পদে পদে প্রতারণার ফাঁদ-১

প্রকাশ | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৭:২০ | আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৭:৩৬

কাজী রফিক

এক কেজি লাল আঙুরের বর্তমান বাজারদর ৪০০ টাকা। ক্রেতাকে যে ঠোঙায় এক কেজি আঙুর দেয়া হয় তার ওজন প্রায় ১০০ গ্রাম। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি। একটি ঠোঙার ওজন ১০০ গ্রাম ধরা হলে ওই ঠোঙায় এক কেজি আঙুর নিলে মূলত ক্রেতা আঙুর পাচ্ছেন ৯০০ গ্রাম। অর্থাৎ ক্রেতা ওই কাগজের ঠোঙা কিনে নিচ্ছেন ৪০ টাকায়। যদিও এক কেজি কাগজের ঠোঙার বাজারমূল্য ৪০ টাকা। সে হিসেবে ১০০ গ্রাম ওজনের ওই ঠোঙার মূল্য দাঁড়ায় মাত্র চার টাকা। চোখের সামনে চার টাকা মূল্যের একটি ঠোঙা ৪০ টাকায় গছিয়ে দেয়া হচ্ছে। আর ক্রেতা দেখছেন তিনি এক কেজি আঙুর কিনেছেন। কিন্তু তিনি আঙুর পেলেন ৯০০ গ্রাম।

এই গেল একটা প্রতারণা। এরপর মিষ্টি, বেকারির টোস্ট বিস্কুট। যে বাক্সতে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে সেগুলোর ওজনও অস্বাভাবিক। কিন্তু নানান রঙ আর ঢঙের কার্টন দেখে ক্রেতার চোখেই পড়ে না, তাকে প্রতি কেজিতে এক থেকে দেড়শ গ্রাম পরিমাণ পণ্য কম দেয়া হচ্ছে। মূলত ব্যবসায়ীরাই বাড়তি ওজনের কার্টন বানিয়ে থাকেন। কার্টনের আকার ও রঙের পাশাপাশি কার্টনটি কেমন ওজনের হবে, সেটির ওপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারণ করেন কার্টন প্রস্তুতকারীরা।

এবার চলুন নারীবান্ধব বিপণিবিতানে। সেখানে বিদেশি প্রসাধনীর এক বিশাল  আয়োজন। একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, বিদেশি সে পণ্যের গায়ে আমদানিকারকের নাম নেই। যদি আমদানিকারকই না থাকে, তাহলে দেশের বাইরে থেকে এ পণ্যটি দেশে এলো কীভাবে? অবশ্যই অবৈধ পথে। এটা গেল বৈধ-অবৈধতার বিষয়। এবার দেখা যাক, পণ্যটি আসল নাকি নকল?

নারীদের চোখ বরাবরই আকর্ষণীয়। সে চোখকে আরও একটু আকর্ষণীয় করে তুলতে কাজলের চাহিদা বরাবরই বেশি। এক্ষেত্রে ভারতের লেকমি’র প্রতি এ দেশের নারীরা বেশ আগ্রহী। রাজধানীর বাজারগুলোতে লেকমি’র যে কাজল বিক্রি হয় তার আগে ভারতীয় রুপি লেখা রয়েছে ১৮০ আরএস। অথচ পণ্যটি দেশে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০০ টাকায়! ভারতের এক রুপি সমান বাংলাদেশের এক টাকা ১৬ পয়সা। সে হিসেবে ১৮০ রুপি মানে ২০৮ টাকা ৮০ পয়সা। চোরাই পথে পণ্য নিয়ে এলেও তো এত কমে বিক্রি করা সম্ভব না। তার মানে আসল বলে যে পণ্যটি ক্রেতাকে গছিয়ে দেয়া হচ্ছে, সেটি মূলত নকল।

একই অবস্থা ভারতীয় ও পাকিস্তানি ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি, ইম্পেরিয়াল লেদার সাবান, পন্ডস, গোরি, চাঁদনী ক্রিমের। ভারতীয় পণ্যের পাশাপাশি দেশের বাজারে বেশ শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে দুবাই, কাতার, কুয়েত, মালয়েশিয়ার কসমেটিকস। যার বেশিরভাগই নকল। এভাবেই পদে পদে প্রতারণার ফাঁদে ঠকছেন ক্রেতারা।  

লেখক: সাংবাদিক