চার লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বসছে টোল

প্রকাশ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২০:০২ | আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২০:০৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি।

চার লেনে উন্নীত হওয়ার পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ব্যবহারে টোল আদায়ের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্য সড়কের তুলনায় এটি নির্মাণে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এমন নির্দেশনা সরকার প্রধানের।

তবে, শুধু টোল আদায় নয়, এ সড়কে উন্নত বিশ্রামাগার, ওয়াশরুমসহ চালক-যাত্রীদের নানান সুবিধাও নিশ্চিত করা হবে। এই প্রকল্পে ৫ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও দুই পাশে সার্ভিস লেন থাকাও ব্যয় বাড়ার কারণ।

মঙ্গলবার একনেকে ‘সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পটি অনুমোদনের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে এসব কথা জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন। সভার পর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে আসেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

বক্তব্যে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সভায় ঢাকা-সিলেট চার লেইন প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই সড়ক নির্মাণ শেষ হলে টোল আদায় করতে হবে।

তিনি বলেনে, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিনা পয়সায় সেবা পাওয়ার দিন শেষ। আমরা সেবা পেতে চাই, কিন্তু পয়সা দিতে রাজি না। এটা আমাদের কালচার। এই কালচার থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।’

দেশের সব বড় বড় সড়কে টোল আদায়ের ব্যবস্থা করতেও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ওই অর্থ একটা ইয়ার মার্ক অ্যাকাউন্ট করে জমা রাখতে হবে। যেন ওই সড়কগুলো মেরামত করতে হলে ওই অ্যাকাউন্টের অর্থ দিয়ে করা যায়।’

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে এডিবির অর্থায়নে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে।

১৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন হচ্ছে এই মেগা প্রকল্প। এই টাকার মধ্যে সরকারের অংশ ৩ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা ৯০ লাখ টাকা। আর বাকি ১৩ হাজার ২৪৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা দেবে এডিবি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে চার লেনে উন্নীত হওয়া মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয়ের কয়েকগুণ বেশি খচর হচ্ছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেলে উন্নীত করতে। প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হচ্ছে ৮০ কোটি টাকার বেশি।

অথচ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় হয় ২১ কোটি টাকা। ময়মনসিংহ-জয়দেবপুর মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় হয় ২১ কোটি টাকা। হাটিকুমরুল থেকে রংপুর পর্যন্ত চার লেন সড়কে ব্যয় হয় ৫৫ কোটি টাকা।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যা ব্যয় হবার তাই হবে। কস্ট কম্প্রোমাইজ করে কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘এটা একটা হিউজ প্রজেক্ট। এই প্রকল্পে ৫ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আছে। এই কস্টও তো আমাকে ধরতে হবে। এছাড়া দুই পাশে সার্ভিস লেন রয়েছে।’

এই মহাসড়কে যাত্রী ও গাড়িচালকদের নানা সুবিধাও নিশ্চিত করা হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই যে সড়কে যাওয়ার পথে যেন বিশ্রামের জায়গা থাকে, কফি খাওয়ার জায়গা থাকে। একটু বসে হাল্কা হওয়ার জায়গা থাকে। একটা সুন্দর ওয়াশরুম যেন থাকে। নারীদের চেঞ্জিং রুম ও বসার জায়গা যেন থাকে।’

ঢাকা-চট্টগ্রামসহ অন্যান্য মহাসড়কেও এই সব ব্যবস্থা রাখতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে শুরু করে আগামী ২০২৬ সালে ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে ভারত, চীন, মিয়ানমার, ভুটান ও নেপালসহ ছয় দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য এই টেকসই সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে।

বৈঠকে ১৯ হাজার ৮৪৪ কোটি ৫৭ টাকা ব্যয়ের মোট ৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

এরমধ্যে ৬ হাজার ৫৯৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে, বাকি ১৩ হাজার ২৪৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা থেকে আসবে।

প্রকল্পগুলো হলো-

*পশ্চিম গোপালগঞ্জ সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (১ম পর্যায়)’। এর ব্যয় ১৩৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

*চট্টগ্রাম জেলাধীন হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলায় হালদা নদীর উভয় তীরের ভাঙন হতে বিভিন্ন এলাকা রক্ষা’ প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৫ কোটি টাকা।

*বিটিসিএল’র ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্প। এর ব্যয় ৯৪৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

*পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুসঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ’ প্রকল্প (১ম সংশোধন)। এর ব্যয় ৫৩৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বেড়ে ৪ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা হয়েছে।

*বাংলাদেশ বেতার, সিলেট কেন্দ্র আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল সম্প্রচার যন্ত্রপাতি স্থাপন’ প্রকল্প। এতে ব্যয় হবে ৩১ কোটি টাকা।

*ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলাধীন দৌলতখান পৌরসভা ও চকিঘাট এবং অন্যান্য অধিকতর ঝুকিপূর্ণ এলাকা মেঘনা নদীর ভাঙ্গন হতে রক্ষা’ প্রকল্প। এতে ব্যয় হবে ৫২২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

*কাজুবাদাম ও কফি গবেষনা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্প। এর ব্যয় ২১১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

*অনাবাদী পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন’ প্রকল্প। এর ব্যয় ৪৩৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

ঢাকাটাইমস/১৪ফেব্রুয়ারি/ইএস