ইটভাটার মাটিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফরিদপুরের রাস্তা

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৭:৩৪

ফরিদপুর জেলার মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের পাশে অবস্থিত বিভিন্ন ইটভাটায় পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ট্রাক থেকে মাটি উপচে পড়ে বিভিন্ন স্থানে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও হালকা বৃষ্টিতে সড়ক কর্দমাক্ত হয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি বিধিমালার তোয়াক্কা না করে ফরিদপুর সদরের টেপাখোলার তাড়াইল সড়ক, ফরিদপুর-সালথা আঞ্চলিক সড়ক, বোয়ালমারীতে মাঝকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়ক, ফরিদপুর-সদরপুর সড়ক, ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের তালমার মোড় এলাকায় দিয়ে টানা হচ্ছে ইট ভাটার মাটি। এই অবস্থায় বৃষ্টি হলেই সড়কে ঝরে পড়া মাটি পিচ্ছিল হয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দিপক রায় জানান, জেলায় ১১৯টি ইটভাটার মধ্যে ২৫টি অবৈধ। কারণ এগুলোর ১৪টির লাইসেন্স চলতি বছরে নবায়ন করা হয়নি। আর পরিবেশ ছাড়পত্র নেই ১১টির।

অবৈধ ভাটাগুলোর অধিকাংশই মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের পাশে অবস্থিত। এসব ইটভাটার মালিকেরা বর্ষা মৌসুমের কথা মাথায় রেখে ইট তৈরির জন্য ফসলি জমি কিংবা বিভিন্ন নদ-নদী থেকে মাটি কেটে এনে সড়কের পাশে স্তূপ করে রাখছেন। বৃষ্টির পানিতে এসব মাটির স্তূপ থেকে মাটি ধুয়ে সড়কের ওপর এসে পড়ে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতি বছরই এ সড়কগুলো দিয়ে চলাচলকারী মোটরসাইকেল আরোহী এবং পথচারীরা মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হন এবং দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।

ফরিদপুর সদর উপজেলার তাড়াইল সড়কের তালতলা এলাকা থেকে মান্দার তলা সুইজগেট পর্যন্ত সড়কটির দুই পাশে গড়ে উঠেছে বৈধ-অবৈধ ২৯টি ভাটা। প্রতিদিন পদ্মা নদীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাটার কাজে ব্যবহারের জন্য মাটি বোঝাই ট্রাকে ওই সড়ক দিয়ে নেয়া হয়। নেয়ার সময় ট্রাক থেকে উপচে সড়কের উপর মাটি পড়ে এবং ট্রাকের চাকায় লেগে থাকা মাটি সড়কে পড়ে আস্তরণ তৈরি করেছে। এই অবস্থা সড়কের প্রায় চার কিলোমিটারে।

এই পথ দিয়ে চলাচলকারী সংবাদকর্মী তরিকুল ইসলাম হিমেল জানান, একদিকে ধুলা-বালি, অন্যদিকে রাস্তায় মাটির পুরু আস্তরণ। সড়কটি ব্যবহার এখন অভিশপ্ত হয়ে গেছে।

জেলার বোয়ালমারীর উপজেলার মাঝকান্দি-ভাটিয়াপাড়া সড়কের শেখর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর এলাকায় অবস্থিত আল আলী অটো ইটভাটার মাটি মহাসড়ক ঘেঁষে রাখা হয়েছে। এই ভাটায় ২৫ থেকে ৩০ ফুট উচ্চতার মাটির স্তূপ রয়েছে। এখানকার মাটি পড়ে ভাটার উভয় দিকের প্রায় আধা কিলোমিটার পর্যন্ত সড়কে পুরু আস্তরণ পড়ে আছে। একই অবস্থা মাইজকান্দি-ভাটিয়াপাড়া সড়ক ঘেঁষে উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুর এলাকা এবং সাতৈর ইউপির সাতৈর।

এ ব্যাপারে ফরিদপুরের সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) হাসানউজ্জামান বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত এবং প্রচলিত আইন মেনে ইটভাটা পরিচালনা করা উচিত। ভাটায় সরবরাহকৃত মাটি রাস্তায় পড়ে রাস্তার যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তা পিচ্ছিল হওয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল হোসেন বলেন, রাস্তায় ভাটায় টানা ট্রাক থেকে পড়া ভেজা মাটির ফলে সড়কের বিটুমিন নষ্ট হয়ে যায়। এতে সড়কের ক্ষতি হয় প্রচুর। আমরা সংশ্লিষ্ট ভাটা মালিক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের বিষয়টি জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য সড়ক বিভাগ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিষয়টি তোলা হয়েছে। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।

এ ব্যাপারে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, জেলার সব ভাটা মালিকদের ডেকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছি। ট্রাকে মাটি টানার সময় ঢেকে রাখতে বলেছি। ভাটার সামনের সড়কে পড়ে থাকা মাটি প্রতিদিন অপসারণের জন্য ভাটা মালিকদের নির্দেশ দিয়েছি।

তিনি বলেন, গত আইনশৃঙ্খলা সভায় এ বিষেয় সিদ্ধান্ত হয়েছে কোনো ভাটা মালিক এই নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৩ফেব্রুয়ারি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :