ভাই-ভাতিজার হাতে আহতের পর বৃদ্ধের মৃত্যুর অভিযোগ

প্রকাশ | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৯:৩৯

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আপন ভাই, ভাতিজা ও ভাগিনার হাতে আহতের দুই মাস পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন এক বৃদ্ধ। নীলফামারীর সৈয়দপুরে বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের লক্ষণপুর কদমতলী বাড়াইশালপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। সোমবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে তিনি মারা যান।

পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। ঘাতকরা স্বপরিবারে পলাতক। নিহত ইদ্রিস আলী প্রামানিক(৬২) সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট ছিলেন।

এলাকাবাসী জানায়, ওই গ্রামের মৃত আশরাফ উদ্দিন প্রামানিকের ছেলে ইদ্রিস আলী প্রামানিক পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া জমির সঙ্গে বাড়ি করার জন্য পাঁচ বছর আগে জনৈক ইউনুস কন্ট্রাক্টরের কাছ থেকে পাঁচ শতক জমি কিনেছেন।

সেই জমিতে ইদ্রিস বাড়ি করতে গেলে তারই বড় ভাই খায়রুল ইসলাম লাল্টু দাবি করেন তিনি ওই জমি আগেই কিনেছেন মৃত. কছিম উদ্দিনের ছেলে আবুল কালাম আজাদের কাছ থেকে এবং তা খায়রুল ইসলামের নামেই রেকর্ডভুক্ত রয়েছে। এই কারণে তিনি বাড়ি করতে বাধা দেন এবং জমির দখল ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন।

এই বিরোধের ধারাবাহিকতায় গত ১৬ ডিসেম্বর উভয় পক্ষের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে খায়রুল ও তার ছেলে মাসুদ রানা ও মাছুম এবং ভাগিনা আবুল কালাম আজাদ অতর্কিতভাবে হামলা করে ইদ্রিস আলীর উপর। এসময় খায়রুল ইসলাম তার হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র ‘বাইস’ দিয়ে সজোরে আঘাত করলে ইদ্রিস আলীর বাম চোখ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এতে তিনি মাটিতে পড়ে গেলে সবাই মিলে এলোপাথারি ইটের টুকরা দিয়ে আঘাত করে তার পুরো শরীর থেতলে দেয়।

পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ইদ্রিস আলীকে উদ্ধার করে তার পরিবারের লোকজন। প্রথমে তাকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসক জানান, রোগীর অবস্থা ভালো না। চোখে আঘাত পাওয়ার কারণে তার মস্তিস্কের সবগুলো রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এজন্য ব্লাড সার্কুলেশন বাধাগ্রস্থ হওয়ায় ব্রেণ ড্যামেজ হয়ে গেছে। এ কারণে তার চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়।

এই অবস্থায় সেখানে ১৮ দিন চিকিৎসার পর বাড়িতে নিয়ে আসা হয় এবং মাঝে মাঝে হাসপাতালে গিয়ে চেকআপ করানো হলেও তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। এরই মাঝে গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে তিনি মারা যান।

আগের সেই হামলার ঘটনায় নীলফামারী জেলা জজ আদালতে চারজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এতে আসামিরা হলেন খায়রুল প্রামানিক, তার ছেলে মাসুদ ও মাছুম এবং ভাগিনা আবুল কালাম আজাদ।

নিহত ইদ্রিস আলীর ছোট ছেলে সোহেল রানা বলেন, আমার বাবা অত্যন্ত শান্ত ও ভদ্র মানুষ। তার অন্য ভাইয়েরা বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকলেও তিনি কোনো দিন তাদের কাজে যেমন বাধা দেননি তেমনি নিজেও সেই ধরনের কোনো কাজে জড়িত হননি। কিন্তু তারাই আবার আমার বাবার সরলতার সুযোগ নিয়ে অন্যায়-অবিচার করেন।

সোহেল বলেন, এই জমি নিয়ে বিরোধে তারা তাদের ভূমিদস্যুতার রূপ নিয়ে বার বারই আমাদের উপর আঘাত করার চেষ্টা করেছেন। তারা সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আমাদের জমি জবরদখল করতে চান। এতে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কারণেই তারা আমার বাবাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের আঘাতের কারণেই আমার বাবা সেই দিন থেকে অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং আজ মারা গেলেন। আমরা এর বিচার চাই।

বড় ছেলে শাহিন বলেন, বাবার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও তারা বাধা দিয়েছে। পরবর্তীতে তারা সম্পূর্ণ বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেও পারে।

অভিযুক্ত খায়রুলের পরিবারের সদস্যরা সবাই পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাদের বাড়িতে গিয়ে ভাড়াটিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গেলে ইদ্রিস আলীর ভাই আব্দুল প্রামানিক তেড়ে এসে বলেন, সাংবাদিকরা কেন এখানে এসেছেন। এখানে কি মার্ডার হয়েছে যে তাদের আসতে হবে। এটা আমাদের পারিবারিক ব্যাপার। আমরাই এর সমাধান করবো। সাংবাদিকের প্রয়োজন নেই। আমার ভাই ক্যান্সার আক্রন্ত হয়ে মারা গেছেন।

সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত খান বলেন, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যের পরিবারের দাবি ইতোপূর্বে মারামারির ঘটনায় তিনি চোখে ও শরীরে আঘাত পাওয়ার কারণে অসুস্থাবস্থায় মারা গেছেন। তাই লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। যাতে আঘাতের কারণেই মৃত্যু হয়েছে না বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মারা গেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৩ফেব্রুয়ারি/কেএম)