তামিমার সঙ্গে প্রতারণা করেন রাকিব!

প্রকাশ | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৮:৪৪ | আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৯:১৯

ফরমান শেখ, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) থেকে

আনন্দ উৎসবে বিয়ে করে এখন সমালোচনা আর মামলা-মোকদ্দমা জালে জড়িয়েছেন আলোচিত ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও বিমানবালা তামিমা দম্পতি। সাবেক স্বামীর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক চলমান অবস্থায় তামিমা নাসিরকে বিয়ে করেন দাবি করে মামলা ঠোকেন রাকিব। কিন্তু তামিমার পরিবার বলছে, বৈধভাবেই বিয়ে হয়েছে। অনেক আগে রাকিবকে তালাক দিয়েছেন তামিমা। বরং রাকিব শুরু থেকে প্রতারণা করে আসছেন তামিমার সঙ্গে।

তামিমার সঙ্গে বিয়ের আগে নিজেকে ঢাকায় দোকান মালিক বলে পরিচয় দিলেও পরে জানা যায় রাকিব একজন দোকান কর্মচারী। এরপর তাদের সংসারে ঝামেলার শুরু এবং পরিণতিতে তালাক। এখন তিনি তামিমার পাসপোর্ট নিয়ে সুবিধা আদায়ের জন্য বিভ্রান্তির চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ তামিমাদের।

তামিমার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, এলাকার কেউ তামিমাকে চেনে না। এলাকায় খুব একটা যেতেন না তিনি। পরিবারে তার ডাকনাম শবনম।

গত বুধবার তামিমা ও নাসিরের বিরুদ্ধে মামলা করেন রাকিব। মামলায় অভিযোগ করা হয়, তামিমার সঙ্গে নাসিরের বিয়ে ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। এর প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন নাসির হোসেন। তিনি দাবি করেন, তারা বৈধভাবেই বিয়ে করেছেন। আগের স্বামীকে তালাক দিয়ে নতুন সংসার শুরু করেছেন তামিমা।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার বড় লোকেরপাড়া তালুকদার বাড়ি এলাকার শহিদুর রহমান স্বপনের মেয়ে তামিমা সুলতানা ওরফে শবনম। তার মায়ের নাম সুমী আক্তার গিনী। মা সুমি আক্তার একসময় জাতীয় পর্যায়ে হকি খেলতেন। আর বাবা চাকরি করতেন ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে।

সরেজমিনে জানা যায়, তামিমা ছোটবেলা থেকে এলাকাবিমুখ। তিনি টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও কুমুদিনী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ক্রিকেটার নাসিরের সঙ্গে তামিমার বিয়ে নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় হলেও এলাকার কেউ তাকে চেনেন না।

তামিমার চাচা বিপ্লব তালুকদার ওরফে বিপ্লব মাস্টার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘তামিমাকে শবনম হিসেবেই ডাকি আমরা। সে সর্বশেষ সৌদি এয়ারলাইনসে চাকরি করেছে বিমানবালা হিসেবে। কয়েক বছর আগে রাকিব হাসানের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে হয় তামিমার। কিন্তু পরিবার থেকে ওই বিয়ে মেনে নেয়া হয়নি। তবু তারা দুজনে সংসার করে।’

বিপ্লব তালুকদার বলেন, ‘রাকিব প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তামিমাকে বিয়ে করেছিল। রাকিব ঢাকায় একটি দোকানের কর্মচারী ছিল। কিন্তু বিয়ের আগে সে তামিমাকে বলেছে দোকানটা তার। বিয়ের পর তামিমা সত্যতা জানতে পারে। এর মধ্যেই তাদের ঘরে একটি কন্যাশিশু আসে।’

নানা কারণে রাকিব ও তামিমার মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না দাবি করে তামিমার চাচা বলেন, ‘পারিবারিকভাবেই আমরা জানি তামিমা রাকিবকে তালাক দিয়েছে। তালাকনামা তার স্বামীর ঠিকানায় পাঠিয়েছে। হয়তো তার স্বামী সেটা স্বাক্ষর করেনি। ক্রিকেটার নাসিরের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর থেকেই টেলিভিশন ও পত্রিকায় আমরা তাদের নিয়ে বিভিন্ন খবর দেখতে পাচ্ছি। অনেকে আরও বেশি ভুল তথ্য দিয়ে মিথ্যা গুজব ছড়াচ্ছে।’

তামিমার বাবা শহিদুর রহমান স্বপন মোবাইল ফোনে ঢাকাটাইসেকে বলেন, তামিমা টাঙ্গাইল থেকে এসএসসি ও এইচএসসির পর ঢাকায় অনার্স করেছে। টাঙ্গাইলের কুমুদিনী মহিলা কলেজে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার আগে তার এয়ারলাইনসে চাকরি হয়। এরপর থেকে ঢাকায় বসবাস শুরু করে সে। আমিও ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতাম। এ ছাড়া বিদেশেও থেকেছি কয়েক বছর। ছোটবেলা থেকেই তামিমা এলাকায় খুব বেশি যেত না। এ কারণে এলাকার মানুষ তাকে চেনে না। তবে ক্রিকেটার নাসিরের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর তামিমাকে নিয়ে মিথ্যা প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালতে মামলার করেন নাসিরের স্ত্রীর সাবেক স্বামী মো. রাকিব হাসান। নাসির ও তামিমা সুলতানার বিরুদ্ধে মামলার ডকেটে পাসপোর্টের একটি নথী সংযুক্ত করেছেন রাকিবের আইনজীবী ইশরাত হাসান। তাতে তামিমার স্বামীর নাম উল্লেখ রয়েছে ‘রাকিব হাসান’। একই সঙ্গে ইমার্জেন্সি কন্ট্রাকেও স্বামী রাকিব হাসানের নাম উল্লেখ রয়েছে। আর এ নিয়েই বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হয় যে, তামিমার দেখানো তালাকের নোটিশের তারিখের দুই বছর পরেও পাসপোর্টে স্বামীর নাম রাকিব রয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তামিমার বাবা শহিদুর রহমান স্বপন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যে পাসপোর্ট দেখানো হয়েছে, সেটা ২০১৮ সালের রি-ইস্যু করা পাসপোর্ট। রি-ইস্যু করা পাসপোর্টে কিছুই পরিবর্তন না হওয়ার কারণে তার পাসপোর্টে আগের স্বামীর নাম রয়ে গেছে। এর আগে তামিমা আমেরিকায় ফ্লাইট করার সুবাদে সেখানকার পাঁচ বছরের একটা ভিসা পায়। সেটির মেয়াদ শেষ না হওয়ায় পাসপোর্ট পরিবর্তন করতে পারবে না। যে কারণে পাসপোর্টটা রি-ইস্যু করতে হয়েছে ২০১৮ সালে। তাই তার স্বামীর নাম রাকিব রয়ে গেছে।’

তামিমার আমেরিকার ভিসার মেয়াদ ২০২১ সাল পর্যন্ত রয়েছে বলে জানান তার বাবা। তিনি বলেন, ‘এই মেয়াদের পর নতুন স্বামী নাসির হোসেনের নাম বা বাবার নামে পাসপোর্ট করতে পারে সে (তামিমা)। ২০১৬ সালে রাকিবকে তালাক দিয়েছে তামিমা। তালাকের প্রমাণপত্রও রয়েছে আমাদের কাছে। তারপরও তাকে হেনস্তা করা হচ্ছে। ২০১৯ সালে রাকিব মেয়েকে খাওয়ানোর কথা বলে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।’

সরেজমিনে গিয়ে তামিমার গ্রামের বাড়ি নিয়ে একটু বিভ্রান্তি হয়। পাসপোর্ট অনুযায়ী তামিমা সুলতানার বাবার বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার লোকেরপাড়া, সিংগুড়িয়া। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার বাবার বাড়ি জেলার ঘাটাইল উপজেলার বড় লোকেরপাড়ার তালুকদার বাড়ি এলাকায়। পোস্ট অফিস সিংগুড়িয়া। পাসপোর্টে ঠিকানা কিছুটা ভিন্ন রয়েছে।

তামিমার পাসপোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলার বিশেষ শাখা (ডিএসবি) ডিআইও-১ মো. হারেচ আলী মিয়া বলেন, ‘পাসপোর্টটির ভ্যারিফিকেশন টাঙ্গাইলে করা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’ জানা গেছে, তামিমা সুলতানা ঢাকা থেকে পাসপোর্ট নিয়েছেন। ডেপুটি ডিরেক্টর নাদিরা আক্তার স্বাক্ষরিত পাসপোর্টটি ইস্যু করা হয়।

তামিমার পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ঘাটাইল উপজেলার লোকেরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আকরাম হোসেন খান বলেন, ‘ক্রিকেটার নাসির হোসেনের সঙ্গে তামিমার বিয়ে হয়েছে শুনেছি। আমাদের এলাকার স্বপন ওরফে শহিদুর রহমানের এই মেয়ের এর আগেও বিয়ে হয়েছিল।’

(ঢাকাটাইমস/২৬ফেব্রুয়ারি/ইএস/মোআ)