২১ আগস্ট মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়েছিল ‘জঙ্গি’ ইকবাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:১২ | প্রকাশিত : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৩:২৭

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে দলটির সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন হুরকাতুল জিহাদ সদস্য ইকবাল হোসেন ওরফে ইকবাল ওরফে জাহাঙ্গীর ওরফে সেলিম। ওই দিন মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুঁড়েছিল গ্রেপ্তার ইকবাল। হামলার পর আত্মগোপনে চলে যান সেদিনের হামলা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত এই জঙ্গি।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

র‌্যাবের মহাপরিচালক জানান, আত্মগোপনে থাকাকালীন কখনও নিরাপত্তাকর্মী, শ্রমিক, রিকশা মেকানিকের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন ইকবাল। তবে র‌্যাব ও জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার উপর্যুপরি অভিযান ও গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্যে ২০০৮ সালে দেশ ত্যাগ করেন তিনি। প্রথমে ‘সেলিম’ এবং পরবর্তীতে জাহাঙ্গীর নাম ধারণ করেন।

র‌্যাবের ডিজি বলেন, ইকবাল মালয়েশিয়ায় গিয়ে প্রবাসে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর ২০২০ সালের শেষের দিকে অন্যদের মতো তাকেও দেশে ফেরত পাঠানো হয়। সর্বশেষ গতরাতে গ্রেপ্তার হন তিনি।

র‌্যাব বলছে, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসআই) এর সহযোগিতায় র‌্যাবের একটি দল রাজধানীর দিয়াবাড়ী এলাকা থেকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটায় ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইকবালকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ঘৃণিত, কলঙ্কজনক ও বিভীষিকাময় একটি দিন। সেদিন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘৃণ্যভাবে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। আল্লাহর অশেষ রহমত; তিনি বেঁচে যান। আলোচিত গ্রেনেড হামলায় শাহাদত বরণ করেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী আইভী রহমানসহ দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ অনেকেই এখনও সেই দুঃসহ এবং বিভীষিকাময় স্মৃতি ও ক্ষত বয়ে চলেছেন।

২১ আগস্ট ইতিমধ্যে গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে। বিজ্ঞ আদালতে দীর্ঘ সাত বছরে সর্বমোট ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর মামলাটির রায় দিয়েছে।

গ্রেনেড হামলা ও হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন দুই শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪ জন জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) সদস্য। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও অপর ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।

চাঞ্চল্যকর মামলাটির আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ন্যায় র‌্যাবও তৎপরতা অব্যাহত রাখে। ইতিপূর্বে র‌্যাব ২০০৫ সালে জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও তার ভাই মুহিবুল্লাহ ওরফে মফিজ ওরফে অভিকে গ্রেপ্তার করেছিল। এছাড়া এই মামলার সংশ্লিষ্টতায় ২০০৭ সালে ১৬টি আরজিএস গ্রেনেড উদ্ধারসহ এ পর্যন্ত ১৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) এর দেওয়া তথ্যমতে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ আভিযানিক দল গতরাতে রাজধানীর দিয়াবাড়ি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি ইকবালকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ইকবাল ঝিনাইদহের আব্দুল মজিদ মোল্লার ছেলে।

গ্রেপ্তার ইকবালকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, জঙ্গি ইকবাল এইচএসসি পাস। স্কুল ও কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল বলে সে জানায়। জঙ্গি ইকবাল ১৯৯৪ সালে কেসি কলেজ, ঝিনাইদহে ছাত্র সংসদে ছাত্রদলের নির্বাচিত শ্রেণি প্রতিনিধি ছিল। সে ১৯৯৫ হতে ১৯৯৮ পর্যন্ত মালয়শিয়ায় প্রবাসী কর্মজীবী হিসাবে অবস্থান করে। দেশে ফিরে এসে জঙ্গি ইকবাল আইএসডি ফোন ও অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে। এসময় সে, সর্বহারা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে। ২০০১ সালে তার চিন্তা-চেতনা ও মনস্তাত্তিক পরিবর্তন আসে। সে ঝিনাইদহের স্থানীয় এক জঙ্গি সদস্যদের মাধ্যমে সে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজিবি)তে যোগদান করে।

মুফতি হান্নানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল ইকবালের

ইকবাল ২০০৩ সালে মুফতি হান্নান ও অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের সান্নিধ্যে চলে আসে। জঙ্গি প্রশিক্ষণও নেয়। ২০০8 সালে আগস্ট মাসে মুফতি হান্নানের নির্দেশে ঢাকায় চলে আসে ইকবাল। আশ্রয় নেয় গোপন আস্তানায়। সেখানে হুজিবি নেতা মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য সমমানদের সাথে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়। সে মুফতি হান্নানের সাথে বিভিন্ন স্থানে দলীয় গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণ করতো।

২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা সম্পর্কে র‌্যাবকে ইকবাল জানায়, মুফতি হান্নানের নির্দেশে সে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে। মুফতি হান্নান হামলা পরিচালনার জন্য তাকে গ্রেনেড সরবরাহ করেছিল। হামলা চলাকালীন সময়ে সে মঞ্চকে লক্ষ্য করে নিজে গ্রেনেড ছুঁড়েছিল। ঘটনার পর সে ঝিনাইদহে গমন করে এবং সেখানে আত্মগোপনে অবস্থান করতে থাকে।

ঘটনা পরবর্তী র‌্যাব জঙ্গি ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে একাধিক স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। ২০০৮ সালে জঙ্গি ইকবালকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে ঝিনাইদহে তার নিজ বাড়িতে এবং পরবর্তীতে গাজীপুর ও সাভারসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব। এ সময় আত্মগোপনে থাকাকালীন সে নিরাপত্তাকর্মী, শ্রমিক, রিক্সা মেকানিক ইত্যাদি ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল বলে জানায়। ২০০৮ সালে দেশ ত্যাগ করে দুর্ধর্ষ এই জঙ্গি।

দেশে ফিরে পুনরায় সমমনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিল ইকবাল

প্রবাসে আত্মগোপন থাকাবস্থায় প্রথমে ‘সেলিম এবং পরবর্তীতে জাহাঙ্গীর নাম ধারণ করে। এক পর্যায়ে, সে প্রবাসে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত হলে, তাকে ২০২০ সালের শেষের দিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। দেশে ফেরত এসে জঙ্গি ইকবাল আত্মগোপনে থেকে সমমানদের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করে। এসময় এনএসআই ও র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা জঙ্গি ইকবাল সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত রাখে।

এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব প্রধান বলেন, ২০০৮ সালে ম্যানুয়াল পাসপোর্ট ছিল। সেসময় সে নিজ নাম পরিবর্তন করে দেশত্যাগ করে। দেশে ফেরার সময় সে অন্য অবৈধ অভিবাসীর ন্যায় ফেরত আসেন।

বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গিবাদের কোনো ঠাঁই নেই জানিয়ে র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযানিক প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে র‌্যাব বদ্ধপরিকর।

ঢাকাটাইমস/২৩ফেব্রুয়ারি/এসএস/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

স্বস্তি নেই মাছ-মাংসে, ফের বাড়ছে আলু-পেঁয়াজের দাম 

ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৮ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি শুরু

ঢাকায় কর দিয়ে ২৬৮০ বিয়ে 

সংরক্ষিত আসনের এমপিদের মধ্যেও সংখ্যায় এগিয়ে ব্যবসায়ীরা: সুজন

মানবাধিকার ও ভোক্তা অধিকার রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা জরুরি: ড. কামাল উদ্দিন

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রেলকে গড়ে তুলতে হবে: রেলমন্ত্রী

ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

জিম্মি নাবিকদের মুক্তির আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ডিএনসিসি কার্যালয় সরানোর মধ্য দিয়ে কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু 

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :