স্কোয়াশ চাষে সফল ফেনীর প্রভাষক আফছার

এম শরীফ ভূঞা, ফেনী
 | প্রকাশিত : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৪:০৪

মধ্যপ্রাচ্যের সবজি স্কোয়াশ চাষ হচ্ছে ফেনীতে। দেখতে শসার মত কুমড়া জাতীয় শীতকালীন এই সবজি অতি পুষ্টিকর, সুস্বাদু, সল্পমেয়াদি, উচ্চ ফলনশীল, লাভজনক। স্কোয়াশ চাষ করে এলাকায় বেশ সুনাম অর্জন করেছেন নুরুল আফছার। বর্তমানে তার ক্ষেতে বিষমুক্ত স্কোয়াশের ভালো ফলন হয়েছে। সেইসঙ্গে বাজারে স্কোয়াশের দাম ভালো থাকায় তিনি এগুলো বিক্রি করে অনেক আয়ও করছেন।

জেলার কৃষিবিদরা বলছেন, লাভজনক এ শস্যটি ফেনীর কৃষিতে যোগ করছে নতুন সম্ভাবনা। অপ্রচলিত এ সবজি চাষের উদ্যোক্তা নুরুল আফছার একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। নিজ বাড়ি সোনাগাজী পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের চরচান্দিয়ায় গড়ে তোলা উদ্যোগের নাম দিয়েছেন রহমান এগ্রো। আপন ভাই শহিদল্লাহ কাওছারসহ উদ্যোগটি বড় আকারে নিয়ে যেতে তৈরি করছেন নতুন পরিকল্পনা।

ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রভাষক আফছার জানান, মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ দিনে স্কোয়াশের ফলন পাওয়া যায়। উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় আয়ের পরিমান ছয় গুণ বেশি।

আমাদের দেশে প্রায় সব অঞ্চলেই বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির চাষ করা হয়। শাকসবজির মধ্যে স্কোয়াশ হচ্ছে অন্যতম। মিষ্টি কুমড়া জন্মায় এমন জায়গায় এই সামার স্কোয়াশ চাষ করা যায়। স্কোয়াশ চাষ প্রতি বছর ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

স্কোয়াশে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ আছে। এর পাতাও সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। তাই,স্কোয়াশ চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয় করাও সম্ভব।

নুরুল আফছার জানান, করোনাকালের শুরুতে বাড়িতে ছিলেন তিনি। সেসময় ছাদবাগানে ঝুঁকে পড়েন। কৃষি নিয়ে উৎসাহ থেকে অনলাইনে কৃষিভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেল এবং গ্রুপ, পেইজ থেকে কৃষিজ্ঞান নেয়ার চেষ্টা করেন। বাড়ির পাশে ৪৫ শতক জায়গায় প্রাথমিকভাবে স্কোয়াশ, ক্যাপসিকাম ও ব্রকলি করার পরিকল্পনা থাকলেও কৃষিবিদদের পরামর্শক্রমে স্কোয়াশ ও ক্যাপসিকাম চাষে মনস্থির করেন। ২০ শতক জায়গায় ১২০০ গাছের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শুরু করেন স্কোয়াশ চাষ।

তিনি জানান, নভেম্বরের প্রথম সাপ্তাহে চারা অথবা বীজ বপনের সঠিক সময় হলেও এক মাস পিছিয়ে যান। বগুড়া থেকে ৭০০ চারা একেকটি সাড়ে পাঁচ টাকা করে কেনেন তিনি। ৫০০ বীজ কেনেন ঢাকা থেকে। ৪০ দিনের মাথায় একশ কেজির বেশি ফলন মাঠ থেকে সংগ্রহ করেন। এগুলো ফেনীর পাইকারি বাজারে বিক্রি করেছেন কেজি প্রতি ২০ টাকায়।

সোনাগাজী উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র নাথ জানান, রবি মৌসুমের এ শস্যটি অপ্রচলিত হলেও খুবই লাভজনক। প্রতি গাছ থেকে গড়ে ১০টি ফলন হতে পারে। মানুষ এ সম্পর্কে জানতে পারলে উৎপাদন ও চাহিদা বাড়বে।

ছাদবাগান প্রেমী নুরুল আফসার জানান, তার বাড়ির ছাদে রয়েছে টমেটো, গাজর, আম, লিচুসহ নানাজাতের ফল ও সবজি।

এমন অপ্রচলিত সবজি চাষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এমন কিছু চাইছিলাম, যা মানে গুণে এবং আর্থিকভাবে অনেক বেশি লাভবান করবে। স্কোয়াশ এমন একটি উদ্ভিদ, যা সারাবছরই পাওয়া যায়। এটি উদ্ভিদগতভাবে একটি ফল হিসেবে বিবেচিত হলেও, মসৃণ ত্বক, ছোট বীজ এবং মাংসল শাঁসের জন্য এটিকে সবজি হিসেবে গণ্য করা হয়। ফেনী, নোয়াখালী অঞ্চলে অনেকের কাছে এটি কুছা হিসেবেও পরিচিত। এটি দক্ষিণ আমেরিকার জনপ্রিয় একটি খাদ্য। ফেনীর স্থানীয় বাজারে এ মুহূর্তে সবজির দর নিম্নমুখী হলেও উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় স্কোয়াশে আয়ের পরিমাণ ছয় গুণ বেশি।

সানরাইজ যুব ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডিপ্লোমা কৃষিবিদ আবদুল্লাহ আল মারুফ বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে সামার স্কোয়াশ চাষ করা হচ্ছে। যারা বেকারত্ব ঘোচাতে চান তারা বিদেশি সবজি স্কোয়াশ চাষ করতে পারেন। এটি খুবই লাভজনক।’

তিনি জানান, সামার স্কোয়াশ চাষ কীভাবে করা যায়, চাষ করার জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে কিনা, এক বিঘা জমির উৎপাদন খরচ, এর পুষ্টিমান এবং সর্বোপরি এর মাধ্যমে কীভাবে বেশি আয় করা সম্ভব, সে বিষয়ে আগে জানতে হবে। এ জন্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।

সেনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, ‘স্কোয়াশের দামও ভাল, বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদে কৃষক আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হবে।’

স্কোয়াশের পুষ্টি সম্পর্কে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ইকবাল হোসেন জানান, প্রতিটি স্কোয়াশ ফলে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই ও ভিটামিন বি-৬। স্কোয়াশে নায়াসিন, থায়ামিন, প্যানথোটোমিন এসিড ও ফলিড রয়েছে। এছাড়াও অনেক মিনারেলস রয়েছে। যেমন রয়েছে- ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, খনিজ, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, আয়রন, ক্যারোটিনয়েড এবং অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। তাছাড়া নিয়মিত স্কোয়াশ গ্রহণ ফ্রি রেডিকেলসের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে।

ফেনী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের এই স্কোয়াশ চাষ অল্প খরচের ফসল। এটি দ্রুত বর্ধনশীল একটি সবজি ও অল্প পরিশ্রমেই অধিক আয় করা সম্ভব। এ ফসলে কোনো রোগের উপদ্রবও তেমন নেই। দেশের প্রচলিত কোনো সবজির এমন ভালো উৎপাদন ক্ষমতা নেই। স্কোয়াশ চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে দেশের কৃষি অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে।

(ঢাকাটাইমস/২০ফেব্রুয়ারি/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :