সাগরের ছাদে ডাকা

প্রকাশ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২২:০৩

রায়হান সরকার

সন্ধ্যার পর ওই বিল্ডিংয়ের ছাদে যাবি, সাগর? ─‘হুম। যাওয়া যায়। তবে সিগারেট তুই নিবি’। আমি হেসে বললাম─ ঠিক আছে, আমিই নেবো।

আমি খুবই উচ্ছ্বসিত। কারণ ওই বিল্ডিংয়ের ছাদে এখনও যাওয়া হয়নি। কন্সট্রাকশনের কাজ পাঁচ বছর ধরে হচ্ছে। সেই কাজ যেন শেষই হয় না...

দুজন চায়ের দোকানে বসে চা শেষ করে যে যার বাসায় চলে গেলাম। ঠিক করলাম সন্ধ্যার আগে বিল্ডিংয়ে সামনে আসবো দুজনে। যেমন কথা তেমন কাজ। ঠিক সন্ধ্যা নামার আগে আগেই আমি চলে গেলাম। দেখি সাগরও দাঁড়িয়ে আছে।

আমি হেসে বললাম─ এতো পাংকচুয়াল হয়ে গেলি কিভাবে? সাগর বাড়তি কিছু বললো না। শুধু বললো─ ‘চল’। দুজনে সিঁড়ি বেয়ে উঠছি আর কথা বলছি।

মনে হচ্ছে যেন আমিই কথা বলছি আর সাগর চুপ হয়ে শুনছে। সাগর কথা কম বলেই জানি। সিঁড়িতে সাগরের এক ধাপ নিচে আমি। এমনিতে সাগর সিঁড়ি বেয়ে খুব হাঁপিয়ে যায়। আজ মনে হয় হাঁপিয়ে উঠেনি। হয়তো কথা না বলার কারণেই।

দেখছি সাগর শুধু ওপরের দিকে উঠছে। হঠাৎ খেয়াল করলাম সাগর এতক্ষণ ধরে একবারও আমার দিকে ফিরে তাকলো না। আমি ওর কাঁধে হাত রাখলাম।

জানতে চাইলাম─ কি হয়েছে? সাগর আমার দিকে তাকিয়ে বললো─ ‘কিছু না’। আমি ভাবলাম সাগর চাপা স্বভাবের তাই হয়তো বলতে চাইছে না।

ঠিক সেই মুহুর্তে আমার ফোন বেজে উঠল। রিং হচ্ছে... আমি পকেট থেকে মোবাইল বের করলাম। অবাক হয়ে গেলাম! দেখি সাগরের ফোনকল! তুলতেই সাগরের গলা!─ ‘কিরে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো? কই তুই?’

ভয়ে আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে গ্যালো! সাগর নিচে থাকলে আমার সঙ্গে ওপরে উঠছে কে তাহলে! ফোনের অপর প্রান্তে সাগরকে আমি কিছু বলতেও পারছিলাম না।

এদিকে দেখলাম আমি যার সঙ্গে সিঁড়ি ভাঙছি সে আমার দিকে তাকাচ্ছেই না! আমি দাঁড়িয়ে পড়েছি দেখে সে বললো─ ‘কিরে ওপরে চল?’ বললাম─ না, আজ আর যাবো না। বাসা থেকে ফোন করেছে।

এরপর পড়িমরি ভোঁ দৌড় নিচের দিকে। সিঁড়ি ভাঙছি দ্রুত। নিচে এসে দেখি সাগর দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে সাগর বিরক্ত হয়ে বললো─ ‘তুই ওপরে ছিলি, আমাকে বললেই তো চলে আসতাম।’

আমি সাগরের দিকে অপলক তাকিয়ে রইলাম। তাকে বলতেই পারলাম না─ আমি এতক্ষণ তোর সঙ্গেই ছিলাম...!