সুস্থ-সবল সরকারি কর্মচারীর ‘প্রতিবন্ধী পরিচয়পত্র’

প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:১৬

সোলায়মান হোসেন, জামালপুর

জামালপুরের শারীরিকভাবে সক্ষম একজন সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবন্ধীর পরিচয়পত্র ব্যবহার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি ভাতা উত্তোলণ না করলেও তার প্রতিবন্ধী পরিচয়পত্রের রহস্যজনক ব্যবহার ভাবিয়ে তুলছে স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের। 

প্রতিবন্ধী পরিচয়পত্র ব্যবহারকারী মুহাম্মদ নুরুজ্জামান (৪৬) ‘শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষন ও পুনর্বাসন কেন্দ্র’ (বালক) জামালপুর শাখার অ্যাডুকেটর পদে কর্মরত আছেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলার ঘোনারচালা গ্রামে।

জানা গেছে, মুহাম্মদ নুরুজ্জামান সখিপুর উপজেলার কালিয়ায় ১৯৭৫ সালের ২২ই ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। একটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে ব্যবসা এবং বেসরকারি চাকরি করতেন তিনি। মুহাম্মদ নুরুজ্জামান সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে অ্যাডুকেটর পদে যোগদান করেন ২০১৫ সালের ১২ই জুলাই। প্রথমে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে যোগদান করলেও পরে বদলী হয়ে আসেন জামালপুর জেলায়। সরকারি চাকরিতে কর্মরত অবস্থায় ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর নুরুজ্জামানের শারীরিক প্রতিবন্ধীর পরিচয়পত্র ইস্যু হয় টাঙ্গাইল জেলার সখীপুর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে। তার প্রতিবন্ধী আইডি নম্বর- ৯৩১৮৫৮১৯৬৮০৮৭-০২।

তবে এ পর‌্যন্ত তিনি কখনও প্রতিবন্ধী ভাতা উত্তোলণ করেন না। একজন কর্মদক্ষ মানুষ হয়েও কি কারণে তিনি নিজেকে প্রতিবন্ধী দাবি করছেন তা নিয়ে তার সহকর্মী ও স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিদের মাঝে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।

জেলার মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘একজন প্রতিবন্ধী কিভাবে অ্যাডুকেটর পদে কর্মরত আছেন? তিনি যদি প্রতিবন্ধী হয়ে থাকেন তাহলে তিনি এই পদের জন্য যোগ্য নয় বলে আমি মনে করি। বিষয়টি খুবই রহস্যজনক এবং চাকরি বিধি পরিপন্থী। তিনি চাকরিতে যোগদানের আগে বিষয়টি উল্লেখ করেন নি। তিনি ভাতা উত্তোলণ করেন না, তাহলে কেন তার প্রতিবন্ধীর পরিচয়পত্র প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে এই ঘটনাটি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।’

এদিকে টাঙ্গাইল জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শাহ আলম মোবাইল ফোনে বলেন, ‘এই বিষয়টি খুবই জটিল। তিনি প্রতিবন্ধী কার্ড করেছেন। কিন্তু ভাতা উত্তোলণ করেন না। তবে তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা নেন। একটি দুর্ঘটনায় তার বাম হাত ভেঙে গেলেও হাতটি অচল না। আসলে, তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী কিনা এই বিষয়টি আমরা এখনও পরিস্কার না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নুরুজ্জামানের সহকর্মীরা বলেন, ‘আমরা কখনও জানতাম না যে, তার প্রতিবন্ধী কার্ড রয়েছে। আসলে, তাকে দেখে কখনও মনে হয় নাই যে শারীরিকভাবে তিনি অক্ষম।’  

তবে নুরুজ্জামান বলেন, ‘২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে বাড়িতে বড়ই গাছ থেকে পড়ে আমার বাম হাত ভেঙে যায়। তাই আমি প্রতিবন্ধী কার্ড করেছি। কিন্তু কোনো দিন ভাতা উত্তোলণ করি নাই। আর ভবিষ্যতে কখনও ভাতা উত্তোলণ করব না।’

ভাতা উত্তোলণ না করে প্রতিবন্ধী কার্ড করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগের জন্যই আমি প্রতিবন্ধী কার্ড করেছি। যদি ভবিষ্যতে বড় অ্যামাউন্টের কিছু পাই, সেই আশায় আমি প্রতিবন্ধী কার্ড করে রেখেছি।’

হাত ভাঙার তিন বছর পর প্রতিবন্ধী কার্ড করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সমাজসেবায় যোগদানের আগে প্রতিবন্ধী কার্ডের বিষয়ে জানতাম না। যখন জেনেছি তখনই প্রতিবন্ধী কার্ড করেছি।’

অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়ে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র (বালক) জামালপুর শাখার উপপ্রকল্প পরিচালক সুভঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমাদের এখানে এখনো কয়েকজন প্রতিবন্ধী চাকরি করছেন। তাই নুরুজ্জামানও অ্যাডুকেটর পদে চাকরি করতে পারেন। আর তিনি প্রতিবন্ধী হিসেবে কোনো ভাতা উত্তোলণ করেন না এবং আমার এই জায়গা থেকে কোনো সুবিধা ভোগ করেন না।’

(ঢাকাটাইমস/১৪ফেব্রুয়ারি/পিএল)