হাঁসের ডিম বেশি উৎপাদন হয় সুনামগঞ্জে

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া,সুনামগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৬:৫৫

সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার বিস্তৃর্ণ হাওর এলাকায় অসংখ্য খালবিল হাওর জলাশয় হাঁস পালনের জন্য বিপুল সম্ভাবনাময়। যেগুলোতে হাঁস পালন করায় দেশের সবচেয়ে বেশি হাঁসের ডিম উৎপাদন হয় হাওরবেষ্টিত এ জেলায়।

এ জেলায় বাৎসরিক উৎপাদিত ডিমের পরিমাণ ২৭ কোটি ৫৫ লাখ ১১ হাজার ১৮৬টি। যেখানে জেলায় ডিমের চাহিদা ২৫ কোটি ৬৬ লাখ ৬৯ হাজার ৭১২টি। বছরে ওই জেলায় উদ্বৃত্ত ডিমের সংখ্যা দাঁড়ায় এক কোটি ৮৮ লাখ ৪৭৪ হাজারেরও বেশি।

স্থানীয় হাঁসের খামারিরা জানান, জেলায় জানুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত হাঁসের বিচরণ ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়ে। এসময় হাওরের জমিতে ফসল উৎপাদন করায় হাঁস চড়ে খেতে পারে না। খামারিরা নিজেদের উদ্যোগে হাঁসের খাদ্যের সংস্থান করলেও খোলা হাওরের বিল-বাদলে হাঁস ঘুরে ঘুরে জলজ,মৎস্যসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণ করতে পারে। এই সময় হাঁস এসব খাদ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে ডিমপাড়া বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে,এপ্রিল মাস থেকে পুরো নভেম্বর মাস পর্যন্ত হাঁসের কোনো ধরনের খাদ্য সংকট থাকে না। তাই প্রচুর পরিমাণে ডিম দেয়।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ২৯৫টি, জগন্নাথপুরে ১৭৫টি, দিরাইয়ে ২৯৫টি, বিশ্বম্ভরপুরে ২৮১টি, তাহিরপুরে ১৫৫টি, ধর্মপাশায় ৩৫৮টি, ছাতকে ৩২৩টি, দোয়ারাবাজারে ২৩৫টি, জামালগঞ্জে ২৮০টি, শাল্লায় ১৫৮টি ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৩১৫টিসহ মোট দুই হাজার ৮৭০টি হাঁসের খামার রয়েছে। এসব খামারে ও গৃহস্থ পরিবারে ২৭ লাখ ৩০ হাজার ৪৪২টি হাঁস রয়েছে। সারাবছরে জেলায় হাঁসের ডিম উৎপাদন হয় ২৭ কোটি ৫৫ লাখ ১১ হাজার ১৮৬টি। জেলায় ডিমের চাহিদা রয়েছে ২৫ কোটি ৬৬ লাখ ৬৯ হাজার ৭১২টি। উদ্বৃত্ত থাকে এক কোটি ৮৮ লাখ ৪৭৪ হাজারেরও বেশি ডিম।

জেলায় উৎপাদিত ডিমের দাম প্রতিটি দশ টাকা দরে মোট ২৭৫ কোটি ৫১ লাখ ১১ হাজার ৮৬০ টাকা। চাহিদাকৃত ডিমের দাম ২৫৬ কোটি ৬৬ লাখ ৯৭ হাজার ১২৭ টাকা। উদ্বৃত্ত ডিমের বাজার দর এক কোটি ৮৮ লাখ চার হাজার ৭৪০ টাকা।

তবে জেলার তাহিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের লক্ষিপুর গ্রামের হাঁসের খামারি মঞ্জু মিয়া বলেন, ‘সরকার ছোট ছোট জলমহাল ইজারা দিয়ে যে টাকা পায় হাঁস পালনের জন্য, এগুলো উন্মুক্ত করে দিলে ডিমের উৎপাদন আরও বেড়ে যেত। দেশের গরিব মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হত। আর আমাদের প্রশিক্ষণ ও অর্থ লোন দিলে আমরাও ব্যবসা করে লাভবান হতে পারতাম।’

জেলার জামালগঞ্জ উপজেলা সাচনা বাজার ইউনিয়নের খামারি হানিফ বলেন, ‘ধান-মাছ চাষের চেয়েও হাঁস পালনে লাভ বেশি। তাই সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে হাঁসের খামার করতে পারলে ভাগ্য বদলে দেয়া সম্ভব।’

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের দূঘাপুর গ্রামের হাঁস খামারি আলী হোসেন বলেন, ‘ছোট ছোট জলমহাল সরকার ইজারা না দিলে, এগুলোতে হাঁস চরে প্রাকৃতিক উৎস থেকে হাঁসের সুষম খাবার পেত। তখন ১২ মাসের মধ্যে টানা ১০ মাস হাঁস থেকে ডিম পাওয়া যেত। এই সময় হাসেঁর খাবার সংকট দেখা দেয়।’

এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সরকার হাঁস পালনের জন্য একটি নির্দিষ্ট এলাকা নির্ধারণ করে দিলে এ জেলার মানুষ হাঁস পালন করে নিজেদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারবেন। আমাদের পক্ষ থেকে খামারিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি।’

(ঢাকাটাইমস/২১ফেব্রুয়ারি/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :