জলাবদ্ধতা নিরসনে এলাকাবাসীর উদ্যোগেই বিলের পানি নিষ্কাশন

প্রকাশ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:১৫ | আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:১৭

সুশান্ত মল্লিক, কেশবপুর (যশোর)

যশোরের বিল খুকশিয়াসহ ২৭টি বিলে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে নিজস্ব অর্থায়নে পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নিয়েছে ভুক্তভোগি এলাকাবাসী। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দীর্ঘদিনেও এই এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধান করতে পারিনি। তাই জলাবদ্ধতা নিরসন বাস্তাবায়ন কমিটির ব্যানারে জেলার কেশবপুর উপজেলার ৬৯টি গ্রামের ভুক্তভোগী জনগণ নিজেরাই পানি নিষ্কাশনের এই উদ্যোগ নিয়েছে।

এসব এলাকার মানুষ তাদের নিজস্ব অর্থায়নে ১২৯টি সেচ পাইপের মাধ্যমে গত ১৫ জানুয়ারি থেকে এই সেচ কার্যক্রম শুরু করেছেন। এভাবে পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম সফল হলে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ উপকৃত হওয়ার পশাপাশি প্রায় ২৪ হাজার বিঘা জমিতে ধান আবাদের সুফল পাবে তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যশোরের কেশবপুর উপজেলার সুফলাকাটি ইউনিয়নের ডহুরী গ্রামের হরি নদীর পাশে পানিউন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের গা ঘেষে সারিবদ্ধভাবে ১২৯টি বিভিন্ন আকারের সেচযন্ত্রের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের কাজ চলছে। যে পানি হরি নদীতে নামছে।

জলাবদ্ধতা নিরসন বাস্তাবায়ন কমিটির নেতারা জানান, কেশবপুরের পাজিয়া ও সুফলাকাটি ইউনিয়ন, মনিরামপুরের দুর্বা ডাঙ্গা ও মনোহরপুর ইউনিয়নসহ চারটি ইউনিয়নের মধ্যে ২৭টি বিলের অবস্থান। আর এই সকল এলাকার মানুষ পাউবোর উদাসীনতায় দীর্ঘ দিন যাবত জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে।

এ বিষয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন বাস্তাবায়ন কমিটির কোষাধ্যক্ষ আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুর রহমান বলেন, ‘এক সময় হরি নদী দিয়ে এই বিলগুলোর পানি নিষ্কাশন হত। কিন্তু ধীরে ধীরে নদীটি ভরাট হতে থাকায় বর্তমানে বিলের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতায় রূপ নেয়। আর তখন থেকে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যায় এই বিলগুলোতে। তখন এই বিলের মৎস ঘের গড়ে উঠে। দীর্ঘদিন থেকে এই সমস্যার সমাধান না হওয়ায় এ বছর পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা শুরু করেছি। প্রতিটি মেশিন মালিকে দিন প্রতি দেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। আর ডিজেল খরচ বাস্তবায়ন কমিটির এই কাজে তদারকিসহ নানা রকম কাজের জন্য মোট ২৪ জন নিযুক্ত করা হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য ঘের ও জমি মালিকদের থেকে বিঘা প্রতি এক হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। সকল খরচ এই টাকা দিয়ে  মেটানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১৩ হাজার বিঘা জমি আবাদের যোগ্য হয়েছে। আশা করছি, আগামী এক মাসের মধ্যে পানি  নিষ্কাশন করা সম্ভব হবে।’

কমিটির আহ্বায়ক ও কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম রুহুল আমিন বলেন, ‘এই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে মানুষের দীর্ঘশ্বাস দেখে। এই বিল খুকশিয়ার সঙ্গে ২৭টি বিল জড়িত। কেশবপুর ও মনিরামপুরের এসব বিলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে কোন ফসল হচ্ছে না। গরু, ছাগল, মানুষ না খেয়ে মরছে। তাদের কথা চিন্তা করে এই কাজ শুরু করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এক সময় এখানে টিআরএম চালু হয়েছিল। তখন অনেক জমিতে ফসল হত। হরি নদীটি বেশ গভীর হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। এখন আমাদের দাবি দ্রুত টিআরএম চালু করা হোক।’

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তহিদুল ইসলাম জানান, ওই বিলগুলোতে টিআরএম চালু করার জন্য একটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যা বাস্তবায়ন নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এই প্রকল্প বাস্তাবায়ন হলে বিলগুলোতে আর জলাবদ্ধতা থাকবে না।

(ঢাকাটাইমস/১৬ফেব্রুয়ারি/পিএল)