অনিন্দ্য অবাধ্যতা

প্রকাশ | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৮:৩৭ | আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২০:১২

নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া

যে অমর্ত্য অরণ্যে আমার জন্ম

সেই  শান্তিনিকেতনে  আমার  শেষ  পরিণতির

নিষ্করুণ  বর্ণনা দিয়ে আর কোনো  লাভ নেই।

 

লাভ-ক্ষতি  যখন  ঝুলে  থাকে  অদৃশ্য  সূতায়

তখন  কোনো  অঙ্ক  কি  লিখা  যায়  

জাবেদা  বা  হিসাবের  খাতায়?


পাপের অতলান্তিকে ডুবে গেছে সুখের সংসার।
নিমেষেই  নন্দনকানন হয়ে গেলো
পাপের মারীতে, পুণ্যের পাতকী মড়কে 

মনুর  বাসের  অযোগ্য  বাস্তু।

জানিনা,  তা  কোন  পরম  প্রকল্পের  বস্তবায়ন!

 

অভিশপ্ত  পাপ  স্বর্গীয় পারিজাতের আড়াল থেকেই

ছড়িয়ে দিলো মায়াবী সম্মোহন।

এক  ফুঁৎকারে  সব  ছত্রখান

কোপানল ছড়িয়ে  পড়ে  যেন  দাউ দাউ  লংকার আগুন।

করুণার  অমৃতরসের অমীয় নির্ঝরিণী
পলকের  বিরূপ  তাপে  জ্বলে-পুড়ে মরুর  সাগর;
পলিমাটি চৌচির, চিক চিক চোরাবালি
চৈত্রের চিতা যার যোগ্য উপমা।

 

দেবদারু বন ছেড়ে দলে দলে পালায় কোকিল
ডালে ডালে জুড়ে বসে কাক;
সোনালি রূপালি বর্ণালি
স্বচ্ছ পাখার প্রজাপতি সব নিরুদ্দেশে,
ভীমরুলের ঝাঁক এসে
ফুলের বাসর  করে জবরদখল
বিকৃত  আনন্দে  মধু লোটে  মৌচাক চুষে।

 

বেপরোয়া জ্বলন্ত সূর্য  উদ্গিরণ  করে  অগ্নির  লাভা

জলাপাই তরুতলে নেই আর মমতার স্নিগ্ধ কোনো ছায়া

চিরহরিৎ  পত্রপল্লব  সব  এখন  বাদামি  দোক্তাপাতা

শান্তির বসন্ত  নেই ঝিরি ঝিরি  পাতার কাঁপনে।

প্রলোভন আর প্রীতির কাফন,

ঐশী  কৃপাকে করে  নির্মম  দাফন।

দু’জনের  বোধে  জ্বলে  হাবিয়া  দোজখ,

কপালে  কপালে  আঁকা  কলঙ্ক  তিলক।

 

কে ওই মায়াবিনী!
সে-কি সরীসৃপ, নাকি কালনাগিনী?
তারে আজো  আলবৎ চিনি;

আমার  শিরায়  শিরায়  সে আমার চিরসঙ্গিনী।
তবু সেই আদি গজবের  ঘোরে
তার সঙ্গে আজো  হয়  নানা  পণ্যের নিত্য বিকিকিনি।

 
নিষিদ্ধ ফলের রসে চেতনা নিকষ;
সবহারা; তবুতো  মানতে  হবে  পরমের  বশ।
‘  প্রথম অবাধ্যতা!  এই বর নাওঃ
মর্ত্যের  মাটি চষে
ঘামের নহর সেচে
তোমাকে ফলাতে হবে
উদরের শস্যদানালতা,

সেভাবেই  দণ্ডিত  হবে  তোমার  অবাধ্যতা,

আর  এভাবেই  তোমার  সৃষ্টির  পূর্ণ  সার্থকতা।'


সহাস্যে বরণ করে নিলে 
বেদনা ও আনন্দের এ-দৈব বর,
মর্ত্যের  ‘প্রবেশপত্র’  তুমি; 

পতিত  হয়েও  হে  ‘প্রথম অবাধ্যতা’!

তুমি সুন্দর।

-