৪৫০ শূন্যপদ নিয়ে চলছে কার্যক্রম

জনবল শূন্যতায় স্থবির ফেনীর স্বাস্থ্য বিভাগ

এম শরীফ ভূঞা, ফেনী
| আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৭:৫৮ | প্রকাশিত : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৬:০১

কাঙ্ক্ষিত সেবা বঞ্চিত হচ্ছে ফেনীর ১৫ লক্ষাধিক মানুষ। ফেনী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীর এক হাজার ১৬০ পদের বিপরীতে ৪৫০টি পদে জনবল শূণ্য রয়েছে। কর্মকর্তা কর্মচারী শূন্যতায় এ বিভাগের সেবা কার্যক্রমে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে।

গত কয়েক বছর যাবত ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ এই বিভাগের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক পদে জনবল সংকট রয়েছে। জনবল সমস্যার পরও সাধ্যানুযায়ী চিকিৎসাসেবা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি করেন জেলা সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসেন দিগন্ত।

জেলায় মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা এক হাজার ১৬০টি। এর মধ্যে কর্মরত আছেন ৭১০ জন। শূন্যপদ রয়েছে ৪৫০টি। এতগুলো শূন্য পদ থাকায় দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় হিমসিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। কিছু প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক লোক নিয়োগ দিয়ে কোনোভাবে চালিয়ে যাচ্ছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের কার্যক্রম। সরকারি জনবল শূণ্য থাকায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তারা দৈনন্দিন কাজ সারাতে নিজেরাই বেতন দিয়ে লোক রেখেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলায় জনবল কাঠামোয় সবচেয়ে বেশি সংকট রয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারি পদে। এ দুইটি শ্রেণিতে প্রায় অর্ধেক জনবলই নেই। জেলায় অফিস সহকারীর ১৯ পদের সবগুলোই শূণ্য রয়েছে। সাতজন পরিসংখ্যানবিদের পদ থাকলেও কর্মরত নেই কেউ। সাতজন স্টোর কিপারের মধ্যে কর্মরত আছেন তিনজন। ৩৫ ফার্মাসিস্টের ৩০ পদই শূণ্য রয়েছে।

মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ২০৫ স্বাস্থ্যসহকারীর ১০৫ পদই খালি পড়ে আছে দীর্ঘ দিন। খোদ জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরে তিনজন অফিস সহকারীর পদ থাকলেও কর্মরত নেই কেউ। এছাড়াও সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে তিনজন মেডিকেল অফিসার, একজন পাবলিক হেলথ নার্স ও একজন পুষ্টিবিদের পদ দীর্ঘদিন শূণ্য রয়েছে। এতো বিশাল শূন্যপদ নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে নেয়া কিছুটা দুঃস্বাধ্য হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র আরো জানায়, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে প্রথম শ্রেণির ডাক্তার ও চিকিৎসা কর্মকর্তার মোট ১৯২টি পদ রয়েছে। এখানে ৫৬টি পদ খালী রয়েছে। শুধু ১জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে বক্ষব্যাধী হাসপাতাল। নামমাত্র ট্রমা সেন্টারটি সুবিশাল দালানে দাড়িয়ে থাকলেও সেখানে নেই অর্থপেডিক্স কনসালটেন্ট। পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫ পদের ১৪ পদেই প্রথম শ্রেণির জনবল নেই। ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও খালী রয়েছে প্রথম শ্রেনীর ১০টি পদ। এছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি কনসালটেন্ট ও এ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট না থাকায় প্রসূতি সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের দ্বিতীয় শ্রেণির জনবলের মধ্যে বেশিরভাগই রয়েছে। মূলত এ পদে কর্মরত ব্যক্তিরা রোগী ও সেবাগ্রহীতাদের কাছাকাছি থেকে সরাসরি পরিচর্যার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ফেনীর স্বাস্থ্য বিভাগে দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩৪ পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ১৭৫ জন। ৫৯টি পদ শূন্য রয়েছে। মাত্র দুইজন নার্স দিয়ে চলছে ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫ নার্সের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র সাতজন। ছাগলনাইয়ায় দ্বিতীয় শ্রেণির ২৮ পদের ১২ পদই শূণ্য পড়ে আছে।

জেলায় তৃতীয় শ্রেণির জনবলের প্রায় অর্ধেক শূণ্য পড়ে আছে। এখানে ৫১০ জনের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ২৮৬ জন। শূণ্য রয়েছে ২২৪ জন। এ শ্রেণিতে অফিস সহকারী, পরিসংখ্যানবিদ, স্টোর কিপার, ক্যাশিয়ার, উচ্চমান ও প্রধান সহকারীর পদ রয়েছে।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালে তৃতীয় শ্রেণির ৩৯ পদের ২০ পদ খালি রয়েছে। সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে ৯২ পদের ৪৫ পদ খালি। একইভাবে ছাগলইয়ায় ৭৪ পদের ৩৪ পদ, দাগনভূঞায় ৮২ পদের ২৯ পদ, পরশুরামে ৪৬ পদের ৩১ পদ ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৯৬ পদের ৩১ পদে কোনো জনবল কর্মরত নেই। তৃতীয় শ্রেণিতে বক্ষব্যাধী হাসপাতাল ও ট্রমা সেন্টারে নয়টি পদ থাকলেও হাসপাতাল দুটিতে কেউ কর্মরত নেই। মঙ্গলকান্দিতে ২৫ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের চার বছরেও কোনো পদ সৃষ্টি করা হয়নি। বক্ষব্যাধী ক্লিনিকে আট পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র একজন।

এদিকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ২২৪ পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ১১৩ জন। বাকি ১১১ জনের পদ শূণ্য রয়েছে। এ শ্রেণিতে অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, মালি, ওয়ার্ডবয়, আয়া, দারোয়ান ও বাবুর্চির পদ রয়েছে। জেলায় ১৩ জন বাবুচির পদ থাকলেও দীর্ঘদিন সেগুলো শূণ্য পড়ে আছে। এছাড়াও ৭০ অফিস সহায়কের মধ্যে কর্মরত মাত্র আটজন। ২৯ পরিচ্ছন্নকর্মীর ২৬ পদ খালী।

১৩ দারোয়ানের মধ্যে কর্মরত আছেন একজন। ১৭ জন ওয়ার্ড বয়ের মধ্যে ১৩ পদে কেউ নেই। ১৩ আয়া পদে কাজ করছেন তিনজন। বক্ষব্যাধী হাসপাতাল ও ট্রমা সেন্টারে ১৪ পদের সব পদই শূণ্য রয়েছে। এছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চতুর্থ শ্রেণির প্রায় অর্ধেক জনবল নেই। এসব পদে শূণ্যপদ নিয়ে কোনো দপ্তর চলতে পারে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ফেনী জেলা সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসেন দিগন্ত জানান, জেলায় প্রায় ৪০ ভাগ জনবল না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা খাতে নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। জনবল সংকটের বিষয়টি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে জানানো হয়েছে। কিছু ব্যক্তির বদলি ও চাকরির মেয়াদ শেষ করে রিটার্ণমেন্টে গেলেও সে অনুপাতে ফেনী জেলায় জনবল নিয়োগ অথবা পদায়ন করা হয়নি। এতে করে দিন দিন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে জনবল সংকট প্রকট আকার ধারন করছে।

সিভিল সার্জন বলেন, কয়েকটি পদে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক জনবল নিয়ে দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু এতে সংকটের সাময়িক উত্তরণ হলেও স্থায়ী কোনো সমাধান দেখা যাচ্ছে না। তারপরও সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ সেবা দিতে আমরা যাবতীয় প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

(ঢাকাটাইমস/২৭ফেব্রুয়ারি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :