পুলিশের ফেসবুক পেইজে অভিযোগ
অনলাইনে সম্পর্কে জড়িয়ে ছবি নিয়ে ব্ল্যাকমেইল, গ্রেপ্তার যুবক
অনলাইনে সম্পর্কের ফাঁদ পেতে কিশোরী-তরুণীদের ব্যক্তিগত ছবি সংগ্রহ করতেন তিনি। এরপর শুরু হতো তাকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়ার কাজ। এমন অপরাধমূলক কাজে বুঁদ হয়ে এক তরুণীর দুই দুইবার বিয়েও ভেঙে দিয়েছেন। পরে বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং পরিচালিত ফেসবুক পেইজে বিষয়টি জানানো হলে বুধবার বগুড়া থেকে আটক হন রিফাত শেখ ওরফে আকাশ নামের ওই যুবক।
বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. সোহেল রানার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
পুলিশ জানায়, গত ৯ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জ থেকে এক ভদ্রলোক পুলিশের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং পরিচালিত ফেসবুক পেইজে একটি বার্তা পাঠান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তার পরিচিত ও প্রতিবেশী এক মাদ্রাসাছাত্রী অনলাইন সম্পর্কে জড়িয়ে রিফাত শেখ ওরফে আকাশ নামে এক যুবকের দ্বারা প্রতারণার শিকার হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে পুলিশের সহযোগিতা চান।
অভিযোগে জানা যায়, মেয়েটির সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে ও তাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে অনলাইনেই মেয়েটির কিছু অপ্রীতিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন আকাশ। পরবর্তীতে এসব ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে নানাভাবে মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকেন। হাতিয়ে নিতে থাকেন টাকা-পয়সা ও গহনা। শুরুতে মেয়েটি তার পরিবারকে কিছু জানাতে পারেনি। এরই মধ্যে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। পরিবারকে বিষয়টি জানানোর পর পরিবারের পক্ষ থেকে মেয়েটিকে তার সম্মতিক্রমে তড়িঘড়ি বিয়ে দেয়া হয়। মেয়েটির স্বামী ও তার স্বামীর আত্মীয় স্বজনের কাছে মেয়েটির নগ্ন ছবি ও ভিডিও পাঠিয়ে বিয়েটি ভেঙে দেয়া হয়। এর কিছুদিন পর পরিবারের উদ্যোগে মেয়েটিকে পুনরায় বিয়ে দেয়া হয়। আকাশ একইভাবে এ বিয়েটিও ভেঙে দেয়। সর্বশেষ আর কোনো উপায়ন্তর না দেখে প্রতিবেশীর সঙ্গে পরামর্শ করে মেয়েটি ও তার পরিবার। এই ভদ্রলোক সব কথা শুনে নিজেই বাংলাদেশ পুলিশের ফেসবুক পেইজের ইনবক্সে একটি বার্তা পাঠিয়ে মেয়েটির জন্য পরামর্শ ও সহযোগিতা চান। অভিযুক্ত যুবকের সুস্পষ্ট কোনো ঠিকানা বা বিস্তারিত পরিচয় জানা ছিল না ওই শিক্ষার্থীর। তিনি শুধু জানতেন ছেলেটির বাড়ি বগুড়া।
পুলিশ আরও জানায়, বার্তা পাওয়ার পর মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স টিম শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্যপ্রমাণ ও তথ্যাদি সংগ্রহ করে। এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসিকে অবগত করে এবং ওই যুবককে শনাক্ত করতে বগুড়ার পুলিশ সুপার মো. আলী আশরাফ ভূঞাকে অনুরোধ করা হয়। বগুড়ার পুলিশ সুপার তাৎক্ষণিকভাবে তার ডিবি পুলিশের একটি বিশেষ টিম গঠন করেন। এই টিম তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সম্ভাব্য নানা স্থানে রেইড দেয়। অবশেষে বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভোর রাতে আকাশকে বগুড়া থানাধীন কলোনি চক ফরিদ মহল্লার একটি বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আকাশ দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুকে বিভিন্ন মেয়েকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে বন্ধুত্ব করতেন। পরে তাদের সঙ্গে প্রেমের অজুহাতে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ধারণের পর ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন।
এদিকে আকাশকে আটকের পর গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বুধবার সকালেই বাদীর উপস্থিতিতে পর্নোগ্রাফি আইনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইনে মামলা রুজু করেন। আর বিশেষ টিম পাঠিয়ে আসামিকে বগুড়া থেকে গোপালগঞ্জে নিয়ে আসা হয়।
এ ধরনের যে কোনো প্রতারণার বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে এআইজি সোহেল রানা বিজ্ঞপ্তিতে দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন।
ঢাকাটাইমস/১৮ফেব্রুয়ারি/ইএস