মাদকের ১০ ঘটনার ছয়টিতেই নারীর সংশ্লিষ্টতা

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:৪৩ | আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:৪৮

আল-আমিন রাজু, ঢাকাটাইমস

সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নেওয়া মাদকের কারবারের প্রতি দশটি ঘটনার ছয়টিতেই নারীর সংশ্লিষ্টতা মিলছে। মাদক পাচার ও কেনা-বেচায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিতেই নারীদের ব্যবহার করছে অপরাধ চক্রগুলো। বাইরে চলাফেরায় নারীদের কম সন্দেহ করার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মাদক পরিবহনে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে তাদের।

প্রতিবেশী দেশ থেকে প্রতিনিয়ত দেশে ঢুকছে সর্বনাশা ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ নানা মাদকদ্রব্য। এসব মাদকের সহজলভ্যতায় দিন দিন বেড়েই চলেছে মাদকাসক্তদের সংখ্যা। এর ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মাদকের চাহিদা। চাহিদার যোগান দিতে নানা কৌশলে মাদক ব্যবসায়ীরা সক্রিয়। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয়তা আর কঠোর নজরদারিতে তাদের বেশিরভাগই ধরা পড়ে যান।

তবে এর মধ্যেও নিত্য নতুন কৌশলে দেশের অভ্যন্তরে মাদকের চালান আসছে। অনেক সময় মাদক ব্যবসায়ীদের অভিনব কৌশলের কাছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও অবাক বনে যান। আর বর্তমান সময়ে মাদক পরিবহনের অন্যতম বাহক হিসেবে নারী ও শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে।

দেশের আইন ও সামাজিক অবস্থানের কারণে নারী ও শিশুদের নিরাপদ বাহক হিসেবে ব্যবহার করে মাদক পাচারকারীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর তৎপরতা যেমন বেড়েছে ঠিক তেমনি মাদকের সঙ্গে নারীদের সংশ্লিষ্টতাও বেড়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মাদক পরিবহনে ভয়াবহভাবে নারীদের ব্যবহার বেড়েছে। মাদকচক্রগুলো অনেকগুলো কারণে তাদের ব্যবহার করছে। দেখা গেছে মাদকের ১০টি চালান আটক করা হলে ৬ থেকে ৭টির সঙ্গেই নারীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে।

সম্প্রতি মাদক, চুরি ও ছিনতাইকারীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় বেশ কয়েকজন নারীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগ। এর মধ্যে রুনা ওরফে রোজিনা নামের এক নারী গত পাঁচ বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ব্যাচেলর বাসায় চুরি করে আসছিল।

নিজে চুরি করার পাশাপাশি ওই নারী কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, পশ্চিম রামপুরা, সাত রাস্তা, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, বেগুনবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় একটি কিশোর চক্র তৈরি করেছেন। এদের দিয়ে চুরি করানোর পাশাপাশি তার চুরি করা পণ্যও বিক্রি করাতেন।

গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগের সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সম্প্রতি মাদক পরিবহনসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে নারীদের সংশ্লিষ্টতা বেড়েছে। আগে এত সংখ্যক নারী অপরাধী ছিল না। মাঠে কাজ করতে গিয়ে কয়েকটি কারণ খুঁজে পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজে নারীদের একটি সম্মানজনক অবস্থান আছে। চাইলেই একজন নারীকে সন্দেহবশত জেরা বা তল্লাশি করা যায় না। আবার অনেক সময় দেখা যায় নারীর কোলে ছোট বাচ্চা থাকে। অনেকে পর্দা করেন। এদের প্রতি মানুষের সন্দেহ এমনিই কম থাকে। মাদকচক্র এই সুযোগগুলো কাজে লাগাচ্ছে। তারা নানা কৌশলে মাদক পরিবহনে নারীদের ব্যবহার করে তাদের অপরাধীর তালিকায় নিয়ে আসছে।’

এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে তাদের বিভিন্ন অভিযানে ধরা পড়া বেশিরভাগ নারীরই হয় কোলে বাচ্চা ছিল নয় বোরকা পরিহিত অবস্থায় ছিল। এভাবে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়ানোর চেষ্টা করে।

(ঢাকাটাইমস/২৮ফেব্রুয়ারি/ডিএম)