আল-জাজিরার মিথ্যা ও বানোয়াট রিপোর্ট

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ
 | প্রকাশিত : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৭:৪২

১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ রাতে আল-জাজিরা ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ শিরোনামে প্রায় এক ঘণ্টার যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তা দেখে মনে হয়েছে সরকার ও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক (লবিস্ট) নিয়োগের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত জোট কোটি কোটি টাকা খরচের খেলায় মত্ত হয়েছে। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সদস্যদের হেয়প্রতিপন্ন করাই একটি মহলের উদ্দেশ্য। বেশ কিছুদিন যাবৎ বেশ কিছু অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার বক্তব্য ধারণ করে ইউটিউবে সরকারকে বিব্রত করার যে কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়েছিল তারই ব্লুপ্রিন্ট এভাবে আল-জাজিরা টেলিভিশনে (শ্লট) ক্রয় করে রিপোর্ট প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে প্রহসন বলে যারা প্রচার করেছিল, হেফাজতের আন্দোলন চলার সময়ে হাজার হাজার মৃত্যুর কথা যারা বলেছিল, সেই আল-জাজিরা টিভির মিথ্যা প্রচার বন্ধ হওয়া উচিত এবং মানহানির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবিসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তদন্ত করে শাস্তি দিতে হবে কারা এ ধরনের প্রতিবেদন প্রচারের পেছনে আছে। জিয়া, এরশাদ, বেগম জিয়া- তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনের জন্য কিছু পত্রিকা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছিল। বর্তমান সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করায় স্বার্থান্বেষী মহল টিভি বা পত্রিকায় যাচ্ছেতাই মন্তব্য করে চলেছে। তবে যে যাই বলুক জনগণ জানে সরকারবিরোধী অপপ্রচার করে কোনো লাভ নেই। সরকার জনগণের ওপর আস্থাশীল। কোনো অপপ্রচারেই দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। আন্দোলন-সংগ্রামে ব্যর্থ হয়ে স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক দলগুলো এ ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে, জনগণ ঠিকই তাদের অসৎ চরিত্র উন্মোচন করবে এবং সরকার উৎখাতের নোংরা ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন দেখে দেশে-বিদেশে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে ক্ষমতায় না যেতে পারা একটি গোষ্ঠী। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ শত্রুর মুখে ছাই দেয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এ ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করবে ইনশাআল্লাহ!

বাংলাদেশে আল-জাজিরার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সকলেই কমবেশি জানে। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনায় সাধারণ একটি কবরস্থানের ভিডিও দেখিয়ে ও বাকপ্রতিবন্ধী এক শ্রমিকের সূত্র ব্যবহার করে হাজার হাজার লাশ দাফনের দাবি করা হয়, পরবর্তী সময়ে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, রোহিঙ্গা ইস্যু, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও কোটা আন্দোলন ইত্যাদি নিয়ে একের পর এক উসকানিমূলক ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল আল-জাজিরায়। তবে এমন ঘটনা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঘটলে হয়ত বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা যেত। সৌদি আরব, বাহরাইন, আরব আমিরাত, সিরিয়া, মিসর, চীন, ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ আল-জাজিরা নিয়ে উৎকণ্ঠিত।

আল-জাজিরা সম্পর্কে যারা এখন বিরূপ ধারণা পোষণ করেন, তাদের অনেকেই এক সময় আল-জাজিরার প্রশংসা করতেন। যে দেশে আল-জাজিরার সদর দপ্তর, সেটি কীভাবে এন্টি এস্টাবলিশমেন্ট নীতির ঊর্ধ্বে থাকে, ব্রাদারহুড সমমনারা সরকারে থাকলে কেন চোখ বন্ধ থাকে, এরদোগানের সাংবাদিক নির্যাতন-নিপীড়ন কেন বৈধ হয়- এ সবের কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় না। তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়ে শুধু ডাবিং মিসটেক বলে কতটি হলুদ সাংবাদিকতার সাফাই দেয়া হয়েছে জানি না! সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার যুক্তি দিয়ে যারা আল-জাজিরার পক্ষে বলেন, তারা কখনই জবাব দিতে পারবেন না, আল-জাজিরা কেন ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের নারীদের যৌনদাসীতে পরিণত করা সমর্থন করেছে। কেউ জবাব দিতে পারেননি, লন্ডন ব্রিজে হামলাকারীর মা কেন তার সন্তানের উগ্রবাদী হওয়ার জন্য আল-জাজিরাকে অভিযুক্ত করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার অন্যায়, অনিয়ম আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের আইন নিজস্ব গতিতে এবং স্বাধীনভাবে চলছে। দুর্নীতি দমন কমিশন নিজস্ব আইনগত ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব অনুযায়ী চাপমুক্ত হয়ে কাজ করছে। কোনো ব্যক্তি বিশেষের দায়কে সরকারপ্রধানের সঙ্গে যুক্ত করা সাংবাদিকতার নীতিবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এটি সঠিক সাংবাদিকতা নয়।

সবচেয়ে সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সাহসী ও সুদক্ষ নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। দেশে-বিদেশে বসে দেশ এবং সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার কোনো কাজে আসবে না বরং বুমেরাং হবে। দেশের জনগণ শেখ হাসিনার পাশে রয়েছে। বিগত সময় এত অপপ্রচারের পরও চলমান পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিপুল বিজয় তারই প্রমাণ। আল-জাজিরা টেলিভিশন কর্তৃপক্ষকে দেশবিরোধী অপশক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহযোগী না হয়ে এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক, বিভ্রান্তিকর এবং একপেশে প্রতিবেদন বন্ধ করতে হবে।

লেখক: চেয়ারম্যান, কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগ, সাবেক মহাসচিব, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ও সাবেক প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, ঢাকা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :