (কক) বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে।  কিছুদিন আগেও ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগি এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়।

সবজির বাজারে স্বস্তি

বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি মুলা ১০-১৫ টাকা, টমেটো ও গাজর ৩০ টাকা, শালগম ২৫ থেকে ৩০ টাকা, শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, একই দামে বিক্রি হচ্ছে বেগুন, ঢেঁড়স, পাকা টমেটো। ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে করল্লা ও বরবটি। 

আকারভেদে লাউ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা প্রতি পিস। ১০ থেকে ১৫ টাকা পিস হিসেবে মিলছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি। 
মিষ্টি কুমরার কেজি ৩০ টাকা, আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা কেজি, চিচিংগা ৩০ থেকে ৪০ টাকা ও পেঁয়াজ ৩০ টাকা কেজি, কাঁচাকলা ১৫ থেকে ২০ টাকা হালি, কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আদা প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, রসুনের কেজি ১২০ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়। 
আগের অবস্থানেই মাছ ও মাংসের বাজার

গরুর মাংস প্রতি কেজি আগের মতোই ৫৫০ টাকা ও মহিষের মাংস ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খাসি ও বকরির মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে।

মাছের বাজারে রুই মাছ আকারভেদে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, মাগুর মাছ ৫০০-৬০০ টাকা, শিং মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, মৃগেল ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, পাঙ্গাস ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। 

চিংড়ি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বোয়াল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, কাতল ১৫০-২৮০ টাকা, ফোলি ৩০০-৪০০ টাকা, পাবদা ১৫০-২৫০ টাকা, টেংরা ১৬০-২২০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০ টাকা, সিলভার কাপ ১০০-১৫০ টাকা, দেশি কৈ ১৫০ থেকে ৬০০ টাকা, কাঁচকি ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, আইড় মাছ ৫০০, রিডা ২২০ টাকা ও কোরাল ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, রূপচাঁদা কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের রাজা ইলিশ এখন কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে হাজার টাকায়। 

(ঢাকাটাইমস/১২ফেব্রুয়ারি/কারই/কেআর)