চাঁদপুরে এতিমখানার সম্পত্তি দখলের চেষ্টা, হামলায় আহত ২

চাঁদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২২:৫৮

চাঁদপুর সদর উপজেলার ৫ নম্বর রামপুর ইউনিয়নের ‘রামপুর ছিদ্দিকিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা’র সম্পত্তি জোরপূর্বক ও সন্ত্রাসী কায়দায় দখল করার উদ্দেশ্যে দেয়াল নির্মাণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রাঙ্গণে এই ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত মো. মাছুম বিল্লাহসহ অন্যান্যরা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দখলে গেলে বাধা দেয়া হয়। এ সময় মাদ্রাসা ও এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলামের ছেলে আবু বকর ছিদ্দীক আরাফাত(৩৫) ও তানভীর আহমেদ ছিদ্দিকীকে(৩৪) বেদম মারধর করে তাদেরকে আহত করা হয়েছে। এই মাদ্রাসায় বর্তমানে ৩৭ জন এতিম পড়াশোনা করছে। এতিম ছাত্রদের চলার রাস্তায় জোর করে দেয়াল নির্মাণ করার চেষ্টা হচ্ছে।

হামলার পর স্থানীয়দের সহায়তায় আবু বকর ও তানভীর চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এই ঘটনায় চাঁদপুর মডেল থানায় রামপুর ফজর আলী মুন্সী বাড়ীর মাছুম বিল্লাহ (৫০), আলী আহাম্মদ (৭০), নুরুল ইসলাম (৭২), শুক্কুর মুন্সী (৫০), আবদুর রবকে (৫২) আসামি করে একটি সাধাণ ডায়েরি করা হয়েছে।

রবিবার বিকালে সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে এবং প্রতিষ্ঠাতা, আহত দুইজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৮১ সালে এই এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলাম। এরপর ১৯৯৬ সালে এতিমখানা সমাজসেবায় নিবন্ধনের আওতায় আসে। বর্তমানে এই মাদ্রাসায় ৩৭ জন এতিম অধ্যয়নরত। দুইজন কুরআনে হাফেজ ও একজন জেনারেল শিক্ষক মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ফজর আলী মুন্সী বাড়ির সামনেই গ্রামের মনোরম পরিবেশে এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্থানীয় লোকজনের সার্বিক সহযোগিতা থাকলেও প্রতিষ্ঠাতার আপন ভাই ও ভাইয়ের ছেলে মাছুম বিল্লাহসহ কিছু ব্যক্তি সম্পত্তির লোভে ও নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি সুন্দরভাবে পরিচালনায় সহযোগিতা না করে মাদ্রাসার পূর্ব ও উত্তর পাশে দুটি পোল্টি ও মাছের খামার গড়ে তুলেছে, যা পরিবেশের জন্য খুবই হুমকি এবং মাদ্রাসার ছাত্ররা বসবাসের জন্য খুবই কষ্টদায়ক।

এলাকাবাসী জানান, মাদ্রাসার পূর্ব পাশে মাছুম বিল্লাহ তার পোল্টি ফার্ম করার পরে দেয়াল দিয়েছেন। সেখানে মাদ্রাসার ছাত্রদের নিরাপত্তার স্বার্থে মাদ্রাসা ও এতিমখানা কর্তৃপক্ষ ৩২ হাজার ২০০ টাকা দিয়েছেন। এরপর মাছুম কাউকে না জানিয়ে করোনাকালে দেয়াল ভেঙে গেট নির্মাণ করেন। উত্তর পাশে জোরপূর্বক সীমানা দেয়াল দিয়েছেন কাউকে না জানিয়ে। এখন আবার এতিম ছাত্রদের চলার রাস্তায় জোর করে দেয়াল নির্মাণ করার চেষ্টায় আছেন।

প্রতিষ্ঠাতা মফিজুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ছোট পরিসরে থাকলেও এখন আমাদের আরো বড় করে পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। এই কারণে আমরা নির্মাণ সামগ্রী এনে রেখেছি। এই প্রতিষ্ঠানটি অবকাঠামো গড়ার জন্য বর্তমানে ২১ শতাংশ ভূমি ব্যবহার হচ্ছে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানের নামে রেজিস্ট্রি করে দেয়া আছে ১২ শতাংশ। আর বাকি ৯ শতাংশ আমার নিজ ক্রয়কৃত ও পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত। এই ৯ শতাংশও মাদ্রাসার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই সম্পত্তির উপরে বর্তমানে সেমিপাকা একটি অফিস কক্ষ, একটি তিন কক্ষের মাদ্রাসা, পাকের ঘর, টয়লেট ও গোসল খানা রয়েছে।

তিনি বলেন, মাদ্রাসার সম্পত্তি জোর পূর্বক দখলের চেষ্টা দীর্ঘদিনের। এসব বিষয় নিয়ে স্থানীয়ভাবে বৈঠক হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। বিবাদীগণ ও আমরা সম্পর্কে ভাই ও ভাতিজা হওয়ার কারণে সুষ্ঠু সমাধান করে মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালনার জন্য শালিস বৈঠক করার তারিখ নির্ধারণ করা হলেও তারা আজ পর্যন্ত আসেননি। বরং সমাধানের কথা বলে একের পর বেআইনি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে আসছে। আমার অনপুস্থিতিতে মাদ্রাসার সম্পত্তি দখল করতে আসলে আমার দুই সন্তান বাধা দেয়। মাছুম নিজে সংঘবদ্ধ হয়ে লোকজনসহ আমার দুই সন্তানকে মারধর করে আহত করে।

এই বিষয়ে বক্তব্যের জন্য অভিযুক্ত কাউকে পাওয়া যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/১৪ফেব্রুয়ারি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :