উইঘুরদের অবস্থা দেখতে প্রতিনিধি দল পাঠানোর প্রস্তাব ইইউর

প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৯:০৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

চীনের জিনজিয়াং রাজ্যে গিয়ে উইঘুর মুসলিমদের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল পাঠানোর প্রস্তাব করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিভাগের প্রধান জোসেপ বরেল বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন চায় জাতিসংঘের একটি দল জিনজিয়াং প্রদেশে যাক। চীনের উচিত উইঘুর অধ্যুষিত জিনজিয়াং প্রদেশে জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্তকারী দলকে ঢুকতে দেয়া। সেখানে কী চলছে, তা খতিয়ে দেখা ও বিশ্ববাসীর সামনে এ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তুলে ধরতে জাতিসংঘকে চীনের সহযোগিতা করা প্রয়োজন।

জাতিসংঘে মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাশেলেট চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের সঙ্গে চীন ঠিক কী ব্যবহার করছে তা দেখতে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে চীনে যেতে চেয়েছেন। কিন্তু চীন এখন পর্যন্ত এই প্রস্তাবে সম্মত হয়নি।

এর আগে গত সোমবার কানাডার সংসদে চীন এবং উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে একটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে। সর্বসম্মতিক্রমে সেখানে বলা হয়েছে, চীন উইঘুরদের ওপর ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার শেষ পর্যায়ে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’ও একই কথা বলেছিলেন। তিনিই প্রথম চীনের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে বলেছিলেন, উইঘুর মুসলিমদের গণহত্যা করছে চীন। তার এই বক্তব্যের জেরে পম্পেও এবং বেশ কয়েকজন মার্কিন প্রশাসনিক কর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বাধীন সরকার।

তবে চীন বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। গত সোমবার জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং উইঘুরদের প্রসঙ্গে বলেন, ‘উইঘুর মুসলিম অধ্যুষিত জিনজিয়াং প্রদেশে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। সকল প্রক্রিয়া যথাযথ আইন মেনেই চলছে। সেখানে বিগত চার বছরে কোনো বড় ধরনের সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, জিনজিয়াংয়ে সামাজিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের সাক্ষী উইঘুর মুসলিমরা। সেখানে গণহত্যা, বন্দিশিবিরে জোর করে কাজে বাধ্য করা ও ধর্মীয় নিপীড়নের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এসব অভিযোগ চীনের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করতে আনা হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলির বক্তব্য, চীন জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় দশ লাখ উইঘুর মুসলিমকে একটি ক্যাম্পে বন্দি করে রেখেছে। তাদের ধর্মের অধিকার, সন্তান উৎপাদনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। উইঘুর মুসলিমদের সঙ্গে কার্যত দাসের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও এই অভিযোগগুলি চীন বরাবরই অভিযোগ করেছে।

তবে চীন না মানলেও জিনজিয়াংয়ের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়া উইঘুররা ভয়াবহ অত্যাচারের কথা বলেছেন। সমস্যা হলো, এখনো পর্যন্ত ওই অঞ্চলে কোনো সংগঠনকে যেতে দেয়নি চীন; ফলে জিনজিয়াংয়ে আসলে কী ঘটছে তা এখনও বিশ্বাবাসীর কাছে অস্পষ্ট।

বিবিসির এক অনুসন্ধানে উইঘুরদের জোরপূর্বক শ্রমিক হিসেবে ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি ক্যাম্পের রক্ষী ও কর্মকর্তারা উইঘুর নারীদের নিয়মিত ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করছেন বলেও উঠে আসে ওই অনুসন্ধানে। চীনের সরকার অবশ্য এই প্রতিবেদন খারিজ করে দিয়েছে। এ বিষয়ে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিবিসির ওই প্রতিবেদন ‘মনগড়া’ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে লেখা।

 

(ঢাকাটাইমস/২৫ফেব্রুয়ারি/কেআই)