কাশ্মীরে অস্ত্র বিরতিতে সম্মত ভারত-পাকিস্তান

প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৭:৪৫ | আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৮:১৭

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

ভারত ও পাকিস্তান বিতর্কিত কাশ্মীর সীমান্তে গোলাগুলি বন্ধে সম্মত হয়েছে । উভয় দেশের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়ে এই তথ্য জানানো হয়েছে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ‘বিশ্বের অন্যতম বিপদজনক সীমান্ত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে প্রায়শই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সেনাসদস্য ছাড়াও দুই দেশের সেনাদের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে অঞ্চলটির মানুষ হতাহত হয়।’

বৃহস্পতিবার সামরিক বাহিনীর যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সীমান্তে পারস্পরিক স্বার্থ সংরক্ষণ ও টেকসই শান্তি অর্জনের স্বার্থে দুই দেশের সামরিক অভিযানের প্রধানরা বড় ইস্যুর সমাধান ও উদ্বেগ প্রশমনে একমত হয়েছে।’

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে ভারত এবং পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযানের মহাপরিচালক র‌্যাংক পর্যায়ের কর্মকর্তারা তাদের কার্যালয়ের হটলাইনের মাধ্যমে আলোচনা করেন। সেখানে উভয়পক্ষ সকল চুক্তি কঠোরভাবে মেনে চলার বিষয়ে সম্মত হয়। অবাধ, মুক্ত এবং আন্তরিক পরিবেশে দুই পরমাণুধর দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে ওই আলোচনা হয় বলেও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়।

কাশ্মীরে সীমান্ত বিভাজনকারী রেখা লাইন অব কন্ট্রোলে (এলওসি) শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে ২০০৩ সালেও একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তি করেছিল এশিয়ার পারমাণবিক ক্ষমতাধর দুই প্রতিবেশী। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উভয়পক্ষ সেই চুক্তি বারবার লঙ্ঘন করেছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যানাসুরে, গত বছর ভারতের হালকা অস্ত্র এবং কামানের গোলায় পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের ২৮ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয় এবং ২৫৭ জনের বেশি আহত হয়। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ভারতের বাহিনী অন্তত ১৭৫ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে বলে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

অন্যদিকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, ২০২০ সালে লাইন অব কন্ট্রোল বরাবর পাকিস্তান কমপক্ষে ৫ হাজার ১৩৩ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এতে ভারতে ২৪ সেনা , ২২ বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ১৯৭ জন আহত হয়েছে। 

নয়াদিল্লির এক সরকারি কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় বসবাসরত মানুষের কথা ভেবেই এমন অস্ত্রবিরতির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেখানে এখন যে পরিস্থিতি তাতে প্রায়শই সাধারণ মানুষ বন্দুকযুদ্ধের কবলে পড়েন। সহিংসতার মাত্রা ও সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমনের ব্যাপারে ভারত সতর্কভাবে আশাবাদী। 

নিজের নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছার কথা জানিয়ে ভারতের ওই সরকারি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ভারত নিয়ন্ত্রণরেখার পাশ দিয়ে মোতায়েন সেনার পরিমাণ কমিয়ে আনবে না। কাশ্মীর উপত্যকায় অনুপ্রবেশ বা পাল্টা জঙ্গিবাদ অভিযান বন্ধের লক্ষ্যেই এসব সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল।’

সীমান্তে দুই পক্ষের গোলাগুলি বন্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ভারত শাসিত কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মাহবুবা মুফতি। তিনি বলেন, কাশ্মীরের শান্তি ফেরানোর জন্য দুই দেশের মধ্যে মিটমাট এবং রাজনৈতিক সংলাপে বসা উচিত।

তবে পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দারা ভারত-পাকিস্তানের অস্ত্র বিরতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।  জীবরন আহমেদ নামে ভারত শাসিত কাশ্মীরের এক গবেষক শান্তি আনার জন্য প্রকৃত পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়ে বলেন, পূর্বেও আমরা এ ধরনের প্রহসনমূলক ‍বিবৃতি দেখেছি। আসল বিষয় হলো দুটি দেশই কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের জীবনকে গুরুত্ব দেয় না। যখন তাদের পক্ষে যায় তখনেই কেবল তারা পদক্ষেপ  গ্রহণ করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা কোনো ধরনের শান্তি দেখতে পায়নি।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক পারভীন সাওহনি আল জাজিরাকে বলেন, কাশ্মীরে শান্তি আনতে উভয় দেশের রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার সমস্যা রয়েছে।

 

(ঢাকাটাইমস/২৫ফেব্রুয়ারি/কেআই)