মাদারীপুরের সোরাব বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ট এলাকাবাসী

মাদারীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৪:৩৫

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার পূর্ব দ্বারাদিয়া গ্রামে সোরাব খাঁ বাহিনীর অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলছে। এই বাহিনীর হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না বৃদ্ধা নারী-পুরুষসহ সাধারণ মানুষ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এই বাহিনী যেনতেন কাজ করছে বলে অভিযোগ রযেছে।

জানা গেছে,এই বাহিনীর প্রধান সোরাব খাঁ এরই মধ্যে ডাকাতি মামলায় ১৪ বছর জেল খেটে বের হয়েছে। এখনো তার বিরুদ্ধে ডাকাতি, খুন, নারী নির্যাতন, জবর দখলসহ অন্তত ছয়টি মামলা রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজৈর উপজেলার বদরপাশা ইউনিয়নের নিভৃত পল্লী পূর্ব দ্বারাদিয়া গ্রাম। এখানে দীর্ঘ দিন ধরে কামু খাঁর ছেলে সোরাব খাঁ আধিপত্য বিস্তার করে নিজ নামে একটি বাহিনী তৈরি করেছে। যার প্রধান সোরাব খাঁ নিজেই। চুরি, ডাকাতি, মারামারি, রাহাজানিসহ নানা অভিযোগ এই বাহিনীর বিরুদ্ধে। প্রায় ২০ বছর আগে মাদারীপুর শহরের বাচ্চু ভূইয়ার লঞ্চ ডাকাতি করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় সোরাবের। পরবর্তীতে তিনি ১৪ বছর জেল খেটে সাধারণ ক্ষমায় বের হন। এরপরও থেমে থাকেনি সোরাব খাঁ বাহিনীর তাণ্ডব। কারো বাড়ি নির্মাণ হলে চাঁদা দাবি করে তার বাহিনীর সদস্যরা। এ কারণে সোরাব খাঁকে প্রধান আসামি করে তার বাহিনীর অন্তত ১১ জনের বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজি মামলা করেন পূর্ব দ্বারাদিয়া গ্রামের নুর হোসেন।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, সোরাব খাঁ দীর্ঘ দিন ধরে গ্রামের নিরীহ মানুষকে অত্যাচার করে আসছে। তার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে হত্যা-জখমের অভিযোগে মামলা করেন পূর্ব দ্বারাদিয়া গ্রামের খোকন খানের স্ত্রী মহিদা বেগম, ২০১২ সালের ২৩ এপ্রিল একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন একই গ্রামের মতি খানের ছেলে নুর হোসেন খান। এছাড়াও, জমি দখলের অভিযোগে ২০১৯ সালে সোরাব খাঁর বিরুদ্ধে একই গ্রামের মৃত ফরিদ খানের ছেলে অহিদুল খান মামলা করেন। একই অভিযোগে ২০২০ সালে একই গ্রামের মৃত গঞ্জর আলী খানের ছেলে সুলতান খাঁ আদালতে মামলা করেন।

অন্যদিকে, সোরাবসহ এই বাহিনীর অন্যদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পূর্ব দ্বারাদিয়া গ্রামের মৃত সাহেদ হাওলাদারের ছেলে আলেম হাওলাদার আদালতে মামলা করেন। একই গ্রামের খলিল হাওলাদারের মেয়ে ও আমিনুল ইসলামের স্ত্রী রানী বেগম সোরাব খানের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানিসহ হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। এছাড়া সোরাব খাঁ ও তার বাহিনীর একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক জিডি রয়েছে। এসব মামলা হওয়ার পরেও সোরাব বাহিনীর অত্যাচার থেমে থাকছে না। বরং দিন দিন বেড়েই চলছে তার তাণ্ডব। এ থেকে পরিত্রাণ চায় এলাকাবাসী।

নির্যাতনের শিকার রানী বেগম বলেন,‘আমার ক্রয়কৃত জমি থেকে আমাকে উচ্ছেদ করার জন্যে সোরাব খাঁসহ তার বাহিনী আমাদের উপর নির্যাতন চালায়। তার সঙ্গে স্থানীয় জোবাহার হাওলাদার, আসিব ফকির, বদর হাওলাদার ওরফে মিজান, কেরামত হাওলাদারসহ প্রায় ৮/১০ জন আমাদের জমি দখলের চেষ্টা করে। এসময় আমার মাকে বেদম মারধর করে মাথায় কোপ দেয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করায় এখন মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধামকি ও ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। আমরা এই বাহিনীর অত্যচার থেকে মুক্তি চাই।’

এই বাহিনীর নির্যাতনের শিকার নুর হোসেন খান বলেন, ‘আমার মামলা উঠানোর জন্যে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে সোরাব বাহিনী। যেকোন সময় আমাকে গুম করে ফেলারও হুমকি দিচ্ছে। সোরাব খাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের হেড কোয়াটার্সের অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তার অপকর্মের সঠিক তদন্ত করলে সতত্যা পাওয়া যাবে।’

তবে সোরাব খাঁ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার এক প্রতিপক্ষ তৎকালীন সিআইডিতে ছিল, যে কারণে এরশাদের আমলে আমার চার বছর জেল খাটতে হয়েছে। এখন ন্যায়বিচার করতে গেলে এলাকায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দিচ্ছে। এতে আমার কিছুই করার নেই। আর যে অভিযোগ দিচ্ছে, পারলে সে আমার সামনে এসে কথা বলুক।’

এ বিষয়ে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড এডমিন) আব্দুল হান্নান বলেন, ‘যদি তদন্তাধীন কোন বিষয় থাকে, তাহলে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে। আর বিচারাধীন হলে সেটা আমাদের কিছুই করার নেই। সেটা আদালত দেখবে। তবে অপরাধী হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’

(ঢাকাটাইমস/১২ফেব্রুয়ারি/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :