‘ব্যর্থ’ তকমা পাওয়া রাজকুমার বাঁশ চাষ করেই কোটিপতি

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:৪৪ | আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১২:৫৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গ্রামের সকলেই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু একটা সময় এমন ছিল যখন তাকে নিয়ে সবাই ঠাট্টা করতেন। ‘ব্যর্থ’ তকমা পেয়েছিলেন রাজশেখর পাতিল। তবে সেদিন এখন অতীত। এক সময়ে দেনায় ডুবে থাকা রাজশেখর স্রেফ বাঁশ চাষ করে আজ কোটিপতি।

রাজশেখরের জন্ম ভারতের মহারাষ্ট্রের খরা কবলিত অঞ্চল নিপানি গ্রামে। নিপানির অর্থই হলো পানিহীন। গ্রামে প্রবল পানি সংকট ছিল। তার বাবাও একজন চাষি ছিলেন। খবর আনন্দবাজারের।

পানির সংকট থাকায় চাষাবাদ ছিল ব্যয়বহুল। এক সময়ে ১০ লাখ টাকা দেনা করে ফেলেছিলেন তার বাবা। কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়ায় সেই দেনা শোধ করতে পারেননি তিনি। রাজশেখর তখন পড়াশোনা করছেন। দেনার ভার মাথায় নিয়েই তিনি পড়াশোনা শেষ করেন। তারপর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় যোগ দেন। সেখান থেকে প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা বেতন পেতেন।

পরে তার বেতন বেড়ে হয় ৬ হাজার টাকা। কিন্তু দেনা শোধ করার জন্য এই টাকা যথেষ্ট ছিল না। তিনি ২৭ বছরের হলে পরিবারের হাল ধরার জন্য বাবা-মা তাকে গ্রামে ডেকে পাঠান।

প্রথমে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি অফিসার হওয়ার। কিন্তু সাফল্য আসেনি। এরপর তাদের ১৬ একর জমিতে ফলের চাষ শুরু করেন।

ফল চাষ ছিল লাভজনক। আম, জাম, সফেদার চাষ করতেন তিনি। তা থেকে দৈনিক ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় হতো। তার জীবনের আমূল বদল আসে ২০০২ সালে। তার গ্রামেরই এক চাষি বাঁশের চারা পুঁতেছিলেন। কিন্তু সেই ব্যবসায় খরিদ্দার না পাওয়ায় অনেক ক্ষতি হয়ে যায় তার। তিনি সমস্ত বাঁশ তুলে ফেলে দিচ্ছিলেন।

রাজশেখর তার কাছ থেকে সেই সমস্ত বাঁশ গাছ নিয়ে নিজের জমির চারপাশে পুঁতে দেন। উদ্দেশ্য ছিল জমির বেড়া হিসাবে সেগুলোকে কাজে লাগানো।

২০০৫ সাল থেকে গ্রাহক নিজে থেকেই খোঁজ নিয়ে বাঁশ কেনার জন্য তার কাছে আসতে শুরু করলেন। বছরে ২০ লাখ টাকা উপার্জন করতে শুরু করলেন তিনি। রাজশেখর সারা দেশ ঘুরে বাঁশের বিভিন্ন প্রজাতির চারা নিয়ে এসে জমিতে পুঁততে শুরু করে দেন তারপর থেকেই। কারণ তিনি বুঝে গিয়েছিলেন এই ব্যবসা কতটা লাভদায়ক।

বাঁশ গাছের খুব একটা পরিচর্যাও করতে হয় না। চাষে পানিও খুব কম লাগে। পানি সংকটের গ্রামে তাই বাঁশ চাষই হয়ে ওঠে তার কাছে আদর্শ।

গলা পর্যন্ত দেনায় ডুবে থাকা রাজশেখর আজ কোটিপতি। প্রতি বছরে বাঁশ চাষ থেকেই অন্তত ১ কোটি টাকা আয় করেন তিনি। তার নাম লোকের মুখে মুখে ফেরে। গ্রামবাসী এখন ‘ব্যর্থ’ রাজশেখরের কাছে বাঁশ চাষের পাঠ নিতে আসেন।

তার উপর চাষের জমিতে ফল, সবজির মতো অন্যান্য ফসল তো রয়েছেই। ‘রাজশেখর পাতিল বাম্বু’ নামে তার একটি ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে। তার গ্রাহক সংখ্যা ৮ হাজারেরও বেশি। কীভাবে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ চাষ করে সাফল্য পাওয়া যাবে তা শেখান তিনি।

ঢাকাটাইমস/২৮ফেব্রুয়ারি/একে