বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি বাড়লেও বাড়ছে না রপ্তানি

মহসিন মিলন, বেনাপোল (যশোর)
 | প্রকাশিত : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:৫১

দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি বেশি হলেও রপ্তানি হয় আমদানির চারভাগের একাংশ। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত পাঁচ বছরে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৮৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮১১ মেট্রিক টন পণ্য এবং বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে ১৮ লাখ ৭২ হাজার ২১০ টন।

বর্তমানে এ বন্দরের স্থল ও রেলপথে ভারতের সঙ্গে প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি ও আট হাজার কোটি টাকা পণ্য সেদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। আমদানি করা পণ্য থেকে পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়ে থাকে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ছয় হাজার ২৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। গত ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি আছে এক হাজার ১০৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক শহর কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ পথে প্রথম থেকে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। বন্দরটির প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করা হলে আমদানির পাশাপাশি রপ্তানি বাণিজ্য আরো বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি হয় ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩২৯ টন পণ্য, রপ্তানি হয় তিন লাখ ২৫ হাজার ৩৮১ টন পণ্য। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি ১৯ হয় লাখ ৮৮ হাজার ৩৫৯ টন, রপ্তানি হয় তিন লাখ ৫২ হাজার ৯৬৩ টন পণ্য। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি হয় ২১ লাখ ৮১ হাজার ১২৩ টন, রপ্তানি হয় তিন লাখ এক হাজার ১১৭ টন পণ্য। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি হয় ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ টন পন্য, ভারতে রপ্তানি হয় তিন লাখ ১৬ হাজার ৯৫০ টন। এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর এই ছয় মাসে আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ৫ হাজার ১১৩ টন এবং রপ্তানি হয়েছে এক লাখ ৭৬ হাজার ২৯৫ টন পণ্য।

বেনাপোল বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল, কেমিক্যাল, মেশিনারি যন্ত্রাংশ, সুতা, ট্রাক চেসিস, মোটরসাইকেল, টায়ার টিউব, বিভিন্ন প্লান্টের মালামাল ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাতপণ্য, মাছ, মেলামাইন, তৈরি পোশাক, খাদ্য দ্রব্য, ঝুট ও টিস্যু।

ভারত বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ডাইরেক্টর মতিয়ার রহমান জানান, ভারত থেকে দেশের স্থলপথে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয় তার ৭০ শতাংশ হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে।

বেনাপোল বন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান, বন্দরে আমদানি পণ্যের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি আজো বাস্তবায়ন হয়নি। বন্দরের ভেতরে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় খোলা আকাশের নিচে কোটি কোটি টাকার পণ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। রোদ-বৃষ্টিতে পণ্যের যেমন গুণগতমান নষ্ট হচ্ছে, তেমনি চুরি হচ্ছে প্রকাশ্যে। এছাড়াও বর্তমানে ক্রেন ও ফর্কলিফটের সংকট রয়েছে দীর্ঘদিনের।

অন্যদিকে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বন্দরের অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রসার হচ্ছে না। আজও বাস্তবায়ন হয়নি ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটান (বিবিআইএন) চার দেশীয় বাণিজ্যিক কার্যক্রম। বেনাপোল বন্দরের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীদেরও। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন হলে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় সম্ভব বলে তিনি জানান।

তবে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, বেনাপোল বন্দর সম্প্রসারণে নতুন কিছু জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো অধিগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। আমদানি করা পণ্যের নিরাপত্তায় বন্দরের চারপাশ দিয়ে উঁচু প্রাচীর নির্মাণ করে সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রক্রিয়া চলছে।

বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার আজিজুর রহমান জানান, আমরা ব্যবসায়ীদের বৈধ সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধির জন্য একাধিকবার চিঠি দিয়েছি।

(ঢাকাটাইমস/২০ফেব্রুয়ারি/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :