কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণের ছবি এবং কিছু কথা

সঞ্জীব কুমার দে
 | প্রকাশিত : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:৪৫

যে কোনো কিছু নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে মুক্ত আলোচনা-সমালোচনা হতেই পারে। অনেকেই এই টিকা গ্রহণের ছবি অনেক উচ্ছাস নিয়েই সামাজিক মাধ্যমে দিচ্ছেন। এই ছবি বা পোস্ট নিয়ে অনেক তীব্র সমালোচনা বা কটাক্ষ করেও অনেকে মন্তব্য করছেন।

মতামতের স্বাধীনতার অধিকার থেকেই করছেন হয়ত সবাই। আবার কেউ কেউ প্রস্তুতকারী কোম্পানির ভৌগলিক অবস্থানের কারণেও এই টিকার কার্যকারীতা নিয়ে নানা প্রশ্ন ও তুলছেন। আমি এই বিষয়ে অভিজ্ঞ নই। শুধু জানি নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া এই টিকার অনুমোদন দেয়া হয় নি। আর এই প্রক্রিয়াটা ও বেশ কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করেই করা হয়। তারপর সেটা জন সাধারনের ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়।

এই আমরাই টিকা কবে আসবে তার জন্য কত উৎকন্ঠায় ছিলাম এত কাল। আর এখন এই টিকার ঋণাত্মক ফলাফলের ভয়ে আমরা অনেকেই ভীতসন্ত্রস্ত! এই আমরাই কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হরহামেশাই এন্টিবায়োটিক ও কিন্তু সেবন করছি। উৎপাদক কোম্পানির ভৌগলিক অবস্থান নিয়ে যারা এলার্জিতে ভুগছি, তারাই আবার পাসপোর্টে সেই দেশের চিকিৎসা ভিসা নিয়ে রাখতে ভুল করছি না। হায় সেলুকাস! কি আজব আমাদের দ্বৈত সত্তা ! কিছু উপাত্ত দিচ্ছি যা আপনাদের সবার ই জানা।

১। করোনার সময় অক্সফোর্ডের গবেষক সারাহ গিলবার্ট এই টিকার ফর্মুলা আবিস্কার করেন তার গবেষক দল নিয়ে। মৃত্যুভয়ের জোয়ার এর সময় এই সারাহকে আমরা ত্রাতা হিসাবেই বিবেচনা করে সামাজিক মাধ্যমে উষ্ণতা ছড়িয়েছি। কেউ কেউ তার ছবি কে প্রোফাইল পিকচার ও করেছি। আমাদের দেশে সেই টিকাই দেয়া হচ্ছে।

2। অক্সফোর্ড আর AstraZeneca মিলে এই টিকা বাজারজাত করেছে। AstraZeneca সুইডেন ও ইউকে মিলে তৈরি একটা বৃহৎ ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান যার এই নামে যাত্রা শুরু ১৯৯৯ সালে। ইউকেতে তার মূল অফিস, গবেষণা কেন্দ্র সুইডেনসহ আরো কয়েকটা দেশে। প্রায় ১০০ টার বেশি দেশে এই প্রতিষ্ঠানের তৈরি ঔষধ বাজারজাত করা হয়। হৃদরোগ, গ্যাস্ট্রিক, শ্বাসকষ্টসহ আরো কিছু শাখায় তাদের কার্যক্রম চলছে অনেক বছর ধরে। পৃথিবীতে সবচেয়ে প্রেসক্রাইবড ড্রাগের নাম Losec যা ইউএসএ চলে Prilosec হিসাবে। এই ঔষধটাও কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের তৈরি।

৩। Serum Institute of India: এটা ভারতের পুনেতে অবস্থিত একটা টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। Oxford AstraZeneca টিকা এই প্রতিষ্ঠানও প্রস্তুত করছে। ১৯৬৬ সাল থেকে ভারতীয় এই প্রতিষ্ঠান টিকা তৈরির কাজ করছে। সোয়াইন ফ্লু টিকা, এন্টি রেবিস এজেন্ট, বিসিজি সব শিশুদের অনেক টিকা উৎপাদনের সাথে জড়িত। হলান্ডের একটা ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে ২০১২ সালে অধিগ্রহণও করে এই পুচকা কোম্পানি। কত বড় সাহস! প্রতি বৎসর ১.৫ বিলিয়ন ডোজ টিকা উৎপাদন করে এই কোম্পানি, যা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ ও বটে।

কত টাকা দিয়ে সরকার টিকা কিনল, কত ঠকে গেল কি না ইত্যাদি অবশ্যই আলোচনা হতে পারে। তবে এ দেশে জনসাধারন কিন্তু বিনামূল্যেই পাচ্ছে। এবং বেশ সুষ্ঠ ভাবেই টিকা দান কর্মযজ্ঞ চলছে। চিকিৎসক ও সেবাদানকারীরা খুব দক্ষতার সাথে ও হাসিমুখেই যত্ন করেই টিকা দিচ্ছেন সবাইকে।

গত একববছর ধরে সারা বিশ্ব এক অজানা জীবন ঘাতকের যন্ত্রণায় নিদ্রাহীন। স্বাভাবিক জীবন ব্যপকভাবে বাধাগ্রস্ত। আমার বাবা মার মতো বয়োবৃদ্ধরা গৃহবন্দিত্ব মেনে মানসিক ভাবে অবসন্ন। আমার মতো অজস্র মানুষ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যু ভয়ে পার করেছে অনেক রজনী। ২৩৯৫৭৩৩ টা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এই ভাইরাস। বাচ্চারা খোলা আকাশ দেখে না প্রায় এক বছর। এই শতকের অন্যতম এই অকাল বা অস্বাভাবিক মৃত্যুফাঁদ থেকে বাঁচার একটা আলো এই টিকা।

স্বাভাবিক মৃত্যুর স্বাদ পেতে চায় সবাই। আর তাই এই টিকা অজস্র মানুষের কাছে পাঞ্জেরীর মতো। তাই অনেক আশা নিয়ে উৎসাহ নিয়েই টিকা দিচ্ছেন, বেঁচে থাকার আলো দেখছেন। সেই উচ্ছাস থেকেই টিকা গ্রহণের ছবি দিচ্ছেন, অন্যদের ও উৎসাহিত করছেন। অন্যদের ভয় কাটানোর চেষ্টা করছেন। এখানে খুব নেগেটিভ কিছু আদৌ আছে কি?

অন্যদের সাহস দেয়ার ব্রত থেকেই অনেকে এটা করছেন, পাশাপাশি স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে পারার সম্ভাবনা ও দেখছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি তাদের সবাইকে জানাই সাধুবাদ। দুর্যোগকালে আমরা অন্যকে আঘাত না করে যদি একটু আশা নিয়ে উচ্ছাস করি, খুব কি ক্ষতি তাতে?

আমার বাবা মা কে প্রথম ডোজ দিতে পারায় আমার বেশ ভালই লাগছে। জন্ম মৃত্যু বিধাতার হাতে। তাই বলে চিকিৎসা বা প্রতিশেধক নিতে আপত্তি থাকা উচিত না। ভাল থাকুন সবাই, ভাল থাকুক বাংলাদেশ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :